×

সারাদেশ

সাগরে মাছ ধরার ক্ষেত্রে শেষ হচ্ছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২২, ০৮:৫৮ পিএম

সাগরে মাছ ধরার ক্ষেত্রে শেষ হচ্ছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা

ফাইল ছবি

সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে ৬৫ দিনের অবরোধ শেষ হচ্ছে আজ মাঝরাতে। সমুদ্রযাত্রার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মহেশখালীসহ উপকূলের জেলেরা। কর্মচঞ্চল হয়ে উঠছে কক্সবাজার উপকূলের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও জেলে পল্লীগুলো। ট্রলারে বরফ বোঝাই, জাল ও মালামাল তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। শুক্রবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টার পরই আনুষ্ঠানিক মৎস্য আহরণের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু হবে সমুদ্রে। এদিন বেলা ২টার দিকে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র মহেশখালীর ও বরফ কলগুলোর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা যে যার মতো কাজ করে যাচ্ছেন। কেউ ট্রলারে জাল তুলছেন, কেউ সরদসামগ্রী আনছেন। আবার কেউ বরফ বোঝাই করছেন ট্রলারে। এ সময় কথা হয় মহেশখালীর জেলে রফিক, মোহাম্মদ ইসলাম, আবুল হোসেন সহ কয়েকজন জেলের সঙ্গে। তারা জানান, মাছ ধরাই তাদের মূল পেশা। একদিন মাছ না ধরলে তাদের সংসার চলে না। দীর্ঘ অবরোধে তাদের খুব কষ্টে দিন কেটেছে। মহাজনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে আবার বাইরে থেকেও সুদে টাকা এনে অনেকের সংসার চালাতে হয়েছে। এই ৬৫ দিনের অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ও ক্ষোভ রয়েছে উপকূলে জেলে-মহাজনদের। তারা দাবি করেন, সমুদ্রের এই অবরোধে মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে কোনো সুফল আসবে না। কারণ এই নিষিদ্ধ সময়ে ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় অনুপ্রবেশ করে দেদারছে মাছ ধরে নিয়ে গেছে। আবার সেই সুযোগে দেশিয় অসাধু জেলেরাও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করেছে। বর্তমানে ভারতীয় ট্রলার ছাড়াও চট্টগ্রামের বাশখালী, বাগেরহাট, শরণখোলা, পাথরঘাটা, পারেরহাট, বরগুনাসহ বিভিন্ন এলাকার শত শত ফিশিং ট্রলার সাগরে অবস্থান করে মাছ শিকার করছে। অথচ মৎস্য বিভাগ ও সমুদ্র রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে এবারের অবরোধ লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেন মৎস্য সংশ্লিষ্টরা। এদিকে মৎস্য বিভাগ বলছে, বিচ্ছিন কিছু ঘটনা ছাড়া এবারের অবরোধ সফলভাবে পালিত হয়েছে। নিরাপদ প্রজননের কারণে বাংলাদেশে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের ব্যাপক উন্নয়ন হবে বলে দাবি করা হচ্ছে। মহেশখালীর সবচেয়ে বড় জেলে পল্লী কুতুবজুমের ঘটিভাঙ্গার বনিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আমির হোসেন কোং বলেন, কুতুবজুমের ঘটিভাঙ্গায় সমুদ্রগামী ২ শতাধিক ফিশিং ট্রলার রয়েছে। এর মধ্যে অবরোধ শেষে প্রথম গোনে কিছু ট্রলার সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেক ট্রলার এখনো ডকে মেরামতে রয়েছে। ওই মৎস্যজীবী নেতা জানান, একেকটি ট্রলার মেরামত করে সাগরে যাওয়ার উপযোগী করতে দুই থেকে তিন লাখ কাটা খরচ হয়। কিন্তু এখন সাগরে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। গত কয়েক বছর ধরে বেশিরভাগ ট্রলার মালিক ও মহাজন লোকসান গুণে যাচ্ছে। অবরোধের সময় ভারতের জেলেরা মাছ ধরার কারণে দেশীয় জেলেরা মাছ পাচ্ছে না। মহেশখালীর একাধিক মৎস্য ব্যবসায়িরা জানান, ৬৫ দিনের অবরোধ শেষে আবার তিন মাস পরে অক্টোবরে আসছে ২২ দিনে ইলিশ প্রজনেন অবরোধ। ঘন ঘন অবরোধে দেশীয় জেলে-মহাজনরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। তাই ৬৫ দিনের অবরোধের পরিবর্তে ইলিশ প্রজননের সময় বাড়িয়ে এককালীন অবরোধ দিলে জেলে-মহাজনরা উপকৃত হবে। এ ব্যাপারে মহেশখালী উপজেলার সিনিয়ির মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রহমান খান বলেন, অবরোধের মধ্যে নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ডে হাতে বেশকিছু ট্রলারসহ ভারতীয় জেলে আটকও হয়েছে। তবে আমাদের মহেশখালী উপকূলের জেলেরা সফলভাবে অবরোধ পালন করেছে। আমরা জেলেদের বরাদ্ধকৃত প্রথম দাপের চাল বিতরণ শেষ করেছি, বাকী চাল এই মাসে জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App