×

সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গা সংকট: আইসিজের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২২, ০১:৩৩ এএম

রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে গাম্বিয়ার করা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিজে) এখতিয়ার নিয়ে মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলার প্রক্রিয়া চালিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকল না। এখতিয়ার নিয়ে আইসিজের দেয়া রায় চূড়ান্ত এবং এর বিরুদ্ধে আপিলের কোনো সুযোগ নেই। গত শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত আইসিজে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মনে করে, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান বের করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আমরাও মনে করি, আইসিজের সিদ্ধান্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার হত্যার অভিযানের বিষয়ে জবাবদিহির পথ খুলে দিয়েছে। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে গাম্বিয়া জাতিসংঘের গণহত্যার সনদ ভঙ্গের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে মামলা করেছিল। গাম্বিয়ার অভিযোগ, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে, যার প্রক্রিয়া আজো অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারকে চারটি অন্তর্র্বর্তী ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে)। ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি আইসিজের বিচারকরা সর্বসম্মতভাবে ওই রায় দেন। এই রায়কে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। ‘গণহত্যা সনদ’ অনুযায়ী, হত্যাসহ সব ধরনের নিপীড়ন থেকে নিবৃত্ত থাকা; সেনাবাহিনীসহ অন্য কেউ গণহত্যা ঘটাতে কিংবা ষড়যন্ত্র বা উসকানি দিতে না পারে তা নিশ্চিত করা; গণহত্যার সব ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণ রক্ষা এবং চার মাসের মধ্যে নির্দেশিত গৃহীত ব্যবস্থা আদালতকে জানানোর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিয়ানমারের আচরণ কেবল অমানবিকই নয়, একই সঙ্গে সব ন্যায়নীতিবিরোধী। আমরা আশা করছিলাম, আইসিজের আদেশ নিঃসন্দেহে মিয়ানমারের ওপর রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে বড় ধরনের চাপ তৈরি করবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। করোনা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থেমে আছে। থেমে নেই রাখাইনে নতুন করে দমন-পীড়ন। প্রতিদিন রাখাইন ছেড়ে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা। ভিড় করছে বাংলাদেশ সীমান্তে। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত। তাদের প্রতি সমবেদনা এবং মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি সংহতি এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের তাগিদ জানিয়ে আসছে বিশ্ব সম্প্রদায়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। দুই দফা সময় দিয়েও তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে টালবাহনা শুরু করে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের বাড়তি দায়িত্ব বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বড় বোঝা। আমরা আশা করছি, দ্রুত এই সংকটের সমাধান হবে। এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুর রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য। প্রত্যাবাসন না হওয়ায় মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। বাড়ছে আঞ্চলিক সংকটও। রোহিঙ্গাদের কারণে নানা সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয়রা। কোনো কারণেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করার কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারের ওপর জোরালো চাপ রাখতে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App