তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ ও করণীয়
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২২, ০১:৪৫ এএম
করোনা মহামারির পর তৈরি পোশাক খাত অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। করোনার প্রাদুর্ভাবে স্থগিত ও বাতিল হওয়া ক্রয়াদেশও ফিরে এসেছিল। ফলে বাড়ছে রপ্তানি। সর্বশেষ জুলাইয়ের রপ্তানি তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, মাসটিতে নিট ও ওভেন মিলিয়ে ৩৩৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম। বৈশ্বিক সংকটে এখন আবার অনেক রপ্তানিমুখী কারখানায় কমছে ক্রয়াদেশ। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে খরচ বাড়ছে কারখানায়। এসব কারণে তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। সংকট মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করা উচিত বলে মনে করছি। বৈশ্বিক মহামারিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পোশাক খাত। এরপর সংক্রমণ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে প্রচুর ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করে। ফলে পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি প্রচুর বেড়ে যায়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। সেখানে বিক্রি কমলে তার প্রভাবও এ দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের ওপর পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। বিজিএমইএর তথ্যের বরাত দিয়ে গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহ, কন্টেইনার ভাড়া, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে গত ৫ বছরে পোশাক খাতের সামগ্রিক উৎপাদন খরচ ৪০ শতাংশ বেড়েছে। আগামী কয়েকটি বছর দেশের পোশাকশিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের প্রয়োজনে অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তনশীল ভোক্তা চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের বহুমুখীকরণ বা বৈচিত্র্যসাধন, কারখানায় আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও দক্ষ জনবল তৈরির মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হলে পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। সেই প্রস্তুতি এখন থেকে নিতে হবে। অনেক চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে গত কয়েক দশকের পথপরিক্রমায় দেশের তৈরি পোশাকশিল্প আজকের এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। অনেক প্রতিকূলতা এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প এগিয়ে যাচ্ছে অগ্রগতির পথে। দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে পোশাকশিল্পের কোনো বিকল্প নেই। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশ থেকে যে রেমিট্যান্স আসছে তার অন্যতম খাত হলো গার্মেন্টস শিল্প। প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক অর্থ আয় করছে। যে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে সে দেশের শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ব পোশাক বাজার এখন ৬৫০ বিলিয়ন ডলারের। বাংলাদেশ এর মাত্র ৫ শতাংশ সরবরাহ করে। এ হার ৮ শতাংশে উন্নীত করতে পারলেই ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। এই টার্গেট পূরণে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আন্তরিক ও বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন।