×

জাতীয়

আইএমএফ থেকে বাংলাদেশকে কতবার, কী শর্তে ঋণ নিতে হয়েছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২২, ০৫:২৭ পিএম

আইএমএফ থেকে বাংলাদেশকে কতবার, কী শর্তে ঋণ নিতে হয়েছে

প্রতীকী ছবি

আইএমএফ থেকে বাংলাদেশকে কতবার, কী শর্তে ঋণ নিতে হয়েছে

প্রতীকী ছবি

আইএমএফ থেকে বাংলাদেশকে কতবার, কী শর্তে ঋণ নিতে হয়েছে

প্রতীকী ছবি

অর্থনৈতিক সংকটের মুখে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হওয়া বাংলাদেশের জন্য এবারই প্রথম নয়। তবে এ দেশের ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চ ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। যার অঙ্ক সাড়ে চারশো কোটি ডলার।

এ ঋণ নিয়ে এখন আইএমএফ ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই গণমাধ্যমে খবর এসেছে, যে আইএমএফ বাংলাদেশকে শর্ত দিয়েছে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি তুলে নেয়ার জন্য। খবর বিবিসির।

অতীতেও ঋণ দেবার সময় ভর্তুকি তুলে নেয়া ও নানা ধরণের সংস্কারের শর্ত দিয়েছিল বাংলাদেশ।

আইএমএফ থেকে বাংলাদেশের ঋণের ইতিহাস

এর আগে আইএমএফের কাছে বাংলাদেশ ১০ বার ঋণ চেয়েছিল। প্রথমবার ঋণ নিয়েছিল ১৯৭৪ সালে। আইএমএফের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঋণের জন্য সংস্থাটির কাছে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি গেছে ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯০ সালে। এই ১০ বছরে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে পাঁচবার অর্থ ধার করেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে অর্থনৈতিক অবস্থা যেহেতু ভালো ছিলনা সেজন্য বিভিন্ন সময় ঋণ চাইতে হয়েছিল। তাছাড়া ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দেশটিতে সামরিক শাসন থাকায় তেমন কোন অর্থনৈতিক সংস্কারও হয়নি। ফলে যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই আইএমএফ এর দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ।

বড় সংস্কার নব্বইয়ের দশকে

আইএমএফ যখনই বাংলাদেশকে কোনো ঋণ দিয়েছে তখনই কিছু শর্ত বা পরামর্শ দিয়েছে তারা। এসব শর্তের কিছু বাংলাদেশে মেনে নিয়েছে, আবার কিছু মেনে নেয়নি। ১৯৯০ সালে ঋণের ক্ষেত্রে আইএমএফ এর বেশ কয়েকটি শর্ত ছিল। সেসব শর্তের আলোকে বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন কর চালু করা হয়। এছাড়া, বাণিজ্য উদারীকরণ, ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের শর্তও এসেছিল। এসব প্রক্রিয়ার সাথে বিশ্বব্যাংকও জড়িত ছিল।

তখন আইএমএফের সাঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের হয়ে বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন ড. আহসান মনসুর। তিনি নিজেও এক সময় আইএমএফে কাজ করেছেন। মনসুর বলেন, ভ্যাট চালু করার পর প্রথম সাত থেকে আট বছর বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।

এছাড়া, বাণিজ্য উদারীকরণের মাধ্যমে আমদানি শুল্ক ব্যাপকভাবে কমানো হয়।

[caption id="attachment_362170" align="aligncenter" width="700"] প্রতীকী ছবি[/caption]

১৯৯০ এর দশকে বাংলাদেশে বড় ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, এর ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের আমদানি পরিস্থিতির উন্নতি হয় ও রপ্তানি বাণিজ্যেও সেটির ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। অর্থাৎ আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি করার সক্ষমতা সম্ভব হয়েছে।

বাণিজ্য উদারীকরণে ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালুর পর বাংলাদেশে ব্যাপক বিদেশি বিনিয়োগও এসেছিল। এছাড়া, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তিও ব্যাপকভাবে যাওয়া শুরু হয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার তেমন ঘাটতি ছিল না ।

[caption id="attachment_362168" align="aligncenter" width="700"] প্রতীকী ছবি[/caption]

১৯৯১ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে কোনো ঋণ নেয়নি। এরপর বাংলাদেশ আবার আইএমএফ'র কাছে থেকে ঋণ নেয় ২০০৩ সালে। সেইবার বড় শর্ত ছিল, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান কমিয়ে আনতে হবে। তখন আইএমএফ এর শর্ত মেনে আদমজী পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার।

এ নিয়ে তখন তীব্র বিতর্ক হলেও অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সেই সময় আদমজী জুট মিল বন্ধের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক ছিল। ‍তিনি বলেন, আদমজী জুট মিলের জায়গায় এখন আদমজী ইপিজেড হয়েছে। সেখান থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছেন এবং সে পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে সেটি আমাদের অনুমান আদমজী জুট মিল থেকে পাওয়া যেত না। সর্বশেষ ঋণ নিয়েছিল ২০১২ সালে যার পরিমাণ ছিল প্রায় এক বিলিয়ন ডলার।

২০১২ সালে ট্যাক্স পলিসির ক্ষেত্রে কিছু সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল। সে সময় নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়ন করা হয়। এছাড়া মুদ্রার বিনিময় হার এবং সুদের হার নির্দিষ্ট করে তা কৃত্রিমভাবে ধরে না রেখে বাজারের ওপর ছেড়ে দেবার পরামর্শ দিয়েছিল আইএমএফ।

[caption id="attachment_362169" align="aligncenter" width="700"] প্রতীকী ছবি[/caption]

কেন আইএমএফের দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ

সাধারণত যখন কোনো দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে বড় রকমের ঘাটতি তৈরি হয় তখন তারা আইএমএফের দ্বারস্থ হয়। অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যখন কোন দেশ ঘাটতিতে পড়ে। যখন বৈদেশিক মুদ্রা, বিশেষত ডলারের ঘাটতি তৈরি হয় তখন ঋণ দিয়ে থাকে আইএমএফ।

একটা দেশের যখন আর কোন উপায় থেকে না তখন তারা আইএমএফের দ্বারস্থ হয়। বিষয়টিকে দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে বর্ণনা করেছেন মনসুর। তিনি মনে করেন, আরও আগে থেকেই আইএমএফ এর সাহায্য নেয়া উচিত। সর্বোত্তম হচ্ছে তাদের কাছে না যাওয়া। আর সংস্কার যদি করতেই হয়, তা নিজেই করে ফেলা।

তবে আইএমএফের শর্ত সবসময় খারাপ- এমন কথা মানতে রাজি নন অনেক অর্থনীতিবিদ।

আইএমএফ চায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভালো হোক। যাতে ঋণ গ্রহণকারী দেশের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা থাকে। মনসুর বলেন, ভর্তুকির বিষয়টি যদি এমন একটি পর্যায়ে চলে যায় যখন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, তখন আইএমএফ কেন টাকা দেবে? তারা তো ঋণের অর্থ ফেরত চায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App