×

জাতীয়

বাঘ সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২২, ০৩:৪৪ পিএম

বাঘ সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় তিন বছর মেয়াদী ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনে তৃতীয়বারের মত ক্যামেরা ট্র্যাপিং এর মাধ্যমে বাঘের জরিপ পরিচালনা, বাঘের শিকার প্রাণী- হরিণ ও শূকরের সংখ্যা গণনা, সুন্দরবনের লোকালয় সংলগ্ন ৬০ কিলোমিটার এলাকায় নাইলনের ফেন্সিং বা বেষ্টনী তৈরিসহ বাঘ সংরক্ষণ ও গবেষণা সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে। বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন সংরক্ষণে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

শুক্রবার (২৯ জুলাই) বিশ্ব বাঘ দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে বন অধিদপ্তরে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে সরকারি বাসভবন হতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ এবং অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন প্রমুখ।

তিনি বলেন, ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ সমৃদ্ধ ১৩টি দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সম্মেলনে বাঘ সংরক্ষণকে বেগবান করার জন্য তৈরি ঘোষণাপত্রের আলোকে প্রতি বছর ২৯শে জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব বাঘ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘বাঘ আমাদের অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার’, যা সময়োপযোগী বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০১৭-২০১৮ সালে পরিচালিত জরিপের তথ্যানুযায়ী আমাদের সুন্দরবন অংশে রয়েছে প্রায় ১১৪টি বেঙ্গল টাইগার, এবং ২০২০-২০২১ সালের জরিপ অনুসারে ভারতের সুন্দরবন অংশে আছে প্রায় ৯৬টি বাঘ। আইইউসিএন গ্রোবাল স্পিশিজ রেড লিস্ট-২০২০ অনুসারে, বিশ্বে বাঘের সংখ্যা প্রায় ৪,৪৮৫টি। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হল, সারাবিশ্বে বন উজাড় ও অবৈধ শিকারের ফলে বেঙ্গল টাইগার বিশ্বে “বিপন্ন” প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

সুন্দরবনের বাঘ রক্ষার জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ধারা-৩৬ তে বাঘ হত্যার জন্য দুই বছর এবং সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড করা এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বাঘ হত্যাকে জামিন অযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে। বাংলাদেশ টাইগার এ্যাকশন প্ল্যান (২০১৮-২০২৭) প্রণয়ন করা হয়েছে। বাঘের অবাধ বিচরণ ও বংশবিস্তারের লক্ষ্যে সুন্দরবনের ৫২ শতাংশকে এলাকাকে রক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

বনমন্ত্রী বলেন, বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে গঠিত ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের কর্মতৎপরতার ফলে লোকালয়ে বাঘ আসা মাত্র সংলগ্ন গ্রামগুলোতে দ্রুততম সময়ে তা জানানো এবং সে অনুযায়ী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে। সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জে স্মার্ট পেট্রোলিং পদ্ধতি ও ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর শিকার, পাচার ও নিধন বন্ধের কার্যক্রম চলমান আছে।

তিনি আরও বলেন, ‘অপরাধ উদঘাটনে তথ্য প্রদানকারীকে পুরস্কার প্রদান বিধিমালা, ২০২০’ জারি করা হয়েছে। এই বিধিমালায়, বাঘের ক্ষেত্রে, বনাঞ্চলের ভেতরে অপরাধী ধৃত হলে প্রদত্ত তথ্যের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং বনাঞ্চলের বাইরে ধৃত হলে প্রদত্ত তথ্যের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক পুরস্কারের বিধান রাখা হয়েছে। ‘বন্যপ্রাণীর আক্রমণে জানমালের ক্ষতিপূরণ বিধিমালা ২০২১’ অনুযায়ী বর্তমানে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে তিন লাখ এবং আহত ব্যক্তির পরিবারকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হচ্ছে। বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর জন্য সুপেয় মিঠাপানির চাহিদা মেটাতে সুন্দরবনে ৮০টি পুকুর নতুন খনন ও বিদ্যমান পুকুর সংস্কারের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া, অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু। বিষয় ভিত্তিক উপস্থাপনা করেন ড. এম মনিরুল এইচ খান অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App