×

জাতীয়

জ্বালানি খাতে সুশাসনে প্রয়োজন আধুনিক নীতিমালা: সাবের হোসেন চৌধুরী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২২, ০৭:০০ পিএম

জ্বালানি খাতে সুশাসনে প্রয়োজন আধুনিক নীতিমালা: সাবের হোসেন চৌধুরী

বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশে কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্প: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি সাবের হোসেন চৌধুরী। ছবি: ভোরের কাগজ

ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেশের স্বার্থ ও পরিবেশ রক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়োজন আধুনিক নীতিমালা। যদি তা করা হয়, তাহলে দেশি-বিদেশি যে পরামর্শদাতাই নিয়োগ দেয়া হোক, দেশের স্বার্থ ব্যাহত হবে না।

আজ বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশে কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্প: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যৌথভাবে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে।

বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের উপস্থাপনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. এম. শামসুল আলম, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) আইটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মঞ্জুর-ই আলম প্রমুখ।

আলোচনা অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। মুক্ত আলোচনায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত ব্যক্তিরা বিদ্যুৎ প্লান্টের কারণে পরিবেশের ক্ষতি, জমি অধিগ্রহনের নামে পাশবিক নির্যাতনের স্বীকার হওয়াসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। পাশাপাশি টিআইবির পক্ষ থেকে কয়লা ও বিদ্যুৎ প্রকল্পের নানা দূর্নীতি ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে একটি গবেষণা পত্র তুলে ধরে। যেখানে প্রকল্পে দরকষাকষির অভবি, অভ্যন্তরীন কয়লা ও গ্যাস ব্যবহার নিশ্চিতে সক্ষম না হওয়া, জ্বালানি খাতের অবকাঠামো ঘাটতি, নিম্নমানের কয়লা ব্যবহার, প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকা, জ্বালানি খাতে দাতা নির্ভর নীতি, ইপিসি ঠিকাদার নিয়গসহ নানা রকম অনিয়ম তুলে ধরা হয়। এসব থেকে পরিত্রাণের জন্য ১১টি সুপারিশ তুলে ধরা হয় গবেষণাপত্রে।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, শোকের মাস চলছে। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই, তাহলে একটি আধুনিক ও কল্যাণময় বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ খাত অতি গুরুত্বপূর্ণ। তবে, দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই খাতে এখনো কোনো আধুনিক নীতিমালা হয়নি। ১৯৯৪ সালের একটি পুরনো নীতিমালার কিছু কিছু অংশ খণ্ডাকারে পলিসিতে যুক্ত করা হয়েছে। এই নীতিমালা যদি স্পষ্ট করা হয়, তাহলে অবশ্যই জাতীয় স্বার্থ রক্ষা পাবে। পাওয়ার মাস্টার প্লানের কোন কোন জায়গাতে অগ্রাধিকার দিতে হবে সেটিও প্রতিষ্ঠা পাবে।

ঢাকা-৯ আসনের সাংসদ বলেন, এমডিজি, এসডিজি, ভিশন-৪১, ডেল্টা প্লান যদি আমরা করতে পারি, তাহলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নীতি কেন করতে পারবো না। এটা সত্য, উন্নয়ন কাজ শুরুর প্রথম দিকে বিদেশী অর্থায়নের দরকার ছিল। তখন আমরা ধরে নিতাম, বিদেশী কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিলে ফান্ড পেতে সুবিধা হবে। এখনতো বাংলাদেশ সেই জায়গায় নেই। ফলে বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান যেমন পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় বা অন্য কোনোটি এই কাজটি হাতে নিতে পারে। সেটি না হলে, অনেক প্রকল্প হয়তো আসবে, কিন্তু অনেক জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে এলএনজি নির্ভরতার কথা বলা হচ্ছে। সেটা হলে অবশ্যই এটি নিয়ে ভাবতে হবে। কেননা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমরা এলএনজি, কয়লা নাকি নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে হাটবো সেটি নিশ্চিত করতে হবে এখনই। পাশাপাশি সমুদ্রসীমা জয়ের পরে আমাদের পদক্ষেপ কেমন ছিল সে বিষয়েও ভাবতে হবে। এ বিষয়ে ভারত কিংবা মিয়ানমারের পথেই হাটতে হবে তেমনটি নয়। কিভাবে আমার সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে পারি, তা ভাবতে হবে। সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বিদ্যুতের কারণে পরিবেশের ক্ষতির কথা বলা হচ্ছে। আমি মনে করি, পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব শুধু পরিবেশ অধিদপ্তরের নয়।

জলবায়ুর বিষয়ে দেশের বাইরে আমরা যতটা গুরুত্ব দেই, দেশের অভ্যন্তরে তেমনটা দিচ্ছি না। ফলে খাস জমি থাকা সত্বেও সংরক্ষিত বন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। পরিবেশকে সম্পদ হিসেবে না দেখলে ভবিষ্যতে পচতাতে হবে। জ্বালানি নিরাপত্তা ও পরিবেশ সুরক্ষা যাতে সাংঘর্ষিক না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, আন্তর্জাতিক একটি কোম্পানির ২০১৮ সালের জরিপে দেখা গেছে দেশে ৩৪ টিসিএফ অনাবিষ্কৃত গ্যাস রয়েছে। এই গ্যাস উত্তোলনে যদি সঠিক ব্যবস্থাপনা করা হয়, তাহলে উৎপাদন দ্বিগুণ হবে। তখন আর বেশি টাকা দিয়ে এলএনজি আমদানির উপর নির্ভর করা লাগবেনা। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সুশাসনের অভাবের সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রান পেতে দ্রত সরবারহ আইন ঢেলে সাজিয়ে প্রয়োগ শুরু করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App