×

মুক্তচিন্তা

পঞ্চাশে বাংলাদেশ : একত্রে উদযাপন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২২, ১২:২৩ এএম

পঞ্চাশে বাংলাদেশ : একত্রে উদযাপন

প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের ১৮ নম্বর আদেশ পাকিস্তান এক্সট্রা অর্ডিনারি গেজেটে ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ প্রকাশিত ১৮ বছর আদেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল এ এম ইয়াহিয়া খান স্বাক্ষরিত আদেশটি ভাষান্তরিত হচ্ছে : সাধারণভাবে আওয়ামী লীগ হিসেবে পরিচিত নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ পাকিস্তানে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে অস্তিত্ব হারাবে এবং (ক) এখন থেকে কোনো ব্যক্তি নিজেকে আওয়ামী লীগের সদস্য কিংবা দাপ্তরিক পদাধিকার বলে দাবি করতে পারবে না। (খ) কোনো ব্যক্তি মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে কিংবা সাংকেতিকভাবে কিংবা দৃশ্যত অনুমেয় প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ম্যানিফেস্টো প্রচার করতে পারবে না অথবা কোনোভাবে আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন জানাতে পারবে না। (গ) এখন থেকে কোনো ব্যক্তি আওয়ামী লীগের অ্যাকাউন্ট নিজ নামে বা ব্যাংকে পরিচালনা করতে পারবে না অথবা সেখান থেকে ব্যয় কিংবা অর্থ স্থানান্তর করতে পারবে না। (ঘ) যদি কোনো ব্যক্তির হাতে আওয়ামী লীগের নগদ অর্থ থেকে থাকে কিংবা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কিংবা আওয়ামী লীগের অ্যাকাউন্টে এই অর্থ থেকে থাকে তাহলে এই আদেশ জারির ৩০ দিনের মধ্যে তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের সদর দপ্তরে হিসাব দাখিল করবেন। ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে হিসেবের পূর্ণ বিবরণী- অর্থ জমা, উত্তোলন, হস্তান্তর এবং ব্যয়ের বিবরণ দাখিল করতে হবে। (ঙ) কোনো ব্যাংকে আওয়ামী লীগের কোনো তহবিল থাকলে তার আদান-প্রদান করতে পারবে না এবং এখন থেকে সেই তহবিল ফ্রোজেন বলে বিবেচিত হবে। (চ) যেসব ব্যাংকে আওয়ামী লীগের অ্যাকাউন্ট ও তহবিল রয়েছে এই আদেশ জারির ৩০ দিনের মধ্যে এই তহবিলে অর্থযোগ ও উত্তোলনসহ ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে বিস্তারিত বিবরণী রাওয়ালপিন্ডিতে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসনের এদের দপ্তরে জমা দিতে হবে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে জেনারেল এ এম ইয়াহিয়া খান এই আদেশ স্বাক্ষর করেছেন। বাংলাদেশ সেনা অফিসারদের কমিশন লাভ, ৯ অক্টোবর ১৯৭১ (অনূদিত) সেক্টর ও ব্রিগেড ফোর্স গঠনের পর বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সেক্টর ও ইউনিটে অফিসারের তীব্র সংকট অনুধাবন করতে পারে। সামরিক নেতৃত্বের ঘাটতি পূরণের জন্য বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বিভিন্ন মুক্তিবাহিনী ক্যাম্প থেকে ক্যাডেটদের ভারতীয় সামরিক প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে কমিশন্ড অফিসারের জোগান দেয়া হবে। মুক্তিবাহিনীর ক্যাডেটরা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সেনা সদস্য কলেজ শিক্ষক ১৯৭১-এর জুন নাগাদ তরুণ নেতা। বাংলাদেশি অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য ৩৩ কোরের অধীনে শিলিগুড়ির ইকো সেক্টরের অধীনে মূর্তিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী অফিসার্স ট্রেনিং স্কুল (ওটিএস) মডেলে একটি প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন করে। স্থানীয় ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার টি ডি যোগী পদাধিকার বলে কমান্ডার নিযুক্ত হন। কর্নেল দাসগুপ্ত এবং মেজর