×

জাতীয়

১৫ আগস্ট আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২২, ০৭:৫৭ পিএম

১৫ আগস্ট আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বিটিভি থেকে

১৫ আগস্টের বাবা-মা ও স্বজন হারানোর বেদনার কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকে যখন চারিদিকে অনেকে সোচ্চার, মানবাধিকারের প্রশ্ন আসে। মানবাধিকারের কথা বলা হয়। অনেকেই সরকারকে মানবাধিকারের ব্যাপারে প্রশ্ন করেন। যারা এই প্রশ্ন করেন তাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা- আমাদের মানবাধিকার। ১৫ আগস্ট আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি- তাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল? আমাদের তো বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। আমি আমার বাবা-মা হারিয়েছি, অথচ আমি মামলা করতে পারব না, আমি বিচার চাইতে পারব না-কেন? আমি এদেশের নাগরিক না?

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সরাসরি অংশ নিয়ে এ আক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। ১৫ আগস্ট উপলক্ষে এ আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই। আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, ড হাছান মাহমুদ প্রমূখ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আর আমার ছোট বোন রেহানা বিদেশে ছিলাম, তাই বেঁচে গিয়েছিলাম ঘাতকের বুলেটের নির্মম আঘাত থেকে। এ বাঁচা কত যন্ত্রণার বাঁচা। যারা বাঁচে, তারাই জানে। কিন্তু আমাদের মানবাধিকার যে লঙ্ঘন করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে যদি সরকারে আসতে না পারতাম। যদি ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করতে না পারতাম- এই হত্যার বিচার কোনোদিন হতো না।

শেখ হাসিনা বলেন, বারবার বাঁধা এসেছে। এমনকি বক্তৃতায় বিচার চাওয়ার কথা বলতে যেয়েও বাঁধা পেয়েছি যে এই কথা বললে না কী কোনোদিন ক্ষমতায়ই যেতে পারব না- এরকমও আমাকে শুনতে হয়েছে। আমি বাঁধা মানিনাই। আমি এই দাবিতে সোচ্ছার হয়েছি। দেশে-বিদেশে জনমত সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছি। সর্বপ্রথম এই হত্যার প্রতিবাদ করে বক্তৃতা দিয়েছে রেহানা, ৭৯ সালে সুইডেনে। এরপর আমি ৮০ সালে বিদেশে গেছি। একটা কমিশন গঠন করেছি। চেষ্টা করেছি আন্তর্জাতিকভাবে। তখন তো দেশে আসতে পারিনি। আমাকে আসতে দেয়া হবে না। ৮১ সালে আসার পর থেকে জনমত সৃষ্টি করেছি। তখন কত অপপ্রচার চালানো হয়েছে আমার বাবার নামে, মায়ের নামে। মিথ্যা অপপ্রচার। কোথায় সেগুলো? কত রকমের মিথ্যা অপপ্রচার দিয়ে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তি করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও যখন দেখে যে না, বাংলাদেশের মানুষের মন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যায় না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৫ আগস্ট। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি। লাশগুলিতো পড়েই ছিল। কত স্লোগান। বঙ্গবন্ধু তুমি আছো যেখানে, আমরা আছি সেখানে। অনেক স্লোগানই তো ছিল। কেথায় ছিল সেই মানুষগুলি? একটি মানুষ ছিল না সাহস করে এগিয়ে আসার। একটি মানুষ ছিল না প্রতিবাদ করার? কেন করতে পারেনি? এতবড় সংগঠন, এত সংগঠক, এত লোক- কেউ তো একটা কথা বলার সাহসও পায়নি। ১৫ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট ওই লাশ পড়ে ছিল। ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে গেল টুঙ্গিপাড়ায়। কারণ দূর্গম পথ। যেতে ২২ থেকে ২৪ ঘন্টা সময় লাগে। তাই তো আর কেউ যেতে পারবে না। সেখানে নিয়ে মা-বাবার কবরে পাশে তাকে (বঙ্গবন্ধু) মাটি দিয়ে আসে। সেখানকার মৌলভী সাহেব আপত্তি করেছিলেন যে আমি তাকে গোসল দেব, এরপর কাফন-দাফন করব।

তিনি বলেন, আমার বাবা কিছু নিয়ে যাননি। শুধু দিয়ে গেছেন। একটা দেশ দিয়ে গেছেন। একটা জাতি দিয়ে গেছেন। পরিচয় দিয়ে গেছেন। আত্মপরিচয় দিয়ে গেছেন। বিধ্বস্থ বাংলাদেশকে গড়ে তুলে উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করে দিয়েছেন। কিছুই নিয়ে যাননি বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে। গরীব মানুষকে যে রিলিফের কাপড় তিনি দিতে পারতেন, সেই রিলিফে কাপড়ের পাড় ছেড়ে সেটা দিয়েই তাকে কাফন দেয়া হয়েছিল। আমার বাবা-মা, ভাই-স্বজন কেউ কিছু নিয়ে যায়নি। ১৬ আগস্ট সমস্ত লাশ নিয়ে বনানীতে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। মুসলমান হিসেবে এতটুকু দাবি থাকে জানাজা পড়ার, সেটিও তো পড়া হয়নি? কাফনের কাপড় সেটাও দেয়া হয়নি। কিন্তু পঁচাত্তরের ঘাতকরা হত্যার পর বাংলাদেশকে ইসলামি রাষ্ট্র তারা ঘোষণা দিয়েছিল, অথচ ইসলামের কোনো বিধি তারা মানেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটা প্রশ্ন, আমাদের নেতারাও তো এখানে আছেন। জাতির পিতা তো সেদিন অনেককে ফোনও করেছিলেন। কী করেছিলেন তারা? বেঁচে থাকতে সবাই থাকে, মরে গেলে যে কেউ থাকে না- তার জীবন্ত প্রমাণ। এজন্য আমি কিছু আশা করি না। আমার একটই কথা, এই দেশ জাতির পিতা স্বাধীন করেছিলেন, এই দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাঁসি ফোটাবেন বলে। তাই আমার একটাই প্রচেষ্টা সব সহ্য করে নীলকণ্ঠ হয়ে, শুধু অপেক্ষা করেছি করে ক্ষতায় যেতে পারব। আর এই দেশকে জাতির পিতার স্বপ্রে দেগশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব। দুঃখী মানুষের মুখে হাঁসি ফোটাতে পারব- তাহলেই এই হত্যার প্রকৃত প্রতিশোধ নেয়া হবে।

তিনি বলেন, বিচারের বাণী নির্ভতে কাঁদে। আমি ফিরে এসেও তো বিচার করতে পারিনি। আমি ৮১ সালে ফিরে এসেছি। ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছি। এই সময়ে কতবার হাইকোর্টে গিয়েছি। বক্তৃতা দিয়েছি। বিচার আদালতে গিয়েছি। আমাদের তো মামলা করারও অধিকার ছিল না। কারণ ইনডেমনিটি দিয়ে খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরিও দেয়া হয়েছে। খুনিদের রাজনৈতিক দল গঠন করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App