×

সারাদেশ

সাড়ে তিন মাস ধরে মধ্যপাড়ায় পাথর উত্তোলন বন্ধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২২, ১২:৪৬ পিএম

সাড়ে তিন মাস ধরে মধ্যপাড়ায় পাথর উত্তোলন বন্ধ
সাড়ে তিন মাস ধরে মধ্যপাড়ায় পাথর উত্তোলন বন্ধ

দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ পাথরখনি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড (এমজিএমসিএল) থেকে পাথর উৎপাদন সাড়ে তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। পাথর উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত অন্যতম প্রধান উপাদান এক্সফ্লোসিভ (বিস্ফোরক) সংকটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন পর্যন্ত এক্সফ্লোসিভ আমদানি করতে না পারায় শিগগির উৎপাদন শুরুর কোনো সম্ভাবনা নেই।

এদিকে খনির উৎপাদন ঠিকাদার জিটিসি’র অধীনে কর্মরত প্রায় আটশ খনি শ্রমিক প্রায় ৪ মাস ধরে কর্মহীন হয়ে পড়ায় এসব শ্রমিক পরিবারে দেখা দিয়েছে অভাব, অনটন। পাথর না থাকায় বিক্রি কার্যক্রমও বন্ধ। হাত পা গুটিয়ে বসে রয়েছেন খনি কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। সরকার প্রতিমাসে রাজস্ব হারাচ্ছে ৫০ কোটি টাকার বেশি। এতে একদিকে, খনি কর্তৃপক্ষের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। অপরদিকে, খনি রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে জিটিসি’র মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি মধ্যপাড়ার পাথরের ওপর নির্ভরশীল দেশের নির্মাণাধীন মেগা প্রকল্পগুলো পাথর সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।

খনি ভূগর্ভে পাথর উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত এক্সফ্লোসিভ (ইমালশন) সংকটে পড়ে গত মে মাস থেকে পাথর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর আগে এমোনিয়াম নাইট্রেট সংকটে পড়ে ১২ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ ছিল।

জানা গেছে, মধ্যপাড়া খনির ভূগর্ভে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর উৎপাদন করা হয়। এজন্য বছরে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার এক্সফ্লোসিভ (এমোনিয়াম নাইট্রেট, ইমালশনসহ বিস্ফোরণ কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য মালামাল) প্রয়োজন হয়। এসব মালামালের পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। লেবাননের বৈরুতে এমোনিয়াম নাইট্রেডের গুদামে বিস্ফোরণ, কোভিড-১৯ এবং সর্বশেষ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে এক্সফ্লোসিভের তীব্র সংকট দেখা যায়। এসব এক্সফ্লোসিভ আমদানি করতে একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করেও কেউ দরপত্র শিডিউল পর্যন্ত ক্রয় করেনি। পরে খনি কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে কয়েকদফা তা আমদানি করে পাথর উৎপাদন সচল রাখে।

সূত্রমতে, সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে প্রতি তিন মাস অন্তর এক্সফ্লোসিভ আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু জিটিসি গত বছরের ডিসেম্বরে আমদানিকৃত এক্সফ্লোসিভের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তোলে। চলতি বছরের শুরুতে এমজিএমসিএল এক্সফ্লোসিভ আমদানির জন্য একটি ক্রেডিট লেটার (এলসি) খোলে কিন্তু পরে তা বাতিল করা হয় জিটিসির আপত্তির কারণে। তাছাড়া মুদ্রাস্ফীতি, জাহাজ সংকট ও আন্তর্জাতিক বাজারে এক্সফ্লোসিভের মূল্যবৃদ্ধি এবং উচ্চ পরিবহন খরচ বিষয়টি আরও জটিল করে তোলে। এসব কারণে এক্সফ্লোসিভ আমদানি প্রক্রিয়া বিলম্ব হয় বলে সুত্র জানায়।

পরে এপ্রিল মাসে এমজিএমসিএল ও জিটিসির মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে জিটিসিকেই এক্সফ্লোসিভ আমদানির দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে এমজিএমসিএল ও জিটিসি একত্রে দ্রুতগতিতে ভারত থেকে এক্সফ্লোসিভ আমদানির চেস্টা করছে। জিটিসি ২২৬ মে.টন এক্সফ্লোসিভ আমদানির জন্য ভারতীয় একটি কোম্পানীকে সম্প্রতি অর্ডার দিয়েছে। সাধারণত উৎপাদনকারী কোম্পানি অর্ডার পাওয়ার পর উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করে। এসব স্পর্শকাতর মালামাল উৎপাদনের পর নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পাদন করে খনিতে নিয়ে আসতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে বলে সূত্র জানায়।

বাংলাদেশ তেল গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান ও এমজিএমসিএলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান গত রোববার জানান, এক্সফ্লোসিভ পাওয়া যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে এক্সফ্লোসিভের সারা বিশ্বেই ক্রাইসিস যাচ্ছে। আমরা চেস্টা করছি। এখনও পাওয়া যায়নি। সব প্রস্তুতি আছে। এক্সফ্লোসিভ পাওয়া মাত্রই উৎপাদন শুরু হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি’র মাধ্যমেই বিদেশ থেকে এক্সফ্লোসিভ আনার চেস্টা চলছে।

মধ্যপাড়ার পাথর উন্নতমানের হওয়ায় দেশীয় বাজারে এর উচ্চ চাহিদা রয়েছে। দেশের অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ নির্মাণাধীন মেগা প্রকল্পগুলো এমজিএমসিএলের শক্ত পাথর ব্যবহার করতে পছন্দ করে। এছাড়া বেসরকারি খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের উন্নয়নমূলক কাজে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার করতে ঝুঁকছে। এমজিএমসিএল তার উৎপাদিত পাথর ৯৭ জন ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করে।

এমজিএমসিএলের ডিলার যুগল চন্দ্র দত্ত বলেন, দেশের অনেক কোম্পানি মধ্যপাড়ার পাথরের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, কিন্তু পাথর না থাকায় ডিলাররা তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। ফলে ক্রেতারা বিকল্প উৎস হিসেবে ভারত থেকে পাথর আমদানির দিকে ঝুঁকছে। আমরা আমাদের ক্রেতা হারাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, পাথর আমদানিতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App