×

জাতীয়

জ্বালানি নিয়ে হুলুস্থূল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২২, ০৮:০৯ এএম

জ্বালানি নিয়ে হুলুস্থূল

ফাইল ছবি

এক মাসের তেল মজুত, অর্ডার ৬ মাসের > রিজার্ভ কমায় আমাদের ঝুঁকি নেই

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সবচেয়ে বেশি আঁচ লাগে বিশ্বের জ্বালানি খাতে। এর উত্তাপ এসে পড়ে বাংলাদেশেও। জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ, যার মধ্যে রয়েছে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং, সপ্তাহে একদিন পাম্প বন্ধ রাখা। দেশে মোট জ্বালানির মধ্যে ডিজেল ৭৩ শতাংশ, পেট্রোল ৬ শতাংশ, অকটেন ৪ দশমিক ৮ শতাংশ ও ফার্নেস অয়েল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যবহার হয়। বর্তমানে দেশে দৈনিক ডিজেলের চাহিদা প্রায় ১৩ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন, ফার্নেস অয়েলের চাহিদা ২ হাজার ৫০০ টন, অকটেনের চাহিদা ১ হাজার ৩০০ টন, পেট্রোলের চাহিদা ১ হাজার ৪০০ টন আর জেট ফুয়েলের চাহিদা ১ হাজার ৪০০ টন। জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। ডলার সংকটে ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারা এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য এই সংকট তৈরি করেছে। বিপিসি বলছে, মজুত দিয়ে ৩২ দিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব। রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ঝুঁকি দেখছেন না প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। আর চাহিদার চেয়ে পেট্রোল-অকটেন বেশি মজুত রয়েছে উল্লেখ করে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মূলত, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে জুলাই থেকে কৃচ্ছ্রতার পথে হাঁটতে শুরু করে সরকার। সংকটের জন্য বিশ্ববাজারে তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির চড়া দামকে দায়ী করছে সরকার। ডিজেল বাঁচাতে তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আপাতত বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে বিদ্যুৎ ঘাটতিতে লোডশেডিং বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের সংকট তৈরি হয়েছে বলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অন্তত একটি পেট্রোল পাম্পে সীমিত আকারে তেল বিক্রির নোটিস দেয়া হয়। তবে বিপিসি চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ জানিয়েছেন, এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত তারা নেননি। যারা এ রকম নোটিস দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এক মাসের তেল মজুত, অর্ডার রয়েছে আরো ৬ মাসের : দেশে ৩২ দিনের ডিজেল এবং ৯ দিনের অকটেন মজুত আছে। এছাড়া ৬ মাসের তেল অর্ডার করা আছে বলে জানিয়েছেন বিপিসি চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ। গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে সংবাদ সম্মেলনে বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ তেল রয়েছে এবং আমদানির পথে রয়েছে, তাতে ছয় মাসের জ্বালানি নিশ্চিত রয়েছে। আর কোনো তেল আমদানি না করলেও দেশে ৩২ দিনের ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল রয়েছে। এর বাইরে ৪৪ দিনের জেট ফুয়েল রয়েছে।

তিনি জানান, বর্তমানে দেশে ডিজেল ৩১ হাজার ৮৩৫ টন, অকটেন ১২ হাজার ২৩৮ টন, পেট্রোল ২১ হাজার ৮৩৩ টন, জেট ফুয়েল ৬২ হাজার ৮৯১ টন ও ফার্নেস অয়েল ৮৫ হাজার ৪১ টন মজুত রয়েছে। বিপিসি আর তেল আমদানি না করলেও ডিজেল দিয়ে চলবে ৩২ দিন, অকটেন দিয়ে ৯ দিন, পেট্রোল দিয়ে ১৫ দিন, জেট ফুয়েল দিয়ে ৪৪ দিন আর ফার্নেস অয়েল দিয়ে ৪৪ দিন। কিন্তু বিপিসি কি আমদানি আজ বন্ধ করে দেবে? আমদানি বন্ধ করবে না। বিপিসির আগামী ছয় মাসের আমদানি পরিকল্পনা কনফার্ম করা আছে। আগামী এক থেকে দুই দিনের ভেতর আরো ৫০ হাজার টন অকটেন আসবে বলে তিনি জানান। সেই সঙ্গে দুদিনের মধ্যে ৩০ হাজার টন ডিজেলের একটি চালান আসছে বলে তিনি জানান।

