×

জাতীয়

আদিবাসীদের সমধিকার নিশ্চিত ও বৈষম্য দূর করার দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২২, ০৬:০২ পিএম

আদিবাসীদের সমধিকার নিশ্চিত ও বৈষম্য দূর করার দাবি

ছবি: ভোরের কাগজ

আদিবাসীদের জাতিসত্ত্বা, অধিকার রক্ষা, বৈষম্য দুর করে তাদের নিজস্ব জাতিসত্ত্বা ও ঐতিহ্য রক্ষার দাবি জানিয়েছে আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককার্স ও ন্যাশনাল কোয়ালিশন ফর ইনডিজেনাস পিপলস।

রবিবার (৭ আগস্ট) রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০২২’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ দাবি জানান তারা।

আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককার্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্ঠা সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন এমপি ফজলুল হক, জাপার এমপি এডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, ন্যাশনাল কোয়ালিশন ফর ইনডিজিনাস পিপলস (এনসিআইপি)র মহাসচিব অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ব্রাকের পরিচালক মিজ.আন্না মিনজ, মানুষের জন্য ফাউ-েশনের নির্বাহী পরিচালক মিজ. শাহীন আনাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন বলেন, পার্বত্র চট্টগ্রামে অনেক উন্নতি হয়েছে, কিন্তু আদিবাসী জীবনে শান্তির কোন যোগ নাই। তার প্রমান হচ্ছে তারা নিজে, সেখানে একটি স্বশস্ত্র গ্রুপ না, দশটি স্বশস্ত্র গ্রুপ একে অপরকে খুন করছে। তার মানে কি ? বুঝতে অসুবিধা হয়না একটা সামরিক সমাধানের দিকে ঝুকছে। তিনি বলেন, আদিবাসীদের জীবনে শান্তি সামরিক সমাধানে সম্ভব নয়, চাই রাজনৈতিক সমাধানের বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আদিবাসীদের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য রাষ্ট্রকে আরো উদ্যোগী ও আন্তরিক হবার আহ্বান জানান।

মেনন বলেন, ২০০৮ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো সেখানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল বিজয়ী হন। সেই নির্বাচনী ইস্তেহারেও আদিবাসী কথাটি যুক্ত ছিল। কিন্তু ২০১১ সালে যখন পঞ্চদশ সংশোধনীটি আসলো তখন হঠাৎ করে এই আদিবাসী শব্দটি নিয়ে বিতর্ক উত্থাপিত হলো। এই বিতর্কটি মূলত পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে আসে। এ বিতর্ক কিন্তু হঠাৎ আসে নি, এটি এখনো রয়েছে, চলছে।

ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদিবাসী শব্দটির পরিবর্তে ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি অর্থাৎ একটা কম্প্রোমাইজ শব্দ নিয়ে এলেন। আমরা অন্তত এইটুক আস্বস্থ হয়েছিলাম, স্বাধীনতার এত বছর পরে এসে সংবিধানের ২৩ (ক) ধারায় আদিবাসী না হলেও আজকে আদিবাসী গোষ্টির সাংস্কৃতিক স্বাতস্ত্র, রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র এবং তাদের অধিকারের প্রশ্ন নিয়ে সংবিধানের একটি ধারা হলো। কিন্তু যখন এটা সংসদে গেল তখন ভোটের প্রশ্ন এলো- শেষ পর্যন্ত আমরা এর প্রতিবাদ জানালাম।