আশমান সিং থাপা ছিলেন যথাক্রমে চিফ ইনস্ট্রাক্টর ও সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর। ক্যাপ্টেন স্থানাপাতি ক্যাপ্টেন যাদব, ক্যাপ্টেন চন্দন, ক্যাপ্টেন আর পি সিং, ক্যাপ্টেন সাজ্জান সিং এবং আরো ক’জন ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন। মূর্তি একটি আধো-পার্বত্য অঞ্চল, একে ঘিরে আছে একটি পার্বত্য সরোবর, বর্ষাকালে তা ভয়ংকর রূপ ধারণ করে এর নামে মূর্তি নানা, চা বাগান এবং ভুটান সীমান্তের ভুয়ার্স বনাঞ্চল। প্রথম সন্ধ্যায় চিফ ইনস্ট্রাক্টর কর্নেল দাসগুপ্ত ক্যাডেটদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং কোর্সের বিবরণী উপস্থাপন করলেন। তিনি জানালেন ভারতীয় মিলিটারি প্রশিক্ষণ স্কুলের ১৮ সপ্তাহব্যাপী সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণে শত্রæর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ক্যাডেটদের জুনিয়র লিডারশিপের জন্য প্রস্তুত করা হবে। ড্রিল, সামরিক কেতা, আচরণ ছাড়াও রাত্রিকালীন এবং ছুটিকালীন নিবিড় প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখা হবে, যাতে নিত্যকার কাজের সঙ্গে সামরিক বিষয় সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত একজন উইং কমান্ডারের অধীনে চারজন স্কোয়াড্রন লিডার ৬১ জন ক্যাডেটকে চারটি স্কোয়াড্রনে ভাগ করে নেন। অফিসার ক্যাডেটদের নিয়মিত অস্ত্র প্রশিক্ষণ, সামরিক বিষয়ের লেকচার ও ডেমনেস্ট্রেশন দেয়া হতো, যুদ্ধ কৌশল ছোট বড় যুদ্ধ অপারেশন শেখানো হতো। বাগডোরা ক্যান্টনমেন্টে অফিসার ক্যাডেটরা ফায়ারিং এবং যুদ্ধ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন। ট্রেনিং সেন্টারের রাজনৈতিক অনুপ্রেরণাদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মোহাম্মদ আবদুর রউফ, এমএনএ। ৩৩ কোরের কোর কমান্ডার অনেকবার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম দেখতে এসেছেন। রণক্ষেত্র পরিদর্শনের কর্মসূচিতে পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরাও প্রশিক্ষণ স্কুলে এসেছেন। বাংলাদেশ বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিং জেনারেল এমএজি ওসমানীর সঙ্গে ৯ অক্টোবর ১৯৭১ ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং জ্যেষ্ঠ বেসামরিক কর্মকর্তারা পাসিং আউট প্যারেডের সময় মূর্তিতে এসেছিলেন। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও কমান্ডার-ইন-চিফ আনুষ্ঠানিক বক্তৃতা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন সার্টিফিকেট অফিসারদের কাছে হস্তান্তরের পর প্যারেড পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তার ভাষণে শত্রæর হাত থেকে নারী ও শিশুদের মর্যাদা রক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ প্রদান করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ৬১ জন কর্মকর্তা শপথগ্রহণ করেন এবং তাদের বিভিন্ন সেক্টরে পদায়ন করা হয়। বাংলাদেশ বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে নিয়োগ পান শেখ কামাল। যুদ্ধ চলাকালে এই কোর্সের সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট খন্দকার আজিজুল ইসলাম বীর বিক্রম, সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট আশফাকুস সামাদ বীর উত্তম এবং সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট কামরুল হাসান সেলিম বীর বিক্রম সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করে দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন।

