×

মুক্তচিন্তা

দুর্ঘটনা কমাতে করণীয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২২, ০২:০৩ এএম

ধমোটরসাইকেল দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যাও। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা বলছে, প্রতি বছর দেশে প্রতি ১০ হাজার মোটরসাইকেলের বিপরীতে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন ২৮ জনের মতো, যা গবেষণায় আসা ১৬টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। উক্ত ১৬টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন ভিয়েতনামের মানুষ। সেখানে প্রতি ১ হাজার মানুষের বিপরীতে মোটরসাইকেল আছে ৩৫৮টি, যেখানে বাংলাদেশে আছে মাত্র ৭টি। অথচ দুর্ঘটনার দিক দিয়ে সর্বোচ্চ বাংলাদেশ। বছরের দুই ঈদে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায় আরো বহুগুণে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাও। যেটির ব্যত্যয় ঘটেনি এবারের ঈদুল আজহাতেও। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য এবারের ঈদে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেল ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী কামনো যায়নি দুর্ঘটনা। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, এবারের ঈদুল আজহার আগে ও পরে ১৫ দিনে সড়ক-মহাসড়কে ৩১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৯৮ ও ৭৭৪ জন। হতাহতের সংখ্যা ছিল গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর গত বছরের তুলনায় এবার ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ২৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং নিহতের সংখ্যা বেড়েছে ৩১ দশমিক ৪১ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও মৃত্যু হয়েছে মোটরসাইকেলে। সংগঠনটির তথ্য বলছে, এবারের ঈদে ১১৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৩১ জন এবং আহত হয়েছে ৬৮ জন। আর রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ঈদের আগে ও পরে ১২ দিনে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ২৭২টি। এ সময়ের মধ্যে ১৫৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১২৩। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত চালক ও আরোহীদের অধিকাংশই ছিল তরুণ বয়সের। যাদের বয়স ১৪-২০ এর মধ্যে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে এর সহজলভ্যতা, মানসম্মত গণপরিবহন ব্যবস্থার অভাব ও সরকারের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ না থাকাকে অন্যতম কারণ বলে মনে করেন সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। আবার মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও গ্রামীণ সড়কে মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে নিয়ম না মানা, চালক ও আরোহীদের হেলমেট পরতে অনীহা, মোটরসাইকেলে দুজনের অধিক ওঠা, চালকদের বিরতিহীনভাবে একটানা চালানো, ফাঁকা সড়কে বেপরোয়া গতি ইত্যাদিও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এছাড়া জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন ও সড়ক বাতি না থাকা, মহাসড়কের নির্মাণ ত্রæটি, উল্টো পথে যানবাহন চালানো, ইজিবাইক ও অটোরিকশার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধিও সড়ক দুর্ঘটনায় ভূমিকা রেখেছে বলে উল্লিখিত সংগঠন দুটির তথ্যে উঠে এসেছে। মোটরসাইকেলের সংখ্যা ও অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা বৃদ্ধি আমাদের জনজীবনের জন্য অভিশাপস্বরূপ। এর লাগাম টেনে ধরা জরুরি। এজন্য মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয়, নিবন্ধন ও চালকের লাইসেন্স প্রাপ্তিতে প্রচলিত নীতিমালার আধুনিকায়ন প্রয়োজন। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে আরোপ করতে হবে আরো কঠোরতা। প্রয়োজনে লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বয়সের সীমা বাড়ানোসহ একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তারোপ করার বিষয়টি ভেবে দেখা যায়। স্কুল-কলেজ পড়–য়া উঠতি বয়সের ছেলেরা যাতে মোটরসাইকেল চালাতে না পারে সেজন্য অভিভাবকদের যেমন সচেতন থাকা জরুরি, তেমনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও এদের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। সঠিকভাবে হেলমেট পরলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুঝুঁকি ৪০ শতাংশ কমে। আর গুরুতর আঘাতের ঝুঁকি কমে ৭০ শতাংশ। তাই রাজধানীর মতো গ্রামাঞ্চলে ও ছোট শহরগুলোতে হেলমেট পরিধানের ক্ষেত্রে কড়া তদারকি করতে হবে। উচ্ছৃঙ্খল ও বেপরোয়া গতির চালকদের লাইসেন্স বাতিলসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নতকরণ, সড়কে লেন ব্যবস্থা চালুকরণ, ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, বেহাল সড়ক-মহাসড়ক সংস্কার ইত্যাদিতে সরকারের বিশেষ নজর দিতে হবে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যখন গণপরিবহনকেন্দ্রিক উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে, আমরা তখন এগোচ্ছি মোটরসাইকেলকেন্দ্রিক উন্নয়নে। এটা আমাদের ব্যর্থতা। তাই দুর্ঘটনা কমানো, যানজট নিরসন, শব্দ দূষণের মতো মারাত্মক সমস্যা দূর করার জন্য মোটরসাইকেলের উল্লম্ফন কমাতেই হবে। মৃত্যু কার কোথায়, কীভাবে হবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না ঠিকই, কিন্তু কোনো মৃত্যুই যাতে সড়কের অরাজকতা ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় না হয়- সেটা নিশ্চিত করতে হবে। মনিরুল হক রনি প্রভাষক, সাভার সরকারি কলেজ, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App