সাংবাদিকের সঙ্গে ইউএনওর এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২২, ১২:২৬ এএম
আমলাদের অসহিষ্ণু ও অপেশাদার আচরণ দিন দিন বাড়ছে। কিছু আমলার আচরণে বিব্রত প্রশাসনও। বিশেষ করে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আমলাদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। গত ২১ জুলাই ‘নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট। প্রকাশিত সংবাদে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরায় ঢাকা পোস্টের কক্সবাজার প্রতিনিধির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মোবাইল ফোনে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কায়সার খসরু। গালাগালির অডিও রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনার তিন দিন পর সোমবার ওই ইউএনওকে ওএসডি করা হয়েছে। সাংবাদিকের সঙ্গে ইউএনওর ভাষা ব্যবহারকে ‘মাস্তানদের চেয়েও খারাপ ভাষা’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তার এমন দাম্ভিক আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। জনপ্রশাসনের কর্মীরা যে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের আচরণ থেকে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ইউএনও বা অন্য কোনো সরকারি কর্মকর্তার অসৌজন্যমূলক আচরণ কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা নতুন নয়। প্রায়ই এমন খবর আমরা দেখছি। মানবাধিকার ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে কয়েক বছর ধরে সরকারি অফিসে দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনা বেড়েছে। সংগঠনগুলো বলছে, ‘আমলাদের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করার কারণেই তারা সাংবাদিকদের ওপর চটে আছেন। সাংবাদিক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত আমলাদের কারো বিচার না হওয়াটাও এ ধরনের ঘটনা বাড়াচ্ছে।’ ২০২০ সালের ১৩ মার্চ বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে মধ্যরাতে অপহরণ ও বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন কুড়িগ্রামের তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা। গত বছর ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ে আটকে রেখে তার ওপর যে নির্যাতন ও হেনস্তা করা হয় তা দেশের সব সাংবাদিকের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ দেশে বরাবরই নানাভাবে হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কাউকে ছাড় না দিয়ে একজন সাংবাদিককে ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখতে হয়। আর তাতেই ক্ষেপে যান সংশ্লিষ্টরা। কখনো জীবন কেড়ে নেয়া, কখনো শারীরিকভাবে হামলা, আবার প্রায়ই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে সাংবাদিকদের। রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আমলা সুযোগ পেলে সাংবাদিকদের নামে মামলা ঠুকে দেয়, হয়রানি করে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু কথাই থেকে যাবে। তাই সাংবাদিকদের রক্ষার জন্য প্রয়োজনে আইন প্রণয়নের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালায় বলা আছে তাকে কর্মকর্তাসুলভ ভদ্র আচরণ করতে হবে। কোনো কর্মকর্তা আচরণবিধি ভঙ্গ করলে বা কারো সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা যাবে। টেকনাফের ইউএনও ওই সাংবাদিকের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা অগ্রহণযোগ্য। আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। দায়ীর শাস্তি হোক। না হয় এমন ঘটনা বারবার আমাদের দেখতে হবে।