×

মুক্তচিন্তা

ইমরান খানের স্বীকারোক্তি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২২, ১২:২৪ এএম

গত ১৪ আগস্ট রাতে পাকিস্তানের লাহোরে ইমরান খান তার রাজনৈতিক সমাবেশ বা জলসায় বক্তব্যের এক পর্যায়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলেন, মার্চ ১৯৭০ সালে তিনি যখন তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলতে আসেন তখন কিছুই জানতেন না। তখন পাকিস্তান মিডিয়া ব্ল্যাক আউট ছিল। আর্মি ডিটেক্টরের শাসন ছিল। মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। তখন পাকিস্তানিরা জানত না ইস্ট পাকিস্তানে কী হচ্ছে। এরপর তিনি যখন দেশে ফিরে যান তখন তার চাচার ছেলে ব্রিগেডিয়ার শফিক তাকে প্রথম জানান পাক সেনাবাহিনী বাংলাদেশিদের ওপর কী চরম নির্যাতন চালিয়েছিল। এত বড় জুলুম হয়েছিল যে পাকিস্তান দুই ভাগ হয়ে গেল। তিনি আরো বলেন, যখন কোনো বড় জনগোষ্ঠীর সামনে সেনাবাহিনী দাঁড় করানো হয়, নির্যাতন হয় তখন তারা আর ভয় পায় না প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। এতে ক্ষতি হয় রাষ্ট্রের। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পাকিস্তানের কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রকাশ্যে এ ধরনের স্বীকারোক্তি করেননি। পাকিস্তানি নেতারা ১৯৭১ সালের বাঙালি নিধনের জন্য অনুতপ্ত, প্রকাশ্যে সেটা বলতেও পারেন না অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে। পারভেজ মোশাররফ এবং নওয়াজ শরিফও সে রকম অনুতপ্ত ছিলেন, ঢাকায় এসে দুঃখ প্রকাশ করেছেন কিন্তু প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে দুদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সাহস দেখাতে পারেননি। কারণ তাদের সেনাবাহিনীর ভয়। বেনজির ভুট্টো এ বিষয়ে মুখই খোলেননি। কারণ ১৯৭১ সালের জন্য তার বাবা জুলফিকার আলী ভুট্টোর দায় এড়ানো সম্ভব না। বরং সেনাবাহিনী তার বাবার ক্ষমতা লিপ্সাকেও ’৭১-এর পরিণতির জন্য দায়ী করে। তবে পাকিস্তান একাত্তর প্রশ্নে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চেয়েছে অনেক আগেই। ১৯৭৪ সালে ৯ এপ্রিল নতুন দিল্লিতে বাংলাদেশ-পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ‘বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা’ বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। সেখানে লেখা আছে, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করে তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন এবং বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সহায়তা করতে অতীতের ভুলগুলো ক্ষমা করার এবং ভুলে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। একইভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যে হত্যাযজ্ঞ ও লুণ্ঠন হয়েছে তা ভুলে জনগণকে নতুন করে যাত্রা শুরু করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘দেখাতে হবে বাংলাদেশের জনগণ ক্ষমা করতে জানে।’ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং মুজিববর্ষে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে ইমরান খান লিখেছিলেন, আমাদের জনগণের ভাগ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। খান লিখেছেন, তিনি দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধনকে আরো দৃঢ় করতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নতুন করে গড়ে তুলতে চান। তিনি ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের মাধ্যমে চিঠিটি পাঠান। ইমরান খান চিঠিতে লিখেছেন : ‘এই উপলক্ষে আসুন আমাদের জনগণের জন্য, একটি ভালো ভবিষ্যতের জন্য এবং এমনকি আমাদের দুদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য যৌথভাবে কাজ করার জন্য আমাদের সংকল্প পুনর্নবীকরণ করি।’ খান মুক্তিযুদ্ধ বা পাকিস্তানি জান্তার নৃশংসতার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি। তিনি লিখেছেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ৫০তম বার্ষিকীতে আমাদের অভিনন্দন জানাতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।’ তিনি লিখেছেন, ‘প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করার জন্য শতবর্ষের অনুষ্ঠানগুলো আপনার এবং বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যে গভীর স্নেহ ও সম্মানের প্রতিফলন করে’। তিনি বলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে তার ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককে গভীরভাবে মূল্য দেয়, যেটি ‘অংশীয় ইতিহাস, অভিন্ন বিশ্বাস এবং আমাদের অঞ্চলে এবং এর বাইরে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার পাশাপাশি টেকসই সমৃদ্ধির উন্নয়নে অভিন্ন স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে।’ বাংলাদেশের শতবর্ষ এবং সুবর্ণজয়ন্তী ‘আমাদের দুই জনগণের মধ্যে মিলন ও বন্ধুত্বের দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির কথা মনে করিয়ে দেয়, যা পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নেতারা অত্যন্ত লালন করেন। এই স্বপ্নের পূর্ণ বাস্তবায়নে পাকিস্তান আন্তরিক অংশীদার হিসেবে রয়ে গেছে’। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্কের অগ্রগতি ১৯৭১ সালের যুদ্ধের জন্য পাকিস্তানের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার ওপর নির্ভর করে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ, বিশেষ করে সেনাবাহিনী দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত।

অভিজিৎ বড়ুয়া অভি : লেখক ও কবি। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App