×

জাতীয়

চুরি হওয়া রিকশার খোঁজে নেমে নিজেই গড়েছেন চোর চক্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২২, ০৩:০০ পিএম

চুরি হওয়া রিকশার খোঁজে নেমে নিজেই গড়েছেন চোর চক্র

গ্রেপ্তারকৃত চোর চক্রের ৪ সদস্য

রাজধানীর সবুজবাগ ও মুগদা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- কামাল হোসেন কমল (৩৬), মো. সাজু (৩৫), মো. ফজলু (৩০) ও মো. শাহিন সরদার (৬০)।

র‍্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা রিকশা চোর চক্রের সদস্য। এ চক্রের হোতা কামাল হোসেন কমল ১৫ বছর আগে পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন। ভাড়ায় চালানো তার রিকশাটি একদিন চুরি হয়ে যায়। এমন অবস্থায় রিকশার মালিককে ধার করে টাকা পরিশোধ করেন কমল। এরপর চুরি যাওয়া রিকশার খোঁজ করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন ওই চোর চক্রের সঙ্গে। গড়ে তোলেন রিকশা চোর চক্র। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা চুরির পর সবুজবাগ ও মুগদা এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজে রেখে রং পরিবর্তন করে বাজারে বিক্রি করতো তারা।

বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ানবাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে রাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বুধবার ভোরে কমরসহ চোরচক্রের ৪ সদস্যকে আটক করে র‍্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন রংয়ের ব্যাটারি চালিত ২৩ টি অটোরিক্সা, ১৮টি অটোরিকশার চার্জার ব্যাটারি, চারটি মোবাইল ফোন, চারটি মাস্টার চাবি এবং নগদ ১৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, কমল এই চক্রের হোতা। দীর্ঘদিন ধরে রিকশা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি করে আসছে তিনি। প্রথমে কমল একাই রিকশা চুরি করত। নতুন রিকশায় উঠে রিকশা চালককে বিষাক্ত কোমল পানীয় খাইয়ে অজ্ঞান করে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যেত। আবার কখনও রিকশা চালক কোমল পানীয় খেতে রাজি না হলে তার নাকের কাছে চেতনানাশক ভিজানো রুমালের ঘ্রাণ দিয়ে অজ্ঞান করে রিকশা চুরি করত।

এরপর সে রিকশা চুরির জন্য একটি চক্র গড়ে তোলে। নানা কৌশলে তার রিকশা চুরি করত। এরপর এসব চুরি যাওয়া রিকশা শাহীন, আকবর, মনির ও বাবলুর গ্যারেজে নিয়ে লুকিয়ে রাখত। তারপর রিকশার মালিককে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করত। মুক্তিপণের টাকা বিকাশের মাধ্যমে আদায় করত। এরপর একটি অজ্ঞাত স্থানে রিকশা রেখে রিকশার মালিককে রিকশা নিয়ে যেতে বলত।

র‍্যাব জানায়, এই কৌশলে রিকশা চুরি করার পর সে তার সহযোগীসহ একাধিকবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেপ্তার হয়। তারপর সে তার চুরির কৌশল পরিবর্তন করে। সে ও তার সহযোগীরা অধিক ভাড়ায় একটি রিকশায় উঠে রিকশা চালককে নির্জন স্থানে নিয়ে তাকে মারধর করে হাত-পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে রেখে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যেত। রিকশা চুরির পর রিকশার রং পরিবর্তন করে খোলা বাজারে রিকশাটি বিক্রয় করে দিত। কখনও রিকশার মোটর পার্টস খুলে আলাদা আলাদাভাবে বিক্রয় করত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে গাড়ি চুরি, চোরাই গাড়ি নিরাপদ হেফাজতে রাখা, চোরাই গাড়ি বিক্রয় ইত্যাদি কাজে সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। ওই চক্রের সবাই রিকশা চালনায় পারদর্শী।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব অবহিত করে, কমল রিকশা চুরির মূল পরিকল্পনাকারী। তার নেতৃত্বে রাস্তায় নজরদারি করে টার্গেট নির্ধারণ করা হত। কমল টার্গেটের সঙ্গে কথা বলে রিক্সার ভাড়া ও গন্তব্য নির্ধারণ করত। তার সহযোগী সাজু চোরাই রিকশা চালিয়ে নিয়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিত। তার অন্যতম সহযোগী ফজলুর সহায়তায় চোরাইকৃত ব্যাটারি চালিত রিকশার রং, সিট কভার পরিবর্তন করে বিভিন্ন লোকজনের কাছে বাজার দামের অর্ধেক দামে বিক্রয় করে দিত। তারা রিকশা চুরির উপযুক্ত স্থান হিসেবে বাসাবো বাস স্ট্যান্ড এলাকা, মান্ডা এলাকাকে বেছে নিত। এভাবে চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা হতে বিগত সাত বছর ধরে পাঁচ শতাধিক ব্যাটারি চালিত রিকশা চুরি ও ছিনতাই করে গরীব ও নিরীহ রিকশা চালক ও মালিকদের সর্বস্বান্ত করে আসছে। এসব রিকশা তারা ৫ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রয় করত।

প্রসঙ্গত, কমলের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় সাতটি চুরি মামলা ও ফজলুর নামে একটি মাদক মামলা রয়েছে। শাহিনের মান্ডা খালপাড় এলাকায় রিক্সা গ্যারেজ রয়েছে। সে ৩০ বছর ধরে ওই রিকশা গ্যারেজ পরিচালনা করে আসছে সে। ওই চোর চক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয় সাত বছর আগে। অধিক মুনাফার আশায় রিকশা চোর চক্রকে তার গ্যারেজ ব্যবহার করে চোরাই রিক্সা বিক্রয় ও নিরাপদ হেফাজতে সহায়তা করে সে। গাড়ি বিক্রির টাকা থেকে ১০ শতাংশ কমিশন নিয়ে থাকে সে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App