মেনন বলেন, হঠাৎ করে কেন একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক দল আদিবাসী শব্দটিকে একটি নিরাপত্তার চশমা দিয়ে দেখছে। আসলে কি আমরা এদের নিয়ে নিরাপত্তায় ভ’গছি ? মেনন বলেন, পার্বত্র চট্টগ্রাম নিরাপত্তা চুক্তির পরে খালেদা জিয়া বলেছিলেন এ এলাকা ভারতের অংশ হয়ে যাবে। তা কিন্তু হয়নি। মেনন বলেন, বর্তমানে সমতলের আদিবাসীদের পদবী ভিন্ন ভিন্ন - মুর্মু মারমা, সাওতাল, ইত্যাদি। কিন্তু প্রশাসন তাদেরকে রায়, সরকার, বিশ^াস ইত্যাদি পদবী দিয়ে বোঝাতে চায় তারা আদিবাসী নন। এর ফলে এদের সম্পত্তি ডিসিরা লিজ বা হাত বদলের আদেশ দিয়ে দেন। ফলে আদিবাসীরা বাস্তুচ্যুৎ হচ্ছেন, তাদের জমিও হাতবদল হচ্ছে। এই অবস্থায় আদিবাসীরা কিভাবে তাদের নারীদের ঐতিহ্য রক্ষা করবেন? যদিও ২০২২ সালের জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের থিম- ‘আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও ঐতিহ্য বিকাশে আদিবাসী নারীদের ভ’মিকা’। তা কি করে সম্ভব? তাদের অস্তিস্ব রক্ষাই এখন বড় দায় হয়ে পড়েছে। আমাদের বাজেটেও আদিবাসীদের উন্নয়নে তেমন কোন প্রকল্প নেয়াও হয়না।

তিনি বলেন, আজকে পোপ ফ্রান্সিসকে ফ্রান্সে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হয়েছে, কেননা, দুশো বছর আগের চারশ আদিবাসী বাচ্চার কবর পাওয়া গেছে। এটা থেকে কি প্রমান হয়? এটা হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাস। আদিবাসীদের উন্নয়নের মূল ¯্রােত থেকে বাদ দিয়ে এসডিজি গোল কেন কোন গোলে উন্নীত হওয়া যাবে না। সংসদ সদস্য ফজলুল হক বলেন, আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় লেখা পড়া করা সুযোগ সৃষ্টি করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের জন্য সর্বস্তরে ৩০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা রাখারও আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির এমপি এ্যডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মেসবাহ বলেন, সংবিধানের ৩২ (এ) ধারায় বলা হয়েছে দেশের সকল নাগরিকের সমাধীকার নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসী শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে, সেখানে তাদেরকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি বলে অভিহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে দেশের সব ধরনের উন্নয়নে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারকে আরো দায়িত্বশীল হবার আহ্বান জানান।

ঢাবির অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, ২০২২ সালে জাতিসংঘ ষোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য ঐতিহ্যগত জ্ঞাণ ও ঐতিহ্য বিকাশে আদিবাসী নারীদের ভ’মিকা। কিন্তু বর্তমানে রাষ্ট্রিয় পরিকাঠামোয় আদিবাসী শব্দটিই অসাংবিধানিক বলে বলা হচ্ছে। এসময় তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি একজন আদিবাসী নারী নির্বাচিত হওয়ায় গর্বিত বোধ করেন।

সঞ্জীব দ্রং বলেন, আদিবাসীদের ভাষা সংস্কৃতি ঐতিহ্য জাতিসত্তা সবই আজ বিলুপ্তির পথে। তাদের ৩৯টি ভাষার মধ্যে ১৪টি ভাষা আজ বিলুপ্ত। তিনি আদিবাসীদের উন্নয়নে কোটার ব্যবস্থা, নিজস্ব ভাষায় প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিকে পড়ালেখার ব্যবস্থা করা ও সরকারীভাবে আদিবাসী দিবস পালনের আহ্বাণ জানান।

মিজ. শাহীন আনাম বলেন, আদিবাসীদের উন্নয়নের যেসব সুচক রয়েছে তার সব কটিতে তারা পিছিয়ে রয়েছে। তাদেরকে মূল ¯্রােতে আনতে না পারলে এসডিজি গোল কিভাবে পূর্ণ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি আদিবাসী ও আদিবাসী নারীদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি রক্ষায় সরকারকে উদ্যোগী হবার আহ্বান জানান।

বক্তারা আদিবাসীদের উন্নয়ন ও তাদের ঐতিহ্য, জাতিসত্ত্বা ধরে রাখার জন্য সরকারের সহায়তা কামনা করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App