×

মুক্তচিন্তা

অসাম্প্রদায়িকতা কোন পথে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২২, ০৫:৫৭ এএম

অসাম্প্রদায়িকতা কোন পথে
বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িকতার দেশ। এ কথাটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত, কারণ এটি যে আমাদের সংস্কৃতির এক অপরিহার্য চেতনা। অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা সমাজের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। অসাম্প্রদায়িকতা বলতে আমরা মূলত বুঝি জাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রতি এক মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা সমাজকে সঠিকভাবে চালনা করতে এক চূড়ান্ত নির্দেশনা দেয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং অসাম্প্রদায়িকতা যে কোনো দেশ বা জাতির জন্য এক কাম্য চেতনা। সাংস্কৃতিক হোক কিংবা সামাজিক অথবা রাষ্ট্রীয়, সব ক্ষেত্রেই এই অসাম্প্রদায়িকতা অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে একটি বিষয় খুব ভালোভাবেই আঁকড়ে বসেছে, আর তা হলো সাম্প্রদায়িকতা। অসাম্প্রদায়িকতার ঠিক অপর পাশ এটি। অসাম্প্রদায়িকতা যেমন একটি সমাজের জন্য কল্যাণকর, সাম্প্রদায়িকতা ঠিক তেমনই অকল্যাণকর। সাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ ব্যক্তি এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্ত হয়ে অন্য এক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও তার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধাচরণ ও ক্ষতিসাধনে ব্যস্ত থাকে। সাম্প্রদায়িকতা একটি মানসিক ও সামাজিক ব্যাধি। এটা থেকে মুক্ত হয়ে আমাদের প্রয়োজন অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা করা। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িকতা কেবল প্রশ্নবিদ্ধ। কাছাকাছি সময়ে অসাম্প্রদায়িকতার অন্তরায় বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সংঘটিত হয়। ১৩-১৮ অক্টোবর পর্যন্ত সর্বশেষ এ ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়। ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ‘উসকানি দিয়ে’ মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় দেশে অন্তত ৭১টি মামলা হয়েছে। নড়াইলে কিছুদিন আগেই ইসলামের নবীকে নিয়ে মন্তব্যের জন্য সমালোচিত ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার সমর্থনে ফেসবুকে এক কলেজ ছাত্রের পোস্টকে কেন্দ্র করে কলেজটির অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম এলাকার বুড়িমারীর সাধারণ শিক্ষক শহীদুন্নবী জুয়েলকে ফেলে ধর্মের নামে পিটিয়ে মেরে ফেলে অন্ধ উন্মত্ত কিছু অমানুষ। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের বরিশাল, বাগেরহাট, পাবনা ও নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই শুরু হয় হিন্দু, খ্রিস্টান বা বৌদ্ধদের ওপর প্রায়ই হামলার ঘটনা। কয়েক বছর আগে রামু, নাসিরনগর, নরসিংদী, ল²ীপুর বা ওয়ারী, খিলগাঁওয়ের ঘটনাগুলো সাম্প্রদায়িকতারই ভয়াবহ রূপ। অসাম্প্রদায়িকতা কিংবা সাম্প্রদায়িকতা শব্দগুলো উচ্চারণের সঙ্গে আরেকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। আর সেটি হলো ধর্মীয়। ধর্ম সবসময়ই ইতিবাচক বিষয়ের প্রতি মনোযোগী। ধর্মের সঙ্গে অসাম্প্রদায়িকতার যোগসূত্র রয়েছে কিন্তু এটি থেকে সাম্প্রদায়িকতা পুরোপুরি আলাদা। কিন্তু কিছু বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গির লোক ধর্মের নামে লালন করছে এই সাম্প্রদায়িকতাকে। কিন্তু ধর্ম সবসময়ই অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দেয়। সাম্প্রদায়িকতামুক্ত একটি সমাজ সবার কাম্য। সাম্প্রদায়িকতা কখনই কোনো সম্প্রীতি কিংবা ভালো কিছুর কারণ হতে পারে না। সাম্প্রদায়িকতার বিনাশ ও অসাম্প্রদায়িকতার লালন ও চর্চার জন্য প্রয়োজন প্রতিনিয়ত সঠিক মূল্যবোধের জ্ঞান অর্জন ও তার চর্চা করা। আর এই মূল্যবোধ অর্জনের জন্য পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে সঠিক দিকনির্দেশনা ও সুযোগ কাম্য। অসাম্প্রদায়িকতা সবসময়ই সুন্দর এক সমাজ ব্যবস্থার ফলাফল। তাই সবার উচিত সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থ অভ্যাস গঠন ও চর্চার। বিভিন্ন জাত-ধর্ম-বর্ণ এর শৃঙ্খল থেকে বের হয়ে নিজেদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কাজে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। কারণ আমরা যে ধর্ম কিংবা বর্ণেরই হই না কেন, আমাদের আসল পরিচয় আমরা মানুষ। তাই আমাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মনুষ্যত্ববোধ। আর এই মনুষ্যত্বের চর্চার মধ্যেই নিহিত অসাম্প্রদায়িকতার ভিত্তি। সাফা আক্তার নোলক শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App