×

মুক্তচিন্তা

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা কোথায়?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২২, ০১:৫২ এএম

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা কোথায়?
রতন দাস দরিদ্র জেলে সম্প্রদায়ের একজন মানুষ। ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার একটা প্রত্যন্ত গ্রামে রতন দাসের বসবাস। সেখানে তিনি মা-বাবা, স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন। নিম্ন সম্প্রদায়ের ঘরে জন্ম হওয়ায় মাছ বিক্রি করে যা উপার্জন করেন তাই দিয়েই কোনো রকমভাবে সংসারের ব্যয় বহন করেন। নিজের মতো করে পরিবারকে সঙ্গে করে সীমিত সুখ নিয়ে দিব্যি তার দিন যাচ্ছিল। পাশের পাড়ার অজানা এক ব্যক্তি রতন দাসের নামে একটি ফেইক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে বাজে মন্তব্য ও কটূক্তি করেন। এতে আশপাশের অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর লোকজন কোনোরকম সত্যতা যাচাই না করেই রতন দাসের বাড়িসহ আরো সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, মন্দির ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আর এরকম রতন দাসের মতো হাজার হাজার সংখ্যালঘু পরিবার নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। প্রতি বছরই আমরা দেখি যে সামান্য কিছু তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শত শত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। যে অসাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনার ওপর ভর করে বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষ একত্রে মিলিত হয়ে স্বাধিকার আন্দোলনের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়, সেই দেশে আজ সংখ্যালঘুরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সংঘটিত হয়। ১৩-১৮ অক্টোবর পর্যন্ত এ ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়। ১৩ অক্টোবর দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিনে কুমিল্লা শহরের নানুয়ার দীঘির উত্তরপাড় পূজামণ্ডপে সকালবেলা সেখানে রাখা একটি হনুমান মূর্তির হাঁটুর ওপর ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন রাখার খবর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই খবরকে কেন্দ্র করে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে উক্ত পূজামণ্ডপে হামলা করা হয়। হামলার সময় প্রতিমা, পূজামণ্ডপ ভাঙচুর ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মারধর করা হয়। কুরআন অবমাননার বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে কমপক্ষে ১৫টি জেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টকে কেন্দ্র করে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়ি, দোকান ও মন্দিরে হামলা চালায় ও জ্বালিয়ে দেয়। দিন দিন যেন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বসবাসের অযোগ্য পরিবেশ তৈরি হয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের রাজনীতির সাধনার মূলে অন্যতম আদর্শ ছিল অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবতাবাদ। এ দুটি আদর্শে পরিচালিত হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধও। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে তিনি ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলেও সব ধর্মের মানুষের প্রতি ছিল তার সমান শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তিনি নিজেই বলে গেছেন বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। যে অসাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার মনোভাবের মাধ্যমেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, সে দেশে সাম্প্রদায়িক মনোভাব কখনোই জন্ম হতে পারে না। ইসলাম ধর্মে অমুসলিমদের নিরাপত্তা বিধানের কথা বলা হয়েছে, বলা হয়েছে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে। কিন্তু আজ তাদের ভয়াবহতার শিকার যারা অন্য ধর্মের অনুসারী তারা। তাদের ঘরবাড়ি পুরনো হলো, মন্দিরে আগুন দেয়া হলো, প্রতিমা ভাঙচুর করা হলো, শুধু তাই-ই নয়, তারা মসজিদের ভেতরেও অরাজক পরিস্থিতির অবতারণা করেছে। বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িকতার এক স্বর্ণময় সময় আমরা প্রত্যক্ষ করেছি মুক্তিযুদ্ধে। সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব পেশার মানুষ এক জোট হয়ে আন্দোলন করেছে, যুদ্ধ করেছে। তখন ধর্মীয় ভেদাভেদ ছিল না, আবার ধর্মহীনতাও ছিল না। যুদ্ধোত্তর স্বাধীন বাংলাদেশেও আমরা চেয়েছি সে রকম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। সব পেশা ও ধর্মের মানুষ যদি এক হয়ে কাজ করতে না পারি তবে এদেশের উন্নয়ন কখনোই সম্ভব হবে না। একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য সবার সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের বিকল্প নেই। এই মৌলবাদী চেতনাকে বাঙালি তার মুক্তি সংগ্রামের অসাম্প্রদায়িক চেতনা হৃদয়ে রাখবে। প্রসেনজিৎ চন্দ্র শীল শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App