×

জাতীয়

বাড়ছে ট্রেনের লেভেল ক্রসিংয়ে মৃত্যু, থামার উপায় কি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২২, ০৯:৩০ পিএম

বাড়ছে ট্রেনের লেভেল ক্রসিংয়ে মৃত্যু, থামার উপায় কি

রেলক্রসিং বেশিরভাগই অরক্ষিত। গেইটম্যান নেই। ছবি: ভোরের কাগজ

মোট লেভেলক্রসিং ২৮৫৬ টি, বৈধ ১৩৬১টি, অবৈধ ১৪৯৫টি গেটম্যান আছে ২৫ শতাংশে, রক্ষীবিহীন বাকি ৭৫ শতাংশ

ট্রেনের লেভেল ক্রসিংগুলো যেন মৃত্যুফাঁদ। প্রতিনিয়ত লেভেল ক্রসিংগুলোতে বাস, মাইক্রো, লেগুনা, লরিসহ বিভিন্ন যান বাহনের সঙ্গে চলন্ত ট্রেনের ধাক্কা যেন নিত্য নৈমিতিক ঘটনা। এমন কোন সপ্তাহ বা মাস নেই যে মাসে ঝরছে না প্রাণ। আর লেভেল ক্রসিং এ মৃত্যু বন্ধে দ্রুত গেট ম্যান নিয়োগ, স্বয়ংক্রিয় সাইরেন বাজানো ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে গেটবন্ধকরার প্রযুক্তি চালুসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সাথে তারা যেসব গাড়ির চালক ট্রেন আসছে কিনা তা না দেখে ট্রেন লাইনে দ্রুত উঠে পড়ে তাদের দক্ষতা ও মনস্তাস্তিক স্থিরতা বিশ্লেষণ করে লাইসেন্স ইস্যু করারও কথা বলেছেন। আর এসব বাস্তবায়ন সম্ভব হলে দূর্ঘটনা কিছুটা কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।

রেলের পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে রেললাইনে দুই হাজার ৬০১টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনের সঙ্গে লেভেল ক্রসিং এ বিভিন্ন যান বাহনের সঙ্গে ট্রেনের ধাক্কায় দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৫৮টি। এসব দুর্ঘটনায় ৩৪৩ জন মারা গেছে। যদিও রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২২ সালের ২৯ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশের রেলক্রসিংসমূহে ১১৭টি দুর্ঘটনায় ২৩০ জন নিহত হয়েছে। তাদের দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৩৮ দুর্ঘটনায় ৬৯ জন, ২০২১ সালে ৪৩ দুর্ঘটনায় ৭৬ জন, ২০২২ সালের ২৯ জুলাই পর্যন্ত ৩৬ দুর্ঘটনায় ৮৫ জন মারা যান।

সর্বশেষ গত শুক্রবার ট্রেনের ধাক্কায় নিমিষেই ঝরে গেছে ১১ তরুণ তাজা প্রাণ। মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়ার পূর্ব খৈয়াছড়া গ্রামের ঝরনা থেকে কিছুটা দূরেই রেলের লেভেলক্রসিং এ ঘটনা ঘটে। তবে এই লেভেলক্রসিংটি ছিল বৈধ এবং রক্ষিত। কিন্তু লেভেল ক্রসিংটিতে গার্ড ডিউটিতে ছিল না বলে প্রাথমিক ভাবে জানান গেছে।

বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, আসলে প্রথমে অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিং গুলো চিহ্নিত করতে হবে। আর সেগুলোকে যারা বানিয়েছে তাদরে সঙ্গে আলোচনা করে গেটম্যান বা লোকবল নিয়োগের কোন বিকল্প নেই। বর্তমান মান্ধাতার আমলের টেলিফোনিক ব্যবস্থার বদলে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। ট্রেনটি কোন একটি দুরত্বে আসলে যাতে গেট অটোমেটিক বন্ধ হয় ও সাইরেন বাজতে থাকে ও লাল বাতি জ্বলে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এটি পৃথিবীর বহু উন্নত দেশে কার্যকর রয়েছে। একই সাথে তিনি প্রতিটি গেটের দুদিকে ২৬৩ মিটার করে ফাঁকা রাখার কথা বলেন, যাতে ট্রেন ড্রাইভার ও বাস ড্রাইভার দুজনেই সব কিছু দেখতে পান। একই সাথে যান চালকদের দক্ষতা- মনস্তাস্তিক দিক বিশ্লেষন করে লাইসেন্স দেবারও দাবি জানান তিনি।

যদিও এবিষয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, রেলপথে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য রেল সরাসরি দায়ী নয়। রেল নিজস্ব পথে চলে, সড়কে নয়। সেখানে রেলের জায়গায় অর্থাৎ রেল লাইনের দু পাশে ১৪৪ ধারা জারি করা থাকে। সতর্কতা মূলক সঙ্কেত ও কতর্কতামূলক লেখাও থাকে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সরকার, ডিসিসি, এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে তাদের সুবিধামত লেভেল ক্রসিং বানিয়ে নিয়েছে। যা তারা রেলের সঙ্গে আলোচনা না করেই করেছে। এসব লেভেল ক্রসিং অবৈধ, এগুলোতে আমরা এখনো গেটম্যান দিতে পারেনি। কেননা, আমাদের দীর্ঘদিন ধরে কর্মী সঙ্কট রয়েছে। যার জন্য অনেক লেভেল ক্রসিং রক্ষী বিহীন, ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্রসিয় বানানোয় ইতিমধ্যে আমরা এসব স্থাণীয় সংস্থার বিরুদ্ধে মামলাও করেছি। আবার ট্রেন আসার সময় সাইরেন বাজে গেটগুলোতে। গাড়ির ড্রাইভার সেটাকে ওভারলুক করে দ্রুত লাইন ক্রস করার চেষ্টা করায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। এতে অনেক সময় গাড়ির যাত্রীর মৃত্যুর ট্রেনও লাইন চ্যুৎ হয়। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। সরকারী সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়, মানুষের প্রাণহানী ঘটে। মন্ত্রী জানান, মীরসরাইয়ের দুর্ঘটনার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট গেট ম্যানকে গ্রেপ্তার করেছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে বেরিয়ে আসবে প্রকৃত ঘটনা। রলওয়ের তথ্য অনুযায়ী-বর্তমানে সারা দেশে তিন হাজার ১৫০ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। আছে ২ হাজার ৮৫৬ টি লেভেলক্রসিং। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬১টি বৈধ। আর অবৈধ রেভেল ক্রসিং ১ হাজার ৪৯৫ টি। বর্তমানে এসব ক্রসিং এর মাত্র ৭২৯টিতে গেটম্যান থাকলেও ২ হাজার ১২৭টিতে গেটম্যান নেই। অর্থাৎ রক্ষীবিহিন প্রায় ৭৫ শতাংশ গেট। অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ের বেশির ভাগেই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) রাস্তা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App