×

শিক্ষা

ঢামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসককে পেটালো ঢাবি শিক্ষার্থীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২২, ০৩:৪৬ পিএম

ঢামেকের ইন্টার্ন  চিকিৎসককে পেটালো ঢাবি শিক্ষার্থীরা

ভুক্তভোগী ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. সাজ্জাদ। ছব: ভোরের কাগজ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছয়-সাতজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।

সোমবার (৮ আগস্ট) রাত নয়টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ভুক্তভোগী ওই চিকিৎসকের।

ভুক্তভোগী ওই চিকিৎসকের নাম এ কে এম সাজ্জাদ হোসেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আজ মঙ্গলবার শাহবাগ থানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিস ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালকের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানান তিনি।

এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ (ইচিপ)। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভি ফুজেটের মাধ্যমে দোষীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় ইচিপ।

ভুক্তভোগী সাজ্জাদ শহীদ মিনারে বসে ছিলেন এমন সময় ছয় থেকে সাতজনের একটি দল তার কাছে আসে যাদের ঢাবির লোগো সম্বলিত টি-শার্ট গায়ে ছিল। তারা আইডি কার্ড দেখতে চায়। কিন্তু তিনি আইডি মেডিকেলে রেখে আসার কথা জানালে তাকে ব্যাপক মারধর শুরু করে। কানে থাপ্পড় দেয়ায় কানের পর্দার আশেপাশে রক্তক্ষরণ হয়। ডান কানে কম শুনতে পাচ্ছেন ভুক্তভোগী সাজ্জাদ। নাকে আঘাত লাগার কারণেও প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।

ভুক্তভোগী সাজ্জাদ বলেন, কলেজ লাইব্রেরিতে পড়াশোনা শেষে রাত নয়টার দিকে আমি শহীদ মিনারের দিকে যাই। সেখানে আমি একা একা বসে বাদাম খাচ্ছিলাম। তখন আমি দেখি যে, দুই-তিন জন করে একেকটা দলে ভাগ হয়ে বেশ কিছু ছেলে শহীদ মিনারে আগতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে, অনেককে সেখান থেকে উঠিয়ে দিচ্ছে। তারা কেন এটা করছিলো আমার জানা নেই। এক পর্যায়ে তিনজন এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে, আমি সেখানে কী করছি। আমি বললাম, আমি বসে আছি।

নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে সাজ্জাদ বলেন, তখন তারা আমার পরিচয় জানতে চায়। আমি আমার পরিচয় দিলে তারা আমার পরিচয়পত্র দেখতে চায়। আমার কাছে পরিচয়পত্র নেই জানালে তারা আমাকে বলে, পরিচয়পত্র নেই কেন? আমাদের কাছে তো পরিচয়পত্র আছে। তখন আমি বললাম, সবাই কী সবসময় পরিচয়পত্র নিয়ে ঘোরে? এই কথা বলার পর সঙ্গে সঙ্গে আমাকে একজন থাপ্পড় মেরে বসে। এরপর আরো দুই তিন জন এসে আমাকে চড়-থাপ্পর মারা শুরু করে।

তিনি বলেন, মারধরের একপর্যায়ে আমি চিৎকার করে বলে উঠি, আপনারা চাইলে আমার সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে আমার পরিচয়পত্র দেখে আসতে পারেন। এ কথা বলার পর তারা হয়তো বুঝতে পারে যে, আমি ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র। তখন আমি কাউকে ফোন দিয়ে এনে হয়তো ঝামেলা করতে পারি, এই ভয়ে তারা আমাকে দ্রুত ওই স্থান থেকে বিদায় করার জন্যে তৎপর হয়ে ওঠে।

আমি চলে যাওয়ার সময় যে পারছিল, সেই আমাকে মারধর করছিল ও চলে যেতে জোর করছিল। ঠিক এই সময় কেউ একজন আমার কানের ওপর জোরে থাপ্পড় দিলে আমি বসে পড়ি। বসে কেন পড়লাম, এ অপরাধে একজন জুতা পায়ে আমার মুখে লাথি মারে। এ কারণে আমার নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়। এরপর আমি চলে যেতে উদ্যত হলে যাওয়ার পথে যে যেভাবে পেরেছে আমাকে মারধর করেছে রিকশায় ওঠার আগ পর্যন্ত। আমাকে আট থেকে ১০ জনের মতো মারধর করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিনতাই ছিল নাকি অন্যকিছু ছিল জানি না।

মারধরকারীদের কেউ কেউ নেশাগ্রস্ত ছিলো বলে জানান সাজ্জাদ। তিনি বলেন, আমাকে মারার সময় অনেক শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারছিলো না। আমাকে একজন মারার পর পড়ে যেতে দেখেছি। তাদের লক্ষণ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে তারা নেশাগ্রস্ত। তাদের আচার-আচরণ স্বাভাবিক ছিল না।

মারধরকারীদের কাউকে চিনতে পেরেছেন কিনা জানতে চাইলে সাজ্জাদ বলেন, তাদের প্রায় সবার গায়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোওয়ালা টি-শার্ট ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল যে, তাদের পরিচয় জানা বা বোঝার উপায় ছিল না। তবে সবাই একটু হালকা পাতলা গড়নের ছিল।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, এ ঘটনায় অফিসিয়ালি কোনো অভিযোগ এখনও আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ এলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের যদি কেউ হয়ে থাকে তাহলে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App