উপরের দলিল দুটো যে গ্রন্থ থেকে অনূদিত হয়েছে তার নাম ‘সেলিব্রেটিং টুগেদার : বাংলাদেশ অ্যাট ফিফটি’। জুলাই ২০২১-এ প্রকাশিত বইটি আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত যদি সম্পাদক ও প্রকাশকে বইয়ের বিষয়, ভাষ্য ও প্রকাশনা নিয়ে আরো যতœবান হতেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পূর্তি অতুলনীয় গৌরবের একটি বিষয়। বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের এই সময়টি বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল স্থিতিশীলতার স্বপ্ন দেখিয়েছে। ‘সেলিব্রেটিং টুগেদার বাংলাদেশ @ ফিফটি’ গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ের শিরোনাম বাংলাদেশ মুভমেন্ট। এতে বঙ্গবন্ধুর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের এবং ৬ দফার ইংরেজি ভাষান্তর এবং ১ মার্চ ১৯৭১ থেকে ২৭ মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণী উপস্থাপন করা হয়েছে। এই অধ্যায়ে অপারেশন সার্চলাইট এবং যে সামরিক আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায় ‘গবর্নমেন্ট অব মুজিবনগর’। বাংলাদেশ সরকারের কোনো দলিলে ‘মুজিবনগর সরকার’ উল্লেখ করা হয়নি এবং ১০ এপ্রিল ১৯৭১ প্রথম সরকার গঠন করা হলেও তা আগরতলায় করা হয়েছে এমন তথ্য কোনো রাষ্ট্রীয় দলিলে নেই। এ অধ্যায়ের ভূমিকা অংশটুকু পুনর্লিখন প্রয়োজন। এই অধ্যায়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, অস্থায়ী সরকার গঠনের প্রেস রিপোর্ট, প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠকের কার্য বিবরণী মন্ত্রীদের পোর্টফোলিও, মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রাম; ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে লেখা ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির চিঠি, জোনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিল, পূর্বাঞ্চল সীমান্তে ক্যাম্প, মুক্তিবাহিনীর অপারেশনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল সংকলিত হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়টিতে মুক্তিবাহিনী সংঘটন করা থেকে শুরু করে কমিশন লাভ করা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়, এ সংক্রান্ত নির্দেশ ও দলিল সেক্টর কমান্ডারদের বৈঠকে সীমানা ও যুদ্ধনীতি আলোচনা ঠাঁই পেয়েছে। চতুর্থ অধ্যায়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ- বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতের সর্বাত্মক সহায়ক ভূমিকা স্মরণীয়, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদান অমোচনীয়। ‘একাত্তরের ইন্দিরা ও প্রিয়দর্শিনী গান্ধী’ গ্রন্থের ভূমিকা থেকে উদ্ধৃত : ‘১৯৭১-এ ইন্দিরা গান্ধী যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী না থাকতেন প্রধানমন্ত্রী থাকতেন সম্ভবত মোরারজি দেশাই কিংবা চরণ সিং কিংবা জগজীবন রাম। রামস্বামী কামরাজ কিংবা গুলজারি লাল নন্দাও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন। পরের পাঁচজনের যে কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মতো বিশাল ঘটনাটি আরো পিছিয়ে যেত। তাদের মধ্যে যিনিই প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসুন না কেন, অন্তর্দলীয় দ্ব›দ্ব ও আঞ্চলিক ক্ষমতা ভাগাভাগির লড়াইয়ে তাকে একটি দুর্বল সরকারের নেতৃত্ব দিতে হতো। তাদের কেউই রক্ষণশীল চরিত্র নিয়ে দেশীয় সংকট পাশ কাটিয়ে অথবা মোকাবিলা করে, নিক্সনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের সংকট নিয়ে মাথা ঘামাবার মতো অবস্থায় থাকতেন না।’ যুগপৎ ভারত ও বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষা করে একমাত্র ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষেই পাকিস্তানকে খণ্ডীকরণের লক্ষ্যে লড়াইয়ের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব ছিল। পঞ্চম অধ্যায়ের দলিলপত্রের মধ্যে রয়েছে যৌথবাহিনী গঠন থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ লড়াই প্রসঙ্গ। এতে পাকিস্তান সরকারের কিছু দলিল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তার মধ্যে রাজাকার অর্ডিন্যান্সও রয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম অধ্যায় ১৬ ডিসেম্বর পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ কিছু দলিলের সংকলন। এতে মুক্তিবাহিনী ও জাতীয় মিলিশিয়া গঠন সংক্রান্ত আদেশ, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তিসহ পরবর্তীকালে হাসিনা-মোদি যৌথ বিবৃতিও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে একাত্তরের দলিলগুলো নিয়ে নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রয়োজনীয় সংকলন।

২০২১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি, বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতির ৫০ বছর পূর্তি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের শতবর্ষ পূর্তি- তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমন্বিত করে এ এস এম শামসুল আরেফিনের সম্পাদনায় ‘ঈঊখঊইজঅঞওঘএ ঞঙএজঞঐঋজ ইঅঘএখঅউঊঝঐ@৫০’ নামের ৮০০ টাকা দামের গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। ৭ অধ্যায়ে বিভক্ত বইটির গুরুত্ব বাড়াতে তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ভূমিকা সংযোজন করা হয়েছে। ৫০ বছর বয়সি বাংলাদেশকে দেশি-বিদেশি পাঠককে জানাতে সম্পাদক ৪০ বছর বয়সি বাংলাদেশের তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করেছেন। ২০২১-এর মাঝামাঝি সময়েই উপজেলার সংখ্যা ৪৯২ নয় ৪৯৫টি। অনুমান করি সম্পাদকের টিমের গবেষকরা এদিকটাতে আদৌ মনোযোগ দেননি। তারা ২০১১ সালের বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক্সের পরিসংখ্যান ব্যবহার করেছেন এবং লোকসংখ্যা ১৬০ মিলিয়ন বলে উল্লেখ করেছেন এবং ২০১১ সালের আদমশুমারি প্রতিবেদন বলছে তখন লোকসংখ্যা ছিল ১৪০ মিলিয়নের সামান্য বেশি; গ্রন্থটির হিসাবে এই আদমশুমারি অনুযায়ী হিন্দু জনসংখ্যা ১২ শতাংশের বেশি কিন্তু আদমশুমারি প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবেই দেখানো আছে হিন্দু জনসংখ্যা ৮.৫৪ শতাংশের সামান্য নিচে। যেহেতু গ্রন্থটি গবেষকদের জন্য একটি আকরগ্রন্থ হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে এসব তথ্য বিভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়োজনও রয়েছে। বাংলাদেশের ঘটনাবলীর সংক্ষিপ্ত তালিকায় ১৯৮৯ সালের পাশে লেখা হয়েছে শেখ হাসিনাকে ‘ফবঃধরহংরড়হ’ দেয়া হয়েছে। দেশি-বিদেশি যারাই এই ইংরেজি গ্রন্থটিতে এই শব্দটি পড়বেন, বিভ্রান্ত হবেন- এটা কী? গ্রন্থের ৪৫ থেকে ৭৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত এত অধিক পরিমাণ ভুল ইংরেজি শব্দ ও বাক্য লিখা হয়েছে যে সম্পাদক আদৌ তা পড়েননি বলেই অনুমান। পড়ে থাকলে তিনি নিশ্চয়ই ভাষা শুদ্ধি নিশ্চিত না করে সম্পাদক হতে রাজি হতেন না। যে তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার) বইটির পাতা না উল্টেই ভূমিকা লিখেছেন, এটি তাদের জন্যও কম বিব্রতকর নয়। কাজেই সবারই প্রত্যাশা গুরুত্বপূর্ণ সংকলনের মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী পাওয়ার অধিকারী হতে হলে গ্রন্থটির ভ্রান্তি সংশোধন করে সম্পাদক একটি পুনঃমুদ্রণ বাজারে আনবেন। তাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ দলিলগুলো এই গ্রন্থটির সূত্রে ব্যবহার করা যাবে। নতুবা ভুল ইংরেজিতে লেখা, বহু ভুল তথ্যে আকীর্ণ বইটি একটি পণ্ডশ্রমের নজির হয়ে থাকবে।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App