×

মুক্তচিন্তা

ছাদে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২২, ০৫:৫৭ এএম

ছাদে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন
চলতি দশকে বিশ্ব জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। ইতোমধ্যে যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘন ঘন সংঘটিত হচ্ছে দাবদাহ, অনাবৃষ্টি, দাবানল, ভূমিধস, টর্নেডো, আকস্মিক বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, গ্রিস পর্তুগালসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভয়াবহ দাবানল সৃষ্টি হতে দেখা যায়। ভারত, পাকিস্তান, চীন, জাপান ও বাংলাদেশে সংঘটিত হয় ভয়াবহ বন্যা। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অসময়ে বন্যা, অনাবৃষ্টি দেখা দিচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে যেখানে ভারি বর্ষণ হওয়ার কথা সেখানে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বললেই চলে। বর্ষাকালে প্রায় বৃষ্টিহীন অবস্থা বিরাজ করছে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে কৃষিক্ষেত্রে। বৃষ্টির অন্যতম প্রধান নিয়ামক হলো গাছ। গাছ প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় দেহস্থ পানি বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেয়। সেই পানি ঘনীভূত হয়ে বাষ্পাকারে বায়ুমণ্ডলে জমা হয়। পরবর্তীতে বৃষ্টি আকারে বর্ষিত হয়। পর্যাপ্ত গাছপালা না থাকলে প্রস্বেদনের পরিমাণ কমে যায়, ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমে যায়। তাই পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের জন্য বেশি গাছ লাগানো প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে বায়ুদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গাছ যেহেতু কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে তাই এর পরিমাণ কমানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে। অধিকন্তু প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান অক্সিজেনের একমাত্র উৎস হলো উদ্ভিদ। অক্সিজেন সরবরাহ, কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ, দূষণ রোধ, প্রস্বেদন, নদী ভাঙন রোধ, ভূমি ক্ষয় রোধ ছাড়াও গাছের বহুমাত্রিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বৃক্ষ পরিচর্যার ফলে মানুষের শারীরিক অবসাদ ও ক্লান্তি দূর হয় এবং মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি পায়। বৃক্ষ মানুষের শরীর ও মনকে সতেজ করে তোলে। গাছের সবুজ পাতা চোখের দৃষ্টিকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও গাছ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। আমাদের খাদ্যেও ওষুধের একটা বড় অংশ আসে বৃক্ষ থেকে। সুতরাং পরিবেশ রক্ষা ও মানুষের জীবন রক্ষা করতে বেশি বেশি গাছ লাগানো প্রয়োজন। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে যথেষ্ট পরিমাণ গাছ থাকলেও শহরগুলো প্রায়ই গাছশূন্য। আবার শহরে বায়ুদূষণের পরিমাণও বেশি। কিন্তু শহরে পাকা রাস্তা ও বহুতল ভবন থাকায় ইচ্ছে থাকলেও গাছ লাগানো যায় না। শহরের বেশিরভাগ জায়গাজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের আবাসিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ভবন। এসব ভবনের ছাদে গাছ লাগানো যেতে পারে। তবে ছাদে গাছ লাগানোর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা, স্বউদ্যোগ এবং সদিচ্ছার। বাড়ির মালিক ও প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ সচেতন ও উদ্যোগী হলে সহজেই এ কাজটি বাস্তবায়ন করা যায়। মানব পরিবেশকে সুস্থ ও বসবাস উপযোগী করে তুলতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব হ্রাস করতে গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। বর্ষা মৌসুমে বৃক্ষরোপণ অভিযানের অংশ হিসেবে ছাদে গাছ লাগানো কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। তাছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ভবনগুলোর ছাদে গাছ লাগানো বাধ্যতামূলক করা যায়। ছাদে গাছ লাগানো মাটিতে গাছ লাগানোর চাইতে কষ্টসাধ্য হলেও এটি সার্বিকভাবে আমাদের দেশের পরিবেশ ও আবহাওয়াকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও শহুরে জীবনের ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে সাহায্য করবে। তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থে ছাদে গাছ লাগাতে স্ব-উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। জহুরা শিকদার শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App