×

জাতীয়

মানবাধিকার পরিস্থিতি জাতিসংঘকে জানালেন ১৫ বিশিষ্ট জন 

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২২, ১০:৪৯ পিএম

বাংলাদেশে বিপন্ন গণতন্ত্র, নির্বাচন, অপহরণ, গুম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা, নারীর প্রতি সহিংসতা, আদিবাসীর প্রতি সরকারের ভূমিকা, অপরাধের দায়মুক্তি, বিচার পাওয়ার ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়া, সাংবাদিকদের বিচার পেতে দীর্ঘসূত্রিতা, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কারণে বাকস্বাধীনতার অভাব, এনজিওদের নির্বিঘ্নে কাজ করতে না দেয়া, মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার মত নানা অভিযোগ শুনলেন ঢাকা সফররত ঢাকা সফররত জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয় হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটকে।

সোমবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ব্যাচেলেতের কাছে এ উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের অন্তত ১৫ জন প্রতিনিধি। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য, খুশি কবীর, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শাহীন আনাম, সারা হোসেন, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, আদিলুর রহমান খান, রাজা দেবাশীষ রায় প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, আগামীকাল বুধবার তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।

ব্যাচেলেতের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গতকাল রাতে ভোরের কাগজকে বলেন, মানবাধিকারকর্মী, পরিবেশবিদ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হচ্ছে। এর প্রতিকার আসলে কোথায় পাওয়া যাবে? এসব বিষয় দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারছে-এই বিষয়গুলো তার কাছে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, একজন তার ভাই হারিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। তিনি তার ভাইকে খুঁজে পাচ্ছেন না। আদিবাসীরা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছেন। প্রতিবন্ধীরা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। নারী নির্যাতন নিয়েও কথা হয়েছে।

এসব শুনে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার কী বলেছেন, জানতে চাইলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তিনি বলেছেন, আমি গতদিন সরকারের চারমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আজ আপনাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামীদিন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ নানা জনের সঙ্গে কথা হবে। আমার কথাগুলো সফরের শেষদিনে আমার দেয়া প্রতিবেদনে উঠে আসবে। হাইকমিশনার বলেছেন, এসব সমস্যা পৃথিবীর ৮০টি দেশে চলছে। এই ৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান জানান, এখানে বাংলাদেশের নাম তিনি আলাদা করে বলেননি। তবে তিনি বলেছেন, তার কাছে কোনো প্রদীপ নেই, যা সবকিছুকে আলোকিত করবে। একটা নির্বাচন হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে না। সিস্টেম ঠিক না থাকলে নির্বাচন হলেও মানুষ গণতন্ত্র পাবে না। বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, আমরা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ভালো ও মন্দ দুটি দিকই তুলে ধরেছি। গুম নিয়ে কাজ করা ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম বলেন, আমরা জোরপূর্বক গুমের ঘটনাগুলো তার (ব্যাচেলেত) সামনে তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, এই সরকারের আমলে ছয় শর বেশি মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন।

এরআগে, সোমবার দুপুর ১২টায় ধানমন্ডি-৩২ এ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। সেখানে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন। তিনি পুরো জাদুঘর ঘুরে দেখেন এবং প্রতিমন্ত্রী তাকে ব্রিফ করেন।

ব্যাচেলেট দুই দফায় চিলির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বুধবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড ষ্ট্র্যাটেজিক ষ্টাডিজে তরুণদের সঙ্গে ‘নিউ ফ্রন্টিয়ার্স অব ইউম্যান রাইটস: ক্লাইমেট জাস্টিস ইন পারস্পেটিভ’ বিষয়ক একটি ইন্টারেক্টিভ সেশনে যোগ দেবেন ব্যাচেলেট। গত রবিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনসহ, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ব্যাচেলেট তার সফর শেষে বুধবার একটি বিবৃতি দেবেন বলে তার কার্যালয় জানিয়েছে। ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, যুব প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং শিক্ষাবিদদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কথা রয়েছে। চারদিনের সফরে গত রবিবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান ব্যাচেলেট।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App