×

জাতীয়

প্রশ্নবিদ্ধ দেশের প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২২, ০৮:০০ এএম

প্রশ্নবিদ্ধ দেশের প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি!

ফাইল ছবি

# খোদ রাজধানীতেই অসম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ, বন্যার কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের তথ্যে ঘাটতি

রাজধানীর অদূরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের গাজেন্দা গ্রামের বাসিন্দা সোনিয়া আক্তার। তিনি রাজধানীর একটি সরকারি কলেজের স্নাতক সম্মান শ্রেণির শিক্ষার্থী। জনশুমারির নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও গাজেন্দা গ্রামে যাননি জনশুমারি ও গৃহগণনার কোনো লোক। পরবর্তীতে সোনিয়া আক্তারের চাপাচাপিতে নির্ধারিত সময়ের পর তার বাড়ি গেলেও আদৌও তাদের তথ্য এই গণনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে গাজেন্দা গ্রামের মানুষ। রাজধানীর অদূরেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে বন্যাকবলিত অঞ্চলে ঘরে ঘরে গিয়ে আদৌও কোনো তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

মানিকগঞ্জের ধল্লা ইউনিয়নের এই গ্রামই নয়, এমনকি রাজধানীর বনানীর বাসিন্দা এক বিশিষ্ট ব্যক্তির বাসায়ও তথ্য সংগ্রহকারীরা যাননি বলে নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি। আরো আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর গোপীবাগের সৌমিত্রের বাসায়। তিনি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠছেন বাসায় : এমন সময় জনশুমারির দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেন, আপনার বাসায় কয়জন থাকেন। জবাবে সৌমিত্র বলেন, আমি আর আমার বোন। এই তথ্য নিয়ে দ্রুত চলে যান জনশুমারির তথ্য সংগ্রহকারীরা। এখন সৌমিত্রের প্রশ্ন- তিনি কী করেন, কোন ধর্মের, বিবাহিত নাকি অবিবাহিত- এসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ছাড়া কীভাবে হলো এই জনশুমারি? এমন প্রশ্ন শুধু সৌমিত্রের নয়, হাজারো মানুষের। রাজধানীতে এমন তাড়াহুড়ো করে অসম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহের ঘটনা অহরহ। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অবহেলার বিষয়ে পোস্টও দিয়েছেন। এছাড়া জনশুমারির জন্য বেছে নেয়া সময় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেজ্ঞরা।

বিশেজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জনসংখ্যার সঠিক হিসাব। দশ বছর পর এবার দেশের প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনায় সঠিক তথ্য উঠে আসেনি বলে অনেকের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে প্রাথমিক ফলাফলে জনসংখ্যার সঠিক হিসাব উঠে আসেনি। এছাড়া যেসব তথ্য দেয়া হচ্ছে এসব তথ্য আরো যাচাইবাছাই করে দেখা উচিত। আর বন্যার কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে তথ্য সরবরাহকারীরা যাননি বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর যেসব এলাকায় গেছেন সেসব ক্ষেত্রেও অসম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, জনশুমারিতে কারো বাদ পড়ার নিয়ম নেই। সবাইকে গণনার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিক ফলাফলে যেসব মানুষ গণনা থেকে বাদ পড়েছেন, তাদের তো নতুন করে তালিকাভুক্তি করার সুযোগ নেই। এছাড়া কী সংখ্যক মানুষ তালিকার বাইরে রয়েছেন তারও সঠিক হিসাব নেই। এই কারণে অনুসন্ধান করে বের করতে হবে কত সংখ্যক মানুষ জনশুমারি থেকে বাদ পড়েছেন এবং তার একটা পার্সেন্টিজ বের করতে হবে। শুমারি পরবর্তী তথ্য যাচাই (পিইসি) রিপোর্ট নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পিইসি রিপোর্টে বাদ যাওয়াদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাহলে তিন মাস পরের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আমরা জনসংখ্যার সঠিক হিসাব পাব। সেই সঙ্গে কোয়ালিটি ডাটা সংরক্ষিত থাকবে। এতে আগামীর পরিকল্পনা নিতে আমাদের সহজ হবে বলে মত দেন এই জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ।

গত বুধবার দেশের প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। গত ১৫ জুন সারাদেশে একযোগে জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রম শুরু হয়। ২১ জুন সে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে তা ২৮ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রাথমিক ফলাফলে ১১ বছরে দেশের জনসংখ্যা দুই কোটি ১১ লাখ বেড়ে ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন হয়েছে। এক দশক আগের মতই দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো গ্রামে বাস করে। আর শহরের জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় দুই কোটি। শুমারির তথ্য অনুযায়ী দেশে জনসংখ্যার বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার কমছে। এবারের শুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২২ শতাংশ, যা ২০১১ সালে ছিল ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ২০০১ সালে ছিল ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশের পর এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, প্রাথমিক ফলাফলে যেসব বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে- বিশেষ করে বিভিন্ন জায়গায় যেসব মানুষ এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। পরবর্তীতে জনশুমারি পরবর্তী তথ্য যাচাই (পিইসি) করে চূড়ান্ত রিপোর্টে তথ্যগুলো যোগ করতে হবে। এর আগের শুমারিতেও আমরা দেখেছি পিইসি রিপোর্টে জনসংখ্যা অনেক বেড়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App