×

মুক্তচিন্তা

মর্মান্তিক দুর্ঘটনার দায় কে নেবে?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২২, ১২:২৯ এএম

গত ২৯ জুলাই আমার চোখে দেখা সবচেয়ে মর্মান্তিক শিরোনাম ‘ছুটির দিনে ঘুরতে বেরিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন ১১ জন।’ তারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী। কী মর্মান্তিক ঘটনা? তবে কি কেউ বেড়াতে যাবে না? ঘটনাটি এমন নয়। সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনে ভ্রমণেরও প্রয়োজন আছে। আমরা কি পারি না নিজের জীবনকে নিরাপদ রাখতে? কীভাবে সড়ক নিরাপদ রাখা যায়, আমরা কি সে দিক থেকে ব্যর্থ হচ্ছি? এক সেকেন্ডে চলে গেল ১১টি সম্পদ। তাদের সামনে ছিল সীমাহীন ভবিষ্যৎ। কারণ আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের সম্পদ। রেলসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে সারাদেশে রেলপথে মোট ক্রসিং আছে ২ হাজার ৮৫৬টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬১টিরই অনুমোদন নেই। আবার ১ হাজার ৪৯৫টি বৈধ ক্রসিংয়ের মধ্যে ৬৩২টি ক্রসিংয়েই গেটম্যান নেই। জানা গেছে, গত প্রায় চার বছরে সারাদেশে রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১ হাজার মানুষ। আহত ও পঙ্গু হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি মানুষ। রেল দুর্ঘটনায় যত প্রাণহানি হয়, তার ৮৯ শতাংশই অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে ঘটে। রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংগুলোর (বৈধ-অবৈধ) প্রায় ৮৪ শতাংশই অরক্ষিত। আর এসব ক্রসিংয়ে প্রায়ই ঝরছে সাধারণ মানুষের প্রাণ। অথচ এসব ক্রসিং নিরাপদ করার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের অগ্রাধিকারে নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় গত জুন মাসে নিহত হয়েছেন ৫২৪ জন। এর মধ্যে ২০৪ জনই নিহত হয়েছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। এছাড়া নিহতদের মধ্যে ৭৩ জন শিশু এবং ৭৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগের মাসে (মে ২০২২) সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৪১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ, ধরন, স্থান ও সমাধানের উপায় সবই দেখছি; কিন্তু তার বাস্তবায়ন কেন হচ্ছে না প্রশ্নটা হয়তো আমার মতো সবারই। রেল তথ্যমতে, বিগত এক যুগে রেলওয়েতে ১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। অথচ রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংয়ের দুর্ঘটনা রোধকল্পে তেমন কোনো বড় অঙ্কের অর্থের প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখা যায় না। রেলে এ পর্যন্ত যে বিপুল বিনিয়োগ হয়েছে এবং চলমান যে বরাদ্দ আছে এর ১ শতাংশের কম বিনিয়োগ করলেও রেলপথ নিরাপদ হয়ে যায়। কিন্তু রেলের কর্মকর্তাদের এসব প্রকল্পের দিকে মনোযোগ নেই। যে কারণে একটি দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরো একটি দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ছোট একটি সতর্কীকরণ নোটিস টাঙিয়ে কর্তৃপক্ষ দায় সারে। কিন্তু একবারও ভাবে না এটি ক্রসিং নামের মৃত্যুফাঁদ। অতিরিক্ত গতি ও চালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে মোটরসাইকেলের আধিক্য এবং ছোট যানবাহনের চলাচল বেড়ে যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা আরো বাড়ছে। মহাসড়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ছোট অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা সরকার দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এছাড়া গত এক দশকে কোনো রকম বাছবিচার না করেই মোটরসাইকেলের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। অথচ মোটরসাইকেলে হেলমেট নিশ্চিত করা, গতিনিয়ন্ত্রণ এবং চালকের লাইসেন্স থাকার বিষয়ে সেভাবে নজরদারি করেনি সরকার। মর্মান্তিক দুর্ঘটনার দায় ঘটনা ভেদে ভিন্ন। তবে মর্মান্তিক ঘটনায় সরকারের দায়িত্ব অভিন্ন। কারণ সরকারকেই রেলপথ, সড়কপথ ও পথচারী সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হয়। দুর্ঘটনারোধে সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। কেন সড়ক নিরাপদ করতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে না সরকার তা আমার জানা নেই। বিশেষ করে সড়কে গাড়ির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন। প্রয়োজন চালকের লাইসেন্স প্রদানে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ। কারণ অদক্ষ চালককে লাইসেন্স দেয়ার অর্থই মরণযন্ত্র তার হাতে তুলে দেয়া। গাড়ি ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানেও কোনো আপস নয়। অনিরাপদ সড়কে নিরাপদ থাকতে পথচারীদের সড়ক আইন মান্য ও সচেতন করতে, সড়ক ও রেলপথের অনিরাপদ দিকগুলো নিরাপদ করতে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তবেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।

গোপাল অধিকারী : সাংবাদিক ও লেখক, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App