×

জাতীয়

বাংলাদেশ-ভারত জেআরসি বৈঠক নিয়ে ধোঁয়াশা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২২, ০৮:৩৪ এএম

বাংলাদেশ-ভারত জেআরসি বৈঠক নিয়ে ধোঁয়াশা

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। দিল্লির তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনো জবাব না পাওয়ায় কবে নাগাদ এই বৈঠকটি হতে পারে তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি ঢাকার যৌথ নদী কমিশনের দপ্তরও। তবে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনের আগে দুই দেশের নদী নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকটি আয়োজনের চেষ্টা চলছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন বছর পর আগামী সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত যাওয়ার কথা। তার আগে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে একের পর এক বৈঠক চলছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে দুই শীর্ষ নেতার যৌথ ঘোষণাপত্র তৈরির আগে। তার আগে দুদেশের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক চাইছে ঢাকা। সেই মর্মে মোদি সরকারকে অনুরোধপত্রও দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। কিন্তু দিল্লি এখনো কিছু জানায়নি। দুদেশের চলমান সোনালি অধ্যায়ের মধ্যেও বৈঠক না হওয়াকে বাঁকা চোখে দেখছেন কেউ কেউ।

সম্প্রতি সিলেট অঞ্চলে ঘন ঘন বন্যা বিষয়ে এক আলোচনায় যোগ দিয়ে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম জানান, আগামী নির্বাচনের আগে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে অন্তত একটি জেআরসি বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতি বছর জেআরসির বৈঠক না হলেও অন্তত দুই বছর পরপর যাতে বৈঠকটি হয় সে বিষয়ে চেষ্টা চলছে। তার মতে, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী থাকলেও বর্তমানে ১৫-১৬টি নদীর তথ্য নেয়া হয়। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় এখন থেকে ৫৪টি নদীর তথ্যই নেয়া দরকার বলে জানান তিনি। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দেখছেন। আশা করছি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করেই তিনি তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করে শেষ হাসি হাসবেন। এ সময় গঙ্গা চুক্তি নিয়েও নতুন করে আলোচনার ইঙ্গিত দেন উপমন্ত্রী।

জানতে চাইলে যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মো. মাহমুদুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আগামী আগস্টে জেআরসির বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৈঠকের বিষয়ে দিল্লি কিছু জানিয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, এখনো ওইভাবে কিছু জানায়নি। তবে শোনা যাচ্ছে আগস্টে বৈঠক হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানির বিষয়টি দেশের আবেগের সঙ্গে যুক্ত। সংযোগের ক্ষেত্রে যেমন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতিতে লাভবান হয় নয়াদিল্লি, তেমনই পানির যে কোনো চুক্তিতে লাভবান হওয়ার কথা বাংলাদেশেরও। বন্যা, ঢল, পানি বণ্টন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের যে উদ্বেগ রয়েছে, তা কমিশনের বৈঠকে তুলে ধরলে লাভবান হবে ঢাকা। এটাও মনে রাখা হচ্ছে, শেখ হাসিনার ভারত সফরের পরপরই জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন। তারপরই বাংলাদেশ ধীরে ধীরে জাতীয় নির্বাচনের আবহাওয়ায় ঢুকে যাবে। বহু দিন নদী কমিশনের বৈঠকও হয়নি। এদিকে ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার মুখে। তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে দীর্ঘসূত্রতা। এছাড়া খোয়াই, ধরলা, দুধকুমার, মনু, মুহুরীর মতো নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়েও আলোচনা বকেয়া রয়েছে।

সূত্রের খবর, জুনের শেষে দুদেশের মধ্যে ‘লাইন অব ক্রেডিট’-এর পর্যালোচনামূলক বৈঠক হয়েছে। ভারত তিন দফায় কম সুদে ৭৩৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণদানের কথা ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংযোগ পরিকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে এই টাকা কাজে লাগানো হচ্ছে। কত অর্থ এ পর্যন্ত দেয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ তার কতটা কাজে লাগিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হয়েছে ওই বৈঠকে। রেল, বিদ্যুৎ, সীমান্ত রক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়েও দ্বিপক্ষীয় স্তরে বৈঠক হয়েছে। এ রকম সুসম্পর্কের মধ্যেই সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে আম পাঠানোর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাকে চিঠি লিখে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে সেপ্টেম্বরে আমন্ত্রণ জানান মোদি। কয়েকদিন আগে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য সাড়ে সাতশ কেজি আনারস উপহার পাঠিয়েছেন।

