×

জাতীয়

চট্টগ্রামে বোমা হামলায় জেএমবির ৫ জঙ্গির ফাঁসির আদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২২, ১১:৪৫ এএম

চট্টগ্রামে বোমা হামলায় জেএমবির ৫ জঙ্গির ফাঁসির আদেশ

আদালত ভবন, চট্টগ্রাম। ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে বোমা হামলায় জেএমবির ৫ জঙ্গির ফাঁসির আদেশ

বুধবার চট্টগ্রাম নৌবাহিনীর মসজিদে হামলায় ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত পাঁচ জঙ্গি। ছবি: সংগৃহীত

সাড়ে ছয় বছর আগে (২০১৫ সালে) চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে মসজিদে বোমা আত্মঘাতী গ্রেনেড হামলা মামলায় জেএমবির পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে আদালত তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেয়ারও আদেশ দিয়েছেন।

বুধবার (১৭ আগস্ট) চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল হালিম রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডিতরা হলেন- নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য এম সাখাওয়াত হোসেন, বলকিপার আবদুল মান্নান, রমজান আলী ও বাবুল রহমান রনি এবং আবদুল গাফফার। এদের মধ্যে আবদুল মান্নান ও আবদুল গাফফার আপন ভাই। আসামিদের মধ্যে সাখাওয়াত ছাড়া বাকিরা রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনোরঞ্জন দাশ সাংবাদিকদের জানান, সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ আইনের ৬ (২) ধারায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। একই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের হওয়া পৃথক অভিযোগের বিচার অন্য আদালতে চলছে।

আদালতে সংরক্ষিত মামলার নথিপত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজের পরে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির ভেতরে সুরক্ষিত এলাকায় দুটি মসজিদে ১০ মিনিটের ব্যবধানে বোমা (গ্রেনেড) বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মসজিদগুলোতে শুক্রবার বেসামরিক লোকজনও নামাজ পড়তেন। বিস্ফোরণে সামরিক-বেসামরিক মিলিয়ে মোট ২৪ জন আহত হন। ঘটনার পরপরই ঈশা খাঁ ঘাঁটির সব গেট বন্ধ করে তল্লাশি চালানো হয়। একটি ব্যারাকের নিচতলার শৌচাগারে পরিত্যক্ত অবস্থায় অবিস্ফোরিত বোমা এবং একটি সুইসাইড ভেস্ট (আত্মঘাতী হামলার জন্য বিস্ফোরকপূর্ণ বন্ধনী) পাওয়া যায়।

বিস্ফোরণের নয় মাস পর ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নেভাল প্রভোস্ট মার্শাল কমান্ডার এম আবু সাঈদ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে নগরীর ইপিজেড থানায় মামলা করেন। নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য এম সাখাওয়াত হোসেন, বলকিপার আবদুল মান্নান ও রমজান আলী এবং বাবুল রহমান রনিকে মামলায় আসামি করা হয়।

তদন্তে আবদুল মান্নানের ভাই গাফফারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকেসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করে হামলার ২২ মাস পর ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর আদালতে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন ইপিজেড থানার পরিদর্শক মুহাম্মদ ওসমান গণি। এর মধ্যে একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এবং আরেকটি বিস্ফোরক আইনে। উভয় অভিযোগপত্রে মোট ২৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জাম’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক রাইসুল ইসলাম খান নোমান ওরফে নাফিস ওরফে ফারদিনের নেতৃত্বে নৌ ঘাঁটির মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়। কিন্তু ফারদিন ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল বগুড়ার শেরপুরে গ্রেনেড বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত হওয়ায় তার নাম আসামির তালিকা থেকে বাদ যায়।

ঈশা খাঁ ঘাঁটির ভেতরে মসজিদে গ্রেনেড দুটি নিক্ষেপ করেছিলেন আবদুল মান্নান। ছোটাছুটি শুরু হলে মান্নান ভিড়ের সঙ্গে মিশে যান। কিন্তু তার হাতে ইলেকট্রিক সুইচ দেখে তাকে আটক করা হয়। তখন আবদুল মান্নান আত্মঘাতী গ্রেনেড বিস্ফোরণের চেষ্টা করেও সফল হননি। এর ১০ মিনিট পর ঈশা খাঁ ঘাঁটির আরেকটি মসজিদে রমজান আলী দুটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। পরে তাকেও ধরে ফেলা হয়।

মামলার অপর আসামি বাবলু রহমানকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ঝিনাইদহ থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। অন্য মামলায় কারাগারে থাকা আবদুল গাফফারকে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন। অপর আসামি নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য এম সাখাওয়াত হোসেন ঘটনার পরপরই পালিয়ে যান।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়- জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেন, দেশের প্রচলিত আইন তারা মানে না। সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য সাখাওয়াত হোসেনের মাধ্যমে কাপ্তাইয়ে শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটিতে মান্নান ও রমজান ক্যান্টিন বয় হিসেবে কাজ নেন। রমজান টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা পাস করলেও অষ্টম শ্রেণি পাস দেখিয়ে এই কাজ নেন।

মান্নান, রমজান ও বাবলু পরিচয় এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা গোপন করে ২০১২-১৩ সালে অস্থায়ী বেসামরিক কর্মচারী (ক্যান্টিন বয়, ব্যাটম্যান, বলকিপার) হিসেবে কাপ্তাই বানৌজা শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটিতে কাজ নেয়। জেএমবি চট্টগ্রামের প্রধান ফারদিনের পরামর্শে তারা এই কাজ করে। শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটিতে বাবলুর কাছে চেয়ারম্যান সনদ চাওয়া হলে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ভয়ে সে ঘাঁটি ত্যাগ করে।

হামলার আগের দিন ফারদিন ব্যাগে করে পাইপবোমা এবং গ্রেনেড মান্নান ও রমজানকে হস্তান্তর করে। তারা ঘাঁটিতে নিয়ে সেগুলো নিজেদের কক্ষে জমা রাখে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। চলতি বছরের ২৩ মার্চ এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মোট ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। ১ আগস্ট যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেন। মাত্র পাঁচ মাসে সাক্ষ্য ও যুক্তিতর্ক শেষে আদালত এ রায় দিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App