×

মুক্তচিন্তা

প্রশংসা ও নিন্দার সমান্তরাল সুফল

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২২, ১২:২৮ এএম

গত ২৪ জুলাই একটি দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম ‘ব্যয় কমাতে নতুন প্রকল্পে লাগাম’; প্রতিপাদ্যের সারাংশ হচ্ছে ‘এ’ শ্রেণির প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত, ‘বি’ শ্রেণির ৬৩৬টি প্রকল্পে ব্যয়ের সরকারি অংশের ২৫ শতাংশ কর্তন এবং ‘সি’ শ্রেণির কতিপয় প্রকল্প হিমাগারে প্রেরণ। নিঃসন্দেহে এসব বর্তমান পরিস্থিতিতে কাক্সিক্ষত পদক্ষেপ। দেশ ও পৃথিবী সংকটে আছে, তবে আমাদের সরকার পূর্বাহ্নে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে বলে শীর্ষ অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদদের প্রশংসা কুড়াচ্ছে। সে দিক থেকে ‘ব্যয় কমাতে নতুন প্রকল্পে লাগাম’ খবরটির উপসংহার হয়তো হতে পারত ‘এই পরিস্থিতিতে আর কী করা প্রয়োজন আর সরকারকে প্রণোদিত করার জন্য কিছু মিষ্টি কথা অন্তত বলা যেত।’ কেননা আর্থিক বা মনস্তাত্ত্বিক উৎসাহ বা প্রণোদনা ছাড়া সামনে এগোবার পথ রুদ্ধ হয়ে যায় তা ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সত্যি। উক্ত পত্রিকায় অপর শিরোনাম, ‘ঢাকায় লোডশেডিং বেশি’। এখানেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। লোডশেডিং কি বর্তমান প্রেক্ষিতে কাম্য পদক্ষেপ? এখানে পরোক্ষ একটা নেতিবাচক ইঙ্গিত আছে। পরের গুরুত্বময় খবর হচ্ছে ‘তুরস্কের সেই ড্রোন কিনছে বাংলাদেশ’। অস্পষ্ট হলেও ইঙ্গিতটা এমন যে দেশের এই সংকটময় মুহূর্তেও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অহেতুক ব্যয়ের পদক্ষেপ। আমার কাছে প্রকল্প ব্যয়ে ক্ষেত্রভেদে লাগাম টানাটা যেমন কাক্সিক্ষত পদক্ষেপ, তেমনি লোডশেডিংও কাক্সিক্ষত পদক্ষেপ, তবে তার ব্যবস্থাপনায় নৈপুণ্যের সংযোগ অত্যাবশ্যক। তুরস্ক থেকে ড্রোন কেনাটাও সঙ্গত। কারণ কিনতে হলে ড্রোনগুলো তুরস্ক থেকেই কেনা উচিত। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের জামাতার প্রতিষ্ঠান বলে নয়, প্রস্তুতকারক কোম্পানিটি দক্ষ এবং তাদের পণ্যের কার্যকারিতা ইতোমধ্যে প্রমাণিত। প্রশ্ন হতে পারে ড্রোন ক্রয় এই দুর্দিনে সঙ্গত ও বিচক্ষণ পদক্ষেপ কি-না? আমি বলব নিঃসন্দেহে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। আমাদের নিকটতম দুই প্রতিবেশীর একটির আস্ফালন লক্ষণীয়। আগ্রাসী মনোভাব দর্শনীয়। ইতোপূর্বে তারা বহুবার আমাদের সীমান্ত রেখা লঙ্ঘন করেছে। তাদের প্রায় ১২ লাখ নাগরিককে আমাদের ভূমিতে ঠেলে দিয়ে আমাদের জন্য বহুমুখী সমস্যা ও সংকট সৃষ্টি করেছে। সমাধানের লোক দেখানো পদক্ষেপ নেবে নেবে করে আমাদেরসহ বিশ্বকে বিভ্রান্ত ও বোকা বানাচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত বিবিধ বর্ণনার মাদক-সামগ্রী আমাদের দেশে পুশ করে আমাদের সম্ভাবনাময় যুবসমাজকে ধ্বংসের শেষ সীমায় পৌঁছে দিচ্ছে। আমাদের সমুদ্রসীমায় মাছ কেড়ে নিচ্ছে। আজ হোক কাল হোক আমরা না চাইলেও তারা আরো আগ্রাসী ভূমিকা নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব তা অনুভব করেছে বলে তিনি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণের পদক্ষেপ নিচ্ছেন। অনেকে অর্থহীন ভাবতে পারেন কিন্তু জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের নৌ ও বিমানবাহিনীকেও সামর্থ্যবান করার এখনই মোক্ষম সময়। তা না হলে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে সমুদ্রে আমাদের যে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা ধরে রাখা কঠিন হবে। এ সরকার বহু জনহিতকর ও দেশ হিতকর কাজ করেছে এবং করছে। কিন্তু যথোপযুক্ত প্রচারণার অভাবে এবং প্রতিপক্ষের হীন প্রচারণার কারণে সেগুলো জনতার উপলব্ধির চত্বরে আলোড়ন বা সম্বিৎ জাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধির প্রকল্প যদি আবশ্যক বিবেচিত হয়, তাহলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটা অত্যাবশ্যক পর্যায়ে ফেলা সঠিক বলতে দ্বিধা নেই। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বেসরকারি পক্ষের সঙ্গে নবতর চুক্তি সম্পাদন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের চুরি ও অপব্যবহার ঠেকালে দিনে অন্ততপক্ষে ২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে। ২০ লাখ ব্যাটারিচালিত যান যদি চালকদের অর্থে বিদ্যুৎ চার্জ হয়, তাহলে সৎ সাধারণ নাগরিকের বোঝা কমবে। এমনকি শিল্প কারখানায় বা বস্তিতে যোগসাজশে সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ করা বাঞ্ছনীয়। জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনে মানবসৃষ্ট সমস্যাগুলোর সময়মতো সমাধান থাকতে হবে। এছাড়া পানি ও গ্যাস ব্যবহারে দুর্নীতি নির্মূল করতে পারলে গ্রাহকরা বর্তমান মুহূর্তে বরং সরকারকে ধন্যবাদই জানাবে। আমাদের সম্পদের অভাব লক্ষণীয়। বিশ্বব্যাংকের দিকে আমাদের ছুটতে হচ্ছে। তবে তাদের শর্তাবলি অনেক সময়ে আমাদের মঙ্গল অপেক্ষা অমঙ্গল বয়ে আনে। সুযোগ বুঝে তারা শর্তাবলির হেরফের ঘটায় ও অহেতুক বৈরী সিদ্ধান্ত দেয়। এমতাবস্থায় বন্ধু রাষ্ট্রগুলো থেকে দ্বিপক্ষীয় ঋণ চুক্তির কথা অনেকে বলেছেন। পূর্বে গৃহীত ঋণগুলোর পুনঃচুক্তি চক্রের সূচনা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। বহু মানুষ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কর এড়িয়ে যায়। এটা বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতি উচ্ছেদে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বিদেশে কর্মসংস্থানে পূর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আমদানি কর্মে যেসব নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হয়েছে সেগুলোও সরকারের দূরদর্শিতার লক্ষণ। মূলত এসব পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কা হবে না। তবে শিক্ষা ব্যবস্থাটা যুগোপযোগী না হলে বর্তমান উন্নয়ন ধারাটা ধরে রাখা যাবে না কিংবা উচ্চ আয়ের দেশে পদার্পণ কঠিন হয়ে যাবে। দেশে যেখানে কারিগরি শিক্ষার প্রসার বাঞ্ছনীয়। এসব করলে আমাদের সংকট আমরাই নিয়ন্ত্রণে রেখে সামনে আগাতে পারব। সরকারের দূরদর্শিতা ও দ্রুত পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করলে তারা হয়তো প্রণোদিত হবে, তবে আমার কাছে মনে হয় শেখ হাসিনার সরকার নিন্দুককেই বেশি ভালোবাসেন। নিন্দুকরাও স্বীকার করবেন যে তাদের নিন্দার ফসল কিন্তু সরকারি পরিকল্পনায় প্রতিনিয়ত প্রতিফলিত হচ্ছে। অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App