এমন আবহে গেল ১৯ জুন নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত সপ্তম যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গুয়াহাটিতে একটি নদী সেমিনার হয়। দুই আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন যোগ দিয়েছিলেন। সে সময় ড. মোমেন জানিয়ে ছিলেন, এ মুহূর্তে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠকের জন্য ভারত প্রস্তুত নয়। তবে তিনি এও বলেছিলেন, দুই দেশ পাশাপাশি থাকলে সমস্যা থাকে, তার সমাধানও থাকে। তবে সুখের বিষয় হচ্ছে ভারত সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা বা উত্তেজনা না হয়। তিনি বলেন, আমাদের যেসব অমীমাংসিত ইস্যু আছে, সেগুলো নিয়ে আলাপ হয়েছে। বাংলাদেশের পাটের ওপর ডাম্পিং তুলে নেয়া, নদী, সীমান্তসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে। এর মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে নতুন একটি বিষয় এসেছে। যৌথ নদী কমিশন জেআরসি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জেআরসির মিটিং হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম। আসামে তাদের সঙ্গে আলাপ করেছিলাম। জেআরসির বৈঠকের জন্য ভারত প্রস্তুত নয়। জেসিসি বৈঠকের আগে জেআরসির বৈঠক না হলেও পানি বণ্টন ইস্যুতে আলোচনা হবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের অনেক নদী নিয়ে আলাপ আছে। ফেনী আছে, কুশিয়ারা আছে, সেগুলো নিয়ে আলাপ করব। জেআরসি না হলেও আগেও আলাপ করেছি।

এদিকে, গঙ্গা চুক্তির ২৬ বছর পার হওয়ার পর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, চার বছর পর এই চুক্তির ভবিষ্যৎ কী হবে। প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে গঙ্গা চুক্তি হয়। বাকি আছে চার বছর। ১২ বছর আগে চূড়ান্ত হওয়া তিস্তার পানি ভাগাভাগির চুক্তি আজো সই হয়নি ভারতের কারণে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন চার বছর পর গঙ্গা চুক্তির ভবিষ্যৎ কী হবে-তা নিয়ে ভাবনা শুরু হয়ে গেছে সরকারের ভেতরে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার মধ্যে গঙ্গার পানি নিয়ে যে চুক্তিটি সই হয়েছিল তাতে মধ্যস্থতা করেছিলেন ভারতের প্রভাবশালী বাম রাজনীতিক জ্যোতি বসু। তিনি এখন পরলোকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়াও এখন অশীতিপর। রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। তবে বাংলাদেশে নেতৃত্ব শেখ হাসিনার হাতে আছে। দুই দেশের সরকারেরই দাবি, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের স্বর্ণযুগ চলছে এখন। তবু পানি ভাগাভাগিসহ নানা ইস্যুতে খানিকটা অস্বস্তিও আছে। এর বড় কারণ, চূড়ান্ত হওয়ার পরও তিস্তার পানি ভাগাভাগির চুক্তি স্বাক্ষরে ব্যর্থতা। এই বিবেচনা থেকেই গঙ্গা চুক্তি নিয়ে কী করা যায়, সে বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সরকার।

গঙ্গা চুক্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেছেন, আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি। বর্তমান চুক্তিটি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা যে সুপারিশ করবেন, তার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। বাংলাদেশ ও ভারত শুকনো মৌসুমের পাঁচ মাস (জানুয়ারি থেকে মে) ফারাক্কা বাঁধে প্রাপ্ত গঙ্গার পানি ভাগাভাগির জন্য ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তিটি স্বাক্ষর করে। বিশেষজ্ঞদের হিসাবে এই চুক্তির পুরো সুফল বাংলাদেশ পায়নি। এ কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উভয় তরফে চুক্তিটি পর্যালোচনা করা জরুরি। বর্তমান চুক্তিতেই এমন বিধান আছে বলে তারা জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App