×

সাহিত্য

সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সমাবেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২২, ১০:৫৬ পিএম

সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সমাবেশ

দেশ জুড়ে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, অব্যাহত শিক্ষক নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, দেশে এখন নড়াইল সিন্ড্রোম চলছে। ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। যে স্লোগানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল তা আর থাকছে না। কারণ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক হীন স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত অবমাননা করা হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে। এসব ঠেকাতে সারা দেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নইলে সমাজ বেদখল হয়ে যাবে।

শুক্রবার (২৯ জুলাই) বিকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক মঞ্চ’ আয়োজিত ‘শিক্ষা-সংস্কৃতি-মনুষ্যত্ব রক্ষায় রুখো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস’ শীর্ষক প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের চেয়ারপারসন মাহফুজা খানম, প্রগতি লেখক সংঘ’র সহ-সভাপতি শামসুজ্জামান হীরা, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জাকির হোসেন, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্রর রঘু অভিজিৎ রায়, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের শফিকুর রহমান শহীদ। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন, প্রগতি লেখক সংঘ’র সভাপতি গোলাম কিবরিয়া পিনু, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের আলী আহমেদ নান্টু, জাহিদ মোস্তফা, সুমন সরদার, আনোয়ার কামাল, স. ম. কামাল, রেজওয়ানুল করিম সুমন।

শুরুতে ‘এ মাটি নয় জঙ্গিবাদের, এ মাটি মানবতার’ এবং ‘এ লড়াই বাঁচার লড়াই, লড়াইয়ে জিততে হবে’ দু’টি দলীয় গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। এরপর সমসাময়িক বিষয়ের উপর নির্মিত পথনাটক পরিবেশন করে প্রাচ্যনাট। এছাড়া, অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটা সময় জুড়ে রং-তুলিতে প্রতিবাদ শিরোনামে প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কনে অংশগ্রহণ করেন দেশের প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী জাহিম মোস্তফা, রাশেদুল হুদা, কিরীটি রঞ্জন বিশ্বাস, সোহাগ বায়েজিদ, টাইগার নাজির এবং সনাতন মালো। প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।

এম এম আকাশ বলেন, দেশে এখন নড়াইল সিন্ড্রোম চলছে। পঞ্চগড়েও শিক্ষকের উপর হামলা করার চেষ্টা চলছে। ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। যে স্লোগানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল তা আর থাকছে না। যে স্লোগান বঙ্গবন্ধুর স্লোগান বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ থাকবে না। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন সবসময় আমরা রাষ্ট্রে দিকে তাকিয়ে থাকি। কিন্তু এভাবে তাকিয়ে থাকলে এসব সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আটকানো যাবে না। ১৯৭৪ সালে ১৪ শতাংশ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ছিল, এখন তা ৮ শতাংশে নেমে এসেছে এমন মন্তব্য করে এই অর্থনীবিদ বলেন, এসব ঠেকাতে সারা দেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নইলে সমাজ বেদখল হয়ে যাবে। এম এম আকাশ বলেন, আওয়ামীলীগ পাঠ্য পুস্তকে যেমন আপোস করেছে তেমনি রাজনৈতিক মাঠেও সেভাবে আপস করবে। এ থেকে বাচতে হলে এবং রাষ্ট্র রক্ষা করতে হলে সবাইকে এক সাথে প্রতিবাদ করতে হবে।

মাহফুজা খানম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে যে জাতির জন্ম হয়েছিল এবং যে রাষ্ট্রের ভিত্তি ছিল চার মূল নীতি, তা থেকে রাষ্ট্র প্রতিনিয়ত সরে যাচ্ছে। শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত অবমাননা করা হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে। এখানে মূল্যবোধ প্রতিদিন ভেঙে পড়ছে। এসব দুর্বিপাকে পড়া জাতিকে উদ্ধরে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরই নেতৃত্বে এ আন্দোলনকে সুসংহত করতে হবে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমার ক্রমেই অমানবিক হয়ে যাচ্ছি। মুক্তিবুদ্ধি চর্চার পরিবেশ এখানে ভূলণ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে একই কৌশল অবলম্বন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ম অবমাননার ভুয়া অভিযোগ তুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই অপরাধীরা একই কৌশল অবলম্বন করলেও সে কৌশল ঠেকাতে বারবারই ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ ও প্রশাসন। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তাদেরকে এসব অপকর্মের সহযোগীর ভ‚মিকা পালন করতে দেখা গেছে। এছাড়া অধিকাংশ অপরাধের ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা গেছে। শুধু হিন্দু বা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের নির্যাতনই নয়, গত কয়েক বছরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে শিক্ষক লাঞ্ছনা, নির্যাতন, নিপীড়নের ঘটনাও।

বক্তারা আরো বলেন, এতোগুলো অমানবিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপরাধ ঘটানো হলেও, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দাবিদার সরকার ক্ষমতায় থেকেও সেসব ঘটনার কোনটিরই সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন করতে পারেনি। রামু, নাসিরনগর বা মালোপাড়া, শাল্লা, কুমিল্লার নানুয়ার দীঘিরপাড় বা সম্প্রতি নড়াইলের লোহাগড়ায় যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতর ঘটনা ঘটেছে তার কোনটিরই প্রকৃত অপরাধী আজও ধরা পড়েনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চুনোপুটি বা তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছে সরকার। এই বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির কারণেই অপরাধীরা নিশ্চিন্তে নতুন নতুন অপরাধ করার সাহস পায়।

আলোচনা শেষে গণসঙ্গীত পরিবেশন করে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের শিল্পীরা। বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। গণসঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। গণসঙ্গীত পরিবেশন করে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। এছাড়া, সবশেষে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী পথনাটক ‘অজ্ঞাতনামা’ পরিবেশন করে উদীচী কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগ। নাটকটি রচনা করেছেন উদীচী’র সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী এবং নির্দেশনা দিয়েছেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি প্রবীর সরদার।

রাজধানী ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি জেলায় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আজ শনিবার কয়েকটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। কর্মসূচির শেষ দিন ৩১ জুলাই রোববার ঢাকায় সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এবং প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App