×

জাতীয়

অটোরিকশায় বিদ্যুতের বড় অপচয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২২, ০৮:১২ এএম

অটোরিকশায় বিদ্যুতের বড় অপচয়

ছবি: ভোরের কাগজ

প্যাডেলচালিত রিকশা বিলুপ্তির পথে > পুলিশ আটক করলেও ছাড়া পায়

রাজধানীর অলিগলি থেকে শুরু করে সারাদেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা ও ইজিবাইক। সরকার ও উচ্চ আদালত এসব রিকশাকে অবৈধ বললেও এর অধিকাংশ গ্যারেজে রয়েছে বিদ্যুতের বৈধ সংযোগ। এসব গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জ দেয়ার জন্য জামানত নিয়ে বসানো হচ্ছে ট্রান্সফর্মার। আছে অবৈধ সংযোগও। আবাসিকের সংযোগে চলছে চার্জের বাণিজ্যিক কাজ।

তবে ঢাকাসহ সারাদেশে মোট কতটি অটোরিকশা বা ইজিবাইক রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কারো জানা না থাকলেও এর সংখ্যা কয়েক লাখ বলে জানা গেছে। এসব অটোরিকশা বা ইজিবাইক চার্জ দেয়ার জন্য গ্যারেজ আছে কয়েক হাজার। অনেক সময় অটোরিকশা পুলিশ আটক করলেও পরে রেকার বিল বা জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেয়ে পুনরায় রাস্তায় চালানো হচ্ছে এসব বাহন। অটোরিকশার ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে প্যাডেলচালিত রিকশা। সাধারণ প্যাডেলচালিত রিকশার মতো দেখতে হলেও সিটের নিচে ব্যাটারি ও চেনের সঙ্গে মোটর সংযুক্ত করে চলছে অলিগলিতে। এসব রিকশার বেপরোয়া গতির কারণে যেমন হরহামেশা দুর্ঘটনা ঘটছে তেমনি অবৈধ লাইনে ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে অপচয় হচ্ছে বিদ্যুতের। অবশ্য যানজটের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ানোয় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন অটোরিকশামুক্ত ঘোষণা করেছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম। জনগণ এর সুফল পেতেও শুরু করেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গত বছরের ২০ জুন সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য টাস্কফোর্সের সভা শেষে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান বন্ধ হবে। প্যাডেলচালিত রিকশাকে যারা ইঞ্জিন দিয়ে রূপান্তর করেছেন সেসব রিকশা-ভ্যান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম জানান, ১৩ হাজার মোটরচালিত রিকশা ও ভ্যান ধ্বংস করা হয়েছে। ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তারা যাতে নির্দিষ্ট স্থান থেকে বের হতে না পারে এবং হাইওয়েতে কিংবা বড় রাস্তায় না আসতে পারে। ক্রমান্বয়ে এটাও বন্ধ করে দেয়া হবে। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বিচারপতি মামনুন রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ সারাদেশে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশ দেন। তাছাড়া ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানবাহন আমদানি ও বিক্রির ওপরেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট সভায় মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি রাস্তা-মহল্লা অটোরিকশায় সয়লাব। একেকটা অটোরিকশায় ৪টি করে ব্যাটারি থাকে। সারাদিন চালানোর পর এগুলো সারারাত চার্জে রাখা হয়। এসব অটোরিকশা বিদ্যুৎবিধ্বংসী। এতে প্রচুর বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে। পাশাপাশি এগুলোতে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটছে। শহরে আগে অনেক পায়ে চালিত রিকশা চলত। এখনো চলে। আমরা তো পায়ে চালিত রিকশা বন্ধ করে দিচ্ছি না। যিনি অটোরিকশা চালান তিনি পায়েচালিত রিকশা চালাবেন। ডিএনসিসি এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন আতিকুল ইসলাম। অবশ্য এতকিছুর পরও এসব চলছে সড়ক-মহাসড়কে।

এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেছেন, এই সেক্টর গ্রামীণ পরিবহনের মৌলিক চাহিদা মেটাচ্ছে। এসব বন্ধ করলে কর্মসংস্থানে সমস্যা হবে ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। এজন্য বিকল্প জ¦ালানির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে সোলার প্যানেল বসিয়ে এসব চার্জের ব্যবস্থা করতে হবে। জ¦ালানি সরবরাহ নিশ্চিত করে এসব বাহনকে বৈধতা দিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। এতে লোকজনের কর্মসংস্থান হবে আবার বিকল্প জ¦ালানিরও সংস্থান হবে।

অটোরিকশা বা ইজিবাইকের জন্য মালিককে দিনে ৩০০-৪০০ টাকা দিতে হয়। চার্জের জন্য গ্যারেজ মালিক প্রতিদিন পায় ১২০ টাকা। একটি ইজিবাইক চালানোর জন্য ৪-৫টি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। আর প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৯০০-১১০০ ওয়াট হিসাবে ৫-৬ ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫-৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। দিন-রাত পালাক্রমে চলা এসব রিকশা বা ইজিবাইক চার্জের জন্য ব্যবহার হচ্ছে উৎপাদিত বিদ্যুতের বড় অংশ। অবৈধ বিদ্যুৎকে সিস্টেম বলা হলেও সাশ্রয়ে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ মূলত এসব রিকশা আটকালেও ডাম্পিং করা হয় না। হাইওয়ে পুলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা রেখে এসব ছেড়ে দেয়। ট্রাফিক পুলিশ নেয় ইচ্ছেমতো। আবার ঢাকার বাইরে পৌর এলাকায় পৌরসভা থেকে রিকশাপ্রতি ১ হাজার ৬০০ টাকা করে নিয়ে দেয়া হয় নম্বর প্লেট। প্রতি বছর তা নবায়ন করতে হয়। ঢাকার পাশে সাভার ও ধামরাই পৌরসভা রিকশা থেকে এমন কায়দায় কথিত পৌরকর আদায় করে আসছে।

রাজধানীর কদমতলী, শ্যামপুর, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, সবুজবাগ, মান্ডা, খিলগাঁও, রামপুরা, বনশ্রী, মিরপুর, পল্লবী, শাহআলী, উত্তরখান, দক্ষিণখান, তুরাগ, মানিকদী, মোহাম্মদপুর, বছিলা, মুগদা, বাসাবো, হাজারীবাগ, জিগাতলা, কামরাঙ্গীরচর, তেজগাঁও, সাতরাস্তা, জুরাইন, ডেমরা, শনিরআখড়া, মাদারটেক, মধ্যবাড্ডা ও উত্তর বাড্ডা এলাকায় দেদার চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। গলির ভেতরে এসব রিকশা চললেও সুযোগ বুঝেই গলি থেকে বের হয়ে মহাসড়কেও উঠে যাচ্ছে।

রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সহসাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নাদিম বলেন, রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা কত তার সঠিক হিসাব নেই। একটা রিকশা রাতে চার্জ দিলে সারাদিন চলে। এতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, একটি এসি এক ঘণ্টা চালাতে সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগে। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, সরকার এসি বন্ধ রাখা নিশ্চিত করতে না পারলেও গরিব-অসহায়দের বাহন বন্ধ করতে চায়। সরকারকে যথেষ্ট বিল দিয়েই ব্যাটারিচালিত রিকশা চার্জ দেয়া হয় দাবি করে তিনি বলেন, একটা রিকশা চার্জ দিতে দেড় ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। যেসব জায়গায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চার্জ দেয়া হয় তারা বাণিজ্যিক মিটার বসিয়েই চার্জ দেয়।

প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক সংকটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রাত ৮টার পর সারাদেশে দোকান, বিপণিবিতান, মার্কেট ও কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অফিসে এসি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া, সভা ভার্চুয়ালি করা, অফিস সময় কমানোর পরিকল্পনা, এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং, আলোকসজ্জায় নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে অবৈধ অটোরিকশা ও ইজিবাইক যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খাচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই কারো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App