×

সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনাখুনি বাড়ছে : প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকায় নামতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২২, ০৫:৫৭ এএম

এবার কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে ২ রোহিঙ্গা মাঝি (নেতা) খুন হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে উখিয়ার জামতলী ১৫নং ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে। গত বছর অক্টোবরে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় ৬ সাধারণ রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন। এর আগে রোহিঙ্গাদের শীর্ষনেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই। আমরা শুরু থেকেই এ বিষয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে আসছি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে। খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, পতিতাবৃত্তিসহ সব ভয়ংকর অপরাধে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা। উত্তরণের একমাত্র পথ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে হবে। উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রিত। পার্শ্বস্থ বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এই দুটি শিবিরে জনসংখ্যা যেমন বেশি, অপরাধ কর্মকাণ্ডের সংখ্যাও বেশি। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের মধ্যে চাঁদা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায় সময় গোলাগুলি, মারামারি, খুনখারাবি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ খুন হওয়ার পর ক্যাম্পে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প অপরাধ জগতে পরিণত হয়েছে। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের খবর। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। বিশেষ করে মাদক, অস্ত্র ও স্বর্ণ ব্যবসা নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। প্রতি রাতে ক্যাম্পগুলোতে শোনা যায় গুলির শব্দ। জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক একাধিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর হাতে হাতে পৌঁছে গেছে অস্ত্র। অস্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে তারা ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে ডাকাতি, অপহরণ, খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত করছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অস্ত্র সরবরাহ করতে এ দেশের অস্ত্র কারবারিদের সম্পৃক্ততায় পাহাড়ের গহিন অরণ্যে স্থাপন করা হয়েছে অস্ত্র তৈরির কারখানা। জাতিগত নির্মূল অভিযানের ফলে ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে মিয়ানমারের ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগেও এখানে অবস্থান করছিল ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আর্থ-সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে। অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ গিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে এবং এর দায়ভার বর্তাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর। এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা কঠিন কাজ বটে। শুধু ক্যাম্পের অভ্যন্তরে নয়, ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গেও বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে লেগে যায়। স্থানীয় অনেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর হাতে অপহরণ ও হত্যার শিকার হয়েছে। নানাভাবে তারা অপরাধপ্রবণতায় জড়িত। এরা আক্রোশী মনোভাবের। সব বিবেচনা করেই প্রশাসনকে অত্যন্ত কঠোর হতে হবে। অন্যথায় আরো অপরাধ বাড়তে পারে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ক্যাম্পগুলোর কঠোর নিরাপত্তা বিধান করা জরুরি। সব ধরনের সন্ত্রাসী অপতৎপরতা বন্ধে প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকায় নামতে হবে। রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কাজে যারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App