×

সম্পাদকীয়

পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু আর কত : একটি স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২২, ০১:৫১ এএম

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকা আসামির মৃত্যু ঘটনা থেমে নেই। সর্বশেষ রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় সুমন শেখ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের দাবি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে পরিবার বলছে, তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এমন ঘটনা মর্মান্তিক, বেদনাদায়ক। এ ধরনের ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অর্জিত সুনামকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বরাবরই। এসব ঘৃণ্য ঘটনায় পুরো বাহিনী জড়িত না হলেও কিছু অসৎ সদস্যের কারণে ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিম্মায় থাকা অবস্থায় মৃত্যু ঠেকাতে আইন প্রণয়ন করা হলেও বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা থেমে নেই। তবে ওই আইনটি অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। নিহত সুমনের স্ত্রী জান্নাত আরা বলছেন, রামপুরা টিভি সেন্টারের পাশে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সুমন। সেখানে চুরির অভিযোগে তাকে মারধর করা হয়। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। রাতে পুলিশ তাকে থানায় আনার সময় মারধর করেছে। এরপর থানা হাজতে নির্যাতনের সময় সুমনের মৃত্যু হয়। তার বাড়ি নবাবগঞ্জ থানার দক্ষিণকান্দি। জান্নাত বলেন, ‘আমার স্বামীরে ওরা থানার ভেতর মেরে ফেলছে। অফিসে ওরে মারছে। রাতে পুলিশ গিয়ে নিয়ে আসছে। পুলিশও মারতে মারতে আনছে। রাতে আমি থানায় দেখতে আসছিলাম, আমারে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বের করে দিছে।’ সুমন শেখের মৃত্যুর ঘটনায় ওই থানার দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির তদন্তের আলোর মুখ দেখবে কিনা আমাদের জানা নেই। হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা রুখতে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে ২০১৩ সালে। এ আইনে গ্রেপ্তার ও হেফাজতে থাকা অবস্থায় কেউ নির্যাতনের শিকার হলে কিংবা নির্যাতনে তার মৃত্যু হলে বিচারের বিধান রয়েছে। বিচারে নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ডসহ আর্থিক দণ্ড এবং নির্যাতনে মৃত্যু প্রমাণিত হলে অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ আর্থিক দণ্ডের বিধান রয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিশ্বজুড়েই নিন্দিত। অপরাধী যেই হোক, যত ছোট বা বড় হোক, বিনাবিচারে তাকে হত্যা করার কোনো এখতিয়ার কারো নেই। পুলিশের আশ্রয় কারো জন্য অনিরাপদ হোক, সেটা কাক্সিক্ষত নয়। এজন্য পুলিশের কোনো সদস্য বা কর্মকর্তার অসহিষ্ণু হওয়া উচিত নয়। উত্তেজিত ও ক্রোধান্বিত হয়ে অমানবিক আচরণ করা সঙ্গত নয়। যে কোনো পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসহিষ্ণু আচরণ কাম্য নয়। সুমন অপরাধী হলে তার বিচার হবে। আইন-আদালত রয়েছে। কিন্তু এভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলা অমানবিক। হেফাজতে মৃত্যুর দায় পুলিশ এড়াতে পারে না। আমরা সুমন শেখের মৃত্যু ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি, অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের উচিত, থানা হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে একটি স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়ন করা, যাতে নিরপরাধ মানুষ হেফাজতে থাকাকালে মৃত্যু না হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App