×

জাতীয়

জবি ছাত্রীর মোবাইল বেচে মদ খেয়েছিল ছিনতাইকারীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২২, ০২:১৪ পিএম

জবি ছাত্রীর মোবাইল বেচে মদ খেয়েছিল ছিনতাইকারীরা

জবি ছাত্রীর মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত প্রধান অভিযুক্ত আকাশ ও শফিক। ফাইল ছবি

জবি ছাত্রীর মোবাইল বেচে মদ খেয়েছিল ছিনতাইকারীরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রীর হাত থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল বেচে মদ খেয়েছিলেন ছিনতাইকারীরা।

সেই ফোন উদ্ধার এবং ওই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বুধবার (৩ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রুবাইয়াত জামান।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার সিগন্যালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) স্মাতকোত্তরের (মাস্টার্স) ছাত্রী পারিশা আক্তারের মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ১১ দিন পর তা উদ্ধার করেছে ডিএমপির তেজগাঁও থানা-পুলিশ। সেই সঙ্গে ১৭ বছর বয়সী এক শিশু ছিনতাইকারীসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত বাকি দুজন হলো- রিপন ওরফে আকাশ (২৪) ও ছিনতাই হওয়া মোবাইলটির ক্রেতা মো. শফিক (২১)।

তেজগাঁও থানা পুলিশ জানিয়েছে, ছিনতাইকারীরা জামিনে বের হয়ে একই কাজ করে যাচ্ছে। ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত গ্রেপ্তার আকাশ গত ১৪ জুলাই জামিনে কারাগার থেকে বের হয়েছিল। আর জবি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী পারিশা আক্তারের মোবাইল ফোনটি বিক্রি হয়েছিল মাত্র ৪ হাজার টাকায়। মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ায় বিষয়টি টের পেয়ে তা রিসেট দেয়া হয়েছিল।

গত ২১ জুলাই মাস্টার্সের থিসিসের কাজ শেষে বাসযোগে নিজ বাসায় ফেরার পথে তেজগাঁও থানাধীন কারওয়ান বাজার ওয়াসা ভবনের সামনে সন্ধ্যা ৬টার দিকে জানালা দিয়ে জবি ছাত্রীর মোবাইল টান দিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারী। পরে এ ঘটনায় একটি মামলা হয়। বুধবার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিএমপির তেজগাঁও থানা কমপাউন্ডে এ মামলায় মোবাইল উদ্ধার ও ছিনতাইয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রুবাইয়াত জামান।

তিনি বলেন, গত ২১ জুলাই অভিযোগকারী পারিশার হাত থেকে তার ব্যবহৃত পোকো এম থ্রি কালো রঙ এর মোবাইল ফোনটি টান দিয়ে চুরি করে নিয়ে যায় ছিনতাইকারী। পারিশা দ্রুত বাস থেকে নেমে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ধরে ফেলে। পারিশার সাথে থাকা তার বন্ধুরা ঘটনাস্থল থেকে অপর একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ধরে ফেলে। সন্দেজভাজন দুজন বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত থাকলেও, পারিশার মোবাইল চুরির ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পারিশা ও তার বন্ধুদের সাহসী ভূমিকার বিষয়টি গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে প্রথমে তেজগাঁও থানায় একটি জিডি করেন পারিশা আক্তার। পরে পুলিশের অনুরোধে পারিশা তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৪১।

[caption id="attachment_360955" align="aligncenter" width="1734"] সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রুবাইয়াত ডানপাশে জবি ছাত্রী পারিশা আক্তার। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

এডিসি রুবাইয়াত বলেন, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ও অপরাধীর বিষয়ে অভিযোগকারীর মৌখিক বর্ণনা অনুযায়ী কাজ শুরু করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত একজনকে। তার বয়স ১৮ বছরের নিচে। জিজ্ঞাসাবাদে সে ছাড়াও মূল অভিযুক্ত মো. রিপন ওরফে আকাশের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

আকাশকে ধরতে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আকাশ জেলে। পরে জিজ্ঞাসাবাদের স্বার্থে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে দুদিন রিমান্ডে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আকাশ ঘটনায় নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে। সে জানায়, ছিনতাই করা মোবাইল ফোনটি মাত্র ৪ হাজার টাকায় কারওয়ান বাজারের চোরাই মোবাইল ক্রেতা অপর গ্রেপ্তার মো. শফিকের কাছে বিক্রয় করে। তার দেয়া তথ্য মতে, কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়ে শফিককে গ্রেপ্তার করাসহ তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় চোরাই মোবাইলটি।

গ্রেপ্তারদের সম্পর্কে এডিসি বলেন, অভিযুক্ত আকাশের নামে বিভিন্ন থানায় ৬ টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার অপর অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু রাশেদের বিরুদ্ধে ৪ টি ও চোরাই মোবাইল ক্রেতা শফিকের নামেও দুটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

তেজগাঁও থানা এলাকায় আরও অনেক ছিনতাই হয়, পুলিশের ভূমিকা স্পষ্ট নয়, তাছাড়া ছিনতাইয়ের ঘটনায় অনেক ভুক্তভোগী মামলা করতে চান না, মামলা করতে গেলেও অনেক সময় পুলিশ মামলা নেয় না। শুধু ভাইরাল হলেই মোবাইল উদ্ধার হয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে তেজগাঁও জোনের এডিসি বলেন, পারিশা আমাদের অনেক সহযোগীতা করেছেন। তিনি জিডির পর মামলা করেছেন। সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রেখেছেন। গ্রেপ্তারদের প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। এই ছিনতাইয়ে প্রধান জড়িত আকাশ গত ১৪ জুলাই অন্য একটি মামলায় মাত্র জামিনে বেড়িয়েছে। এটাই একটা সমস্যা যে, জামিনে বেড়িয়ে আবারো ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা তেজগাঁও এলাকাতেই গত জুলাইয়ে অন্তত ৫০টি মোবাইল উদ্ধার করেছি। ৩০ জনের মতো গ্রেপ্তার করেছি। এরমধ্যে ৭টি মামলার বাদী কিন্তু পুলিশই। পারিশার মামলার জড়িতরা যাতে পুনরায় জামিনে বেড়িয়ে অপরাধে জড়াতে না পারেন, অপরাধ দমন ও ন্যায় বিচার নিশ্চিতে মামলার তদন্ত কার্যক্রম দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করা হয়েছে। মামলাটি হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে আজ বুধবার (৩ আগস্ট) অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র প্রদান করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভুক্তভোগী পারিশা সাংবাদিকদের বলেন, আমি অনেক খুশি। পুলিশ খুব দ্রুত আমার মোবাইলটি উদ্ধার করেছেন। সবচেয়ে খুশির কথা হচ্ছে ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করেছেন। আমি বলবো, এই ছিনতাইকারীরা যেন কোনোভাবে জামিনে ছাড়া না পায়। যাতে আবারও কেউ ছিনতাইয়ের শিকার না হয়। আমার সাহসিকতায় জনগণসহ সবাই সাহস দিয়েছেন। আমি চাই সবাই সবার বিপদে এগিয়ে আসুক। সবাই সাহসিকতার পরিচয় দিক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App