×

মুক্তচিন্তা

যৌননিপীড়নে জড়িতদের কোনো ছাড় নয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২২, ০২:০০ এএম

যৌননিপীড়নে জড়িতদের কোনো ছাড় নয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি মুক্তবুদ্ধি চর্চার জায়গায় ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসে হাঁটবে, ঘুরে বেড়াবে, গ্রুপভিত্তিক জ্ঞানের আদান প্রদান করবে- এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়। এর জন্য কোনো ছাত্রী তার বন্ধুর সঙ্গে ক্যাম্পাসে ঘুরছে দেখে, সে অজুহাতে তাকে যৌননিপীড়ন করা হবে এবং তা মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হবে- এটা কেমন ধরনের অরাজকতা? সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. আজিম হোসেন এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নুরুল আবছার বাবুসহ পাঁচজন মিলে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসেই যৌননিপীড়ন করে তা ভিডিওতে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার মতো নিন্দনীয় এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য ঘটনা ঘটিয়েছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে পুরো দেশের সুধীজন এবং জনসাধারণের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে আবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন ছাত্র নামধারী জানোয়ার প্রকাশ্যে যৌননিপীড়ন করবে এবং তা ভিডিওতে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই যৌননিপীড়নের ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকায় পাঁচজনের সবাইকে গ্রেপ্তার করে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চারজনের ছাত্রত্ব আজীবনের জন্য বাতিল করে দিয়েছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে বেশ হার্ডলাইনে তা ঘটনা ঘটার পর থেকেই দৃশ্যমান হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো কেন এসব কোমলমতি ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় এমন জঘন্য অপরাধ করার সাহস পেল। এদের পেছনে কারাই বা ইন্ধন দিল। এই বিষয়গুলো গভীরভাবে চিন্তা করে দেখতে হবে। গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ৫ জনের মধ্যে দুজন ছাত্রলীগের কর্মী। এ বিষয়ে অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যৌননিপীড়নকারীদের দুজন ছাত্রলীগ কর্মী হলেও তারা তাদের কখনো সাপোর্ট করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এখন সবার মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ছাত্রলীগকে সমর্থন করে বলেই কী তারা ক্যাম্পাসে এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস পেল? গ্রেপ্তারকৃতরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এতক্ষণ পর্যন্ত একজন ছাত্রীকে তার বন্ধুর সামনে যৌননিপীড়ন করে আবার ভিডিও ধারণ করল তখন ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগ নেতারা কোথায় ছিল? কেনই বা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীরা এ ঘটনাটি রুখে দিতে পারল না? প্রশ্ন থেকে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এলাকায় কেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা এত ঢিলেঢালা? তা না হলে এতক্ষণ পর্যন্ত একজন ছাত্রী তার ক্যাম্পাসেই যৌননিপীড়নের শিকার হলো, কেউ এগিয়ে এলো না, এটা কীভাবে মেনে নেবে দেশের সাধারণ মানুষ? একজন অভিভাবক তার মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে কীভাবে নিশ্চিন্ত থাকবে? প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রকৃতপক্ষে একজন শিক্ষার্থী তার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে শতভাগ নিরাপদ ভেবেই দিনরাত যে কোনো সময় যে কোনো কিছুর জন্য তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে পারে কিংবা কথা বলতে পারে, সেখানে অন্য কারো নাক গলানোর অধিকার নেই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা এমন যে, এখানে জীবনের অনেক কিছু শেখার আছে এবং ভবিষ্যতে জীবন গঠনের জন্য এখানে রয়েছে জ্ঞান আহরণের অবারিত পথ। ফলে এখানে একজন ছাত্রী কিংবা ছাত্র তার ব্যক্তিগত জীবন কেমন কাটাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা, তার বন্ধুর সামনে তাকে যৌননিপীড়ন করা, এটা কোনো সভ্য মানুষের কাজ নয়। এমন কাজ যেসব ছাত্র করেছে তারা পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কালিমালেপন করেছে। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে শতভাগ হার্ডলাইনে গিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উচিত এসব চিহ্নিত অপরাধীকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার জন্য জোর দাবি তোলা। সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও উচিত হবে শুধু আজীবন বহিষ্কার নয়, গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের প্রকাশ্যে যৌননিপীড়নের শাস্তি যাতে কঠিন থেকে কঠিনতর হয় সে ব্যবস্থা করা, তাহলেই কেবল ভবিষ্যতে কোনো ছাত্র, ছাত্রীদের যৌননিপীড়ন করার সাহস পাবে না। আমরা প্রত্যাশা করব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌননিপীড়নের জঘন্য ঘটনার হোতাদের সবাইকেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠিন শাস্তির আওতায় আনবে এবং যৌননিপীড়নের যে কলঙ্কের দাগ লেগেছে তা মোচন করবে। রতন কুমার তুরী লেখক ও শিক্ষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App