সংকট সমাধানে সুষ্ঠু পরিকল্পনা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২২, ১২:২৫ এএম
বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের দামামা আর দেশে দেশে চরম অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এ থেকে বাদ যায়নি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সোনার বাংলাদেশ। জীবনযুদ্ধে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, টিভি নিউজ, পত্রিকা কোথাও কোনো স্বস্তির খবর মিলে না। যা মিলে তা নিদারুণ কষ্টের, যন্ত্রণার। এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়। দেশের রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং ডলার সংকট তৈরি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রী প্রবাসীদের (রেমিট্যান্স যোদ্ধা) বৈধ উপায়ে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা আনার পরামর্শ দেন। যা খুবই যুক্তিসঙ্গত এবং নিরাপদ বলে মনে করেন দেশের সাধারণ জনগণ। কিন্তু প্রবাসীরা কী চান, তাদের দুঃখ-কষ্টগুলোও জানা দরকার। প্রবাসে দূতাবাসে, পাসপোর্ট, বিমানবন্দর এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় অফিসে তারা যে হয়রানির শিকার হন অবিলম্বে তা থেকে তারা মুক্তি চান। প্রবাসীদের (রেমিট্যান্স যোদ্ধা) এই যে ক্ষোভ, হয়রানি এগুলো আমলে নেয়া দ্রুত সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করা রাষ্ট্র এবং সরকারের জন্য জরুরি বলে মনে করেন দেশের আপামর জনগণ এবং প্রবাসীরা (রেমিট্যান্স যোদ্ধারা)। প্রবাসীদের প্রতি একটু সুনজরেই বাড়তে পারে দেশের রিজার্ভ ফান্ড। এতে শুধু ব্যক্তির উন্নয়নই হবে না রাষ্ট্রেরও অর্থনৈতিক ভিত মজবুত হবে। দেশের উন্নতির সঙ্গে আমাদের খরচের উন্নতি হলেও আমাদের আয়ের উন্নতি হচ্ছে না। আমরা ক্রমেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। এই মুহূর্তে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃৃদ্ধির চেয়েও অধিক প্রয়োজন টাকা পাচার রোধ করা, পাচারকৃত টাকা যে কোনো মূল্যে ফিরিয়ে আনা, কালো টাকা উদ্ধার, ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার, ঘুষ, দুর্নীতি রোধ করা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা প্রজ্ঞাপন কঠোরভাবে মেনে চলা, মুষ্টিমেয় মানুষের উন্নতি নয় সার্বিক উন্নয়ন ও উন্নতিতে কাজ করা ইত্যাদি। মূল্যবৃদ্ধি করে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও বিশেষত নিত্যপণ্যের দাম বৃৃদ্ধি করা এক ধরনের অপরাধও বটে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের শাস্তি হওয়া উচিত; কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা বিরল। ফলে কারসাজি করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এ যেন আমাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার এই নিয়তি থেকে মুক্তি চাই। অসাধু ব্যবসায়ীদের এ ধরনের প্রবণতা প্রতিরোধ করার দায়িত্ব সরকারের। ব্যবসায়ীরা কায়েমি স্বার্থে ইচ্ছেমতো নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে আর সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকবে এটা চলতে পারে না। ৯ মাস ধরে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতির হার ৬ শতাংশের উপরে এবং জুলাই মাসে ৭.৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে, যার ধাক্কা মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এটি ৭ শতাংশের উপরে চলমান মুদ্রাস্ফীতির ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করবে, যা সরাসরি সাধারণ মানুষের পকেটকে প্রভাবিত করবে। এমনি করে চলতে থাকলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা চরম আকার ধারণ করবে। যা কখনোই আমাদের কাম্য নয়। দেশের সাধারণ মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি না পেলে দেশের যে চলমান সংকট চলছে তা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন দেশপ্রেম সমৃদ্ধ একটি মহাপরিকল্পনা। যেখানে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশ ও দেশের জনগণের উন্নয়ন ও উন্নতিকে প্রাধান্য দিতে হবে। দেশ ও জনগণের উন্নয়ন এবং উন্নতির স্বার্থবিরোধী যে কোনো কাজ নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। ঋণের টাকার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রত্যেকটি কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সন্তান তার বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করতে হবে তোমার আয়ের ও সম্পদের উৎস কী? ঠিক তেমনি সন্তানকেও জিজ্ঞেস করতে হবে তোমার আয়ের ও সম্পদের উৎস কী? আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাদের জন্য আমাদের এই অক্লান্ত পরিশ্রম তাদের নিরাপদ এবং সংকটমুক্ত রাখতে আধুনিক বিজ্ঞানমনষ্ক ও যুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার আয়োজন করতে হবে, যার মধ্য দিয়ে আগামী প্রজন্ম দেশের প্রতি, নিজের প্রতি, পরিবারের প্রতি, সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে। চলুন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই এবং তার সঙ্গে আমরাও এগিয়ে যাই।
সুধীর বরণ মাঝি : শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, চাঁদপুর। [email protected]