×

মুক্তচিন্তা

চারদিকে এত অসঙ্গতি, অবসান কি হবে?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২২, ১২:২০ এএম

চারদিকে এত অসঙ্গতি, অবসান কি হবে?

মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয়ও দিন দিন বাড়ছে। সরকারি-বেসরকারি সব জায়গায় এখন কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতিপ্রবণ হয়ে উঠেছে। কালো আঁধারে ঢেকে যাচ্ছে সব। চারদিকে শুধুই অসঙ্গতি। মানুষের জনজীবনও অতিষ্ঠ। শান্তিতে বেঁচে থাকার জন্য ছটফট করছে। লোডশেডিং, ডলার, দ্রব্যমূল্য, অফিস-আদালত, নির্বাচন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, এমপি-মন্ত্রী, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ সব জায়গায় এখন দুর্নীতি ও অসঙ্গতি। প্রায় একযুগ পরে সিডিউল আকারে লোডশেডিংয়ের ঘোষণা এসেছে। গ্রাম কিংবা শহর, প্রত্যন্ত অঞ্চল লোডশেডিংয়ের জন্য অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। যেখানে যে সিডিউল দিয়েছে, সেখানে সেভাবে পালন হচ্ছে না। সব জায়গায় নিয়ম ভেঙে তাদের সুবিধামতো রুটিন দিচ্ছে। শপিংমল, দোকান, হসপিটাল, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় লোডশেডিংয়ের জন্য ভালো করে কিছু করাও যাচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে নিত্য দ্রব্যের লাগামহীন মূল্য। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। শখের জিনিস তো দূরের কথা, প্রয়োজনীয় দ্রব্যই ক্রয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এটার জন্য দায়ী কিছু সিন্ডিকেট। তাদের রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নের কারণে আজ দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী। ডলার নিয়েও দেশে জল্পনা-কল্পনা, তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। প্রবাসীরাও ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। টাকার মান কমে যাওয়ায় তারা এখন টাকা পাঠাচ্ছে না। এতে দেশের বড় একটা বাজেট রেমিট্যান্স কমে গেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিট্যান্সের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পেট্রল পাম্পের জন্য সোনালি ফসল এখন প্রায় বন্ধের পথে। সেচ দেয়ার জন্য উত্তরাঞ্চলে এখন প্রয়োজন পানি। পানির জন্য আমন ধান পুরোপুরি বন্ধের পথে। আর এর পেছনে কারণ হলো লোডশেডিং। লোডশেডিংয়ের জন্য ফসলের জমিতে পানি দিতে পারছে না কৃষক। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এ বছর আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ৫০০ হেক্টর। এদিকে বৃৃষ্টিও নেই আবার বিদ্যুৎও নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দিতে পারছে না। বিদ্যুতের প্রয়োজন ৭০ মেগাওয়াট। কিন্তু তারা পাচ্ছে মাত্র ৩৫ মেগাওয়াট। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, নওগাঁসহ কয়েকটি উপজেলায় পানির জন্য আমন ধানের চাষ ভালো করে করা যাচ্ছে না। রক্ত সম্পর্কহীন একটি শ্রেষ্ঠ সম্পর্ক হলো ছাত্র-শিক্ষক। গ্রামের একটি প্রবাদ আছে, ‘মা-বাবা বানায় ভূত, আর শিক্ষক বানায় ফুত।’ অর্থাৎ মা-বাবা সন্তানকে জন্ম দেয় কিন্তু সেই সন্তানকে সন্তানের মতো করে গড়ে তোলে একজন আদর্শবান শিক্ষক। বর্তমান সমাজে এতই অসঙ্গতি যে, সেই শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতে একজন ছাত্র বিন্দু পরিমাণ চিন্তা করে না। শুধু হাত তোলাতেই সীমাবদ্ধ নয়, শিক্ষককে গলায় জুতার মালা পরানো এবং নিহত হওয়ার ঘটনাও অবলীলায় ঘটে যাচ্ছে। তা শুধু পরিবার ও সমাজের অবনতির কারণে এবং নানান অসঙ্গতির কারণে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হলো বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ এবং স্বাধীন পরিবেশ। সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন হয়ে উঠেছে ধর্ষণ, অবৈধ ব্যবসা, শিক্ষককে হুমকি বা গুম, টেন্ডারবাজির জায়গা। প্রত্যেক সরকারের সময় ক্ষমতাসীন ছাত্ররা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। জওহরলাল নেহরু বলেছেন, ‘দেশ ভালো হবে, যদি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো হয়।’ আজ দেশের পরিস্থিতিতে এতই অসঙ্গতি তার একটা কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই দুর্নীতির আখড়া হয়ে গেছে। মানুষ একটু স্বস্তি চায়, মুক্তি চায়। এসবের অবসান করতে হবে। সবার জায়গা থেকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে সরকারকেই বড় পদক্ষেপ নিতে হবে। সব কাজের জন্য সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাগণকে জবাবদিহি করার জায়গা রাখতে হবে। অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। নতুবা এভাবে চলতে থাকলে এক সময় দেশ নানান সমস্যায় জর্জরিত হবে। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যাবে। আন্দোলন করবে। এতে দেশের সম্পদ নষ্ট হবে। অসঙ্গতিগুলোর অবসান করতে হলে সবাইকেই ভূমিকা রাখতে হবে। সব কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে তবেই অসঙ্গতি কমে আসবে।

শহীদুল ইসলাম শুভ : লেখক ও সাহিত্যিক, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App