চাহিদার চেয়ে বেশি পেট্রোল-অকটেন মজুত : চাহিদার চেয়ে বেশি পেট্রোল ও অকটেন দেশে মজুত আছে উল্লেখ করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল সবসময় মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় থাকে। আমি জনগণকে অনুরোধ করব, আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না।

তিনি বলেন, মহামারি ও যুদ্ধ নিয়ে সারা বিশ্ব খাদ্য, জ্বালানিসহ নানা সংকটে ভুগছে। এসব সংকট মোকাবিলায় আগাম পদক্ষেপ নিয়েছি। খাদ্য ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। ব্যক্তিগত সঞ্চয় বাড়াতে হবে। সব প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।

রিজার্ভ কমায় আমাদের ঝুঁকি নেই : করোনা অতিমারির পরে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভ কিছুটা কমে গেলেও তাতে ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।

অসত্য তথ্য পরিবেশন করা হলে দুঃখ হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র সিওডি হওয়ার আগে একটা পয়সাও দেয়া হয় না, সুযোগও নেই। মেঘনা ঘাট নিয়ে যেগুলো বলা হচ্ছে, এগুলোর প্রতিটির সিওডি ডেট বদলে দেয়া হয়েছে। এই সংকটে প্রত্যাশিত তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্র যতক্ষণ পর্যন্ত সে আসবে না, ততক্ষণ আমি একটা পয়সা তাকে দেব না। তাহলে কেন ভৌতিক গল্প বানানো হচ্ছে। সত্য বলুন। যদি ভুল হয়ে থাকে আমরা মাথা পেতে নেব।

তিনি বলেন, যে কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্বাভাবিক খরচের ৬৫ শতাংশ ব্যয় হয় জ্বালানি। ৩০-৩৫ শতাংশ হলো ক্যাপিটাল। ইনভেস্টমেন্ট কস্ট। বিশ্বব্যাপী একটি স্বীকৃত পথ হলো ৩৫ শতাংশ যেটা আমি বিনিয়োগ করেছি, সেই রি-পেমেন্ট হলো ক্যাপসিটি চার্জ। এখন আমি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখলাম, কারণ আমি এখন খরচ বাড়াতে চাচ্ছি না। তাহলে ৩০-৩৫ শতাংশ খরচ আমার হবে, ৬৫ শতাংশ আমি সাশ্রয় করছি।

সংকট দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা : জ্বালানি তেলের সরবরাহ ও মজুত নিয়ে একটি মহল নেতিবাচক প্রচার চালাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, দেশে ব্যবহৃত পাঁচ ধরনের জ্বালানি তেলের মধ্যে ডিজেল, জেট ফুয়েল ও ফার্নেস অয়েল আমদানি হয়। এছাড়া দেশে পেট্রোল রিফাইন হয়। এর সঙ্গে অকটেন বুস্টার মিশিয়ে উৎপাদন হয় অকটেন। বুস্টার হিসেবে সামান্য পরিমাণ অকটেন আমদানি করা হয়। যেহেতু এ দুটো দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে, তাই সংকটের আশঙ্কা নেই। এ ব্যাপারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. ম তামিম ভোরের কাগজকে বলেন, আমি কোনো শঙ্কা দেখছি না। এক মাসের মজুত যথেষ্ট। এর মধ্যে তো ছয় মাসের আমদানির অর্ডার দেয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App