×

জাতীয়

সাবরিনা-আরিফসহ আটজনের ১১ বছর করে কারাদণ্ড

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২২, ১২:৩৮ পিএম

সাবরিনা-আরিফসহ আটজনের ১১ বছর করে কারাদণ্ড

মঙ্গলবার আদালত খেকে কারাগারে নেয়া হচ্ছে ডা. সাবরিনাকে। ছবি: ভোরের কাগজ

করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় ভুয়া রিপোর্ট দেয়ায় প্রতারণার মামলায় জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরীও তার স্বামী আরিফুল চৌধুরীসহ আট আসামিকে তিন ধারায় প্রত্যেককে ১১ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৪২০ ধারায় ৩ বছর, ৪৬৬ ধারায় ৪ বছর ও ৪৭১ ধারায় ৪ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন মামলাটির রায় ঘোষণা করেন।

মামলার বাকি আসামিরা হলেন- আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা।

এর আগে গত ২৯ জুন মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন আদালত। মামলার যুক্তি উপস্থাপনে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন রাষ্ট্রপক্ষ। অপরদিকে আসামিদের নির্দোষ দাবি করে খালাস চান আসামীপক্ষের আইনজীবীরা।

২০২০ সালের ২৩ জুন করোনার ভুয়া সনদ দেয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে আরিফুল চৌধুরীসহ ছয়জনকে ও পরবর্তীতে স্ত্রী সাবরিসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। এরপর তেঁজগাও থানায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়। এজাহারে বলা হয়, আসামিরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই জেকেজি হেলথকেয়ার ২৭ হাজার মানুষকে রিপোর্ট দেয় যার অধিকাংশ ভুয়া।

এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেয়া হয়। এরপর ২০২০ সালের ২০ আগস্ট সাবরিনাসহ আট আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৭০/২৬৯/৪২০/৪০৬/৪৬৬/৪৬৫/৪৭১/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এ ধারাগুলোর মধ্যে দণ্ডবিধি ৪২০ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মামলার চার্জশিটে উল্লেখিদ করোনা ভুয়া রিপোর্ট প্রদানে যার যে ভূমিকা:

আরিফুল হক চৌধুরী: জেকেজি হেলথ কেয়ার এবং ওভালগ্রুপে চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে দায়িত্বে থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন, প্রজেক্ট প্রপোজালসহ কাজ প্রাপ্তিতে মূল ভূমিকা রেখে বেসরকারি অফিস ও বাসা বাড়িতে গিয়ে টাকার বিনিময়ে স্যাম্পল কালেকশন করার জন্য বুকিংবিডি.কমসহ হটলাইন তৈরি, প্রচার ও নিজস্ব কম্পিউটার সিস্টেম হতে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে বিতরণ করে প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ আত্মসাৎ করে বলে আসামির আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে প্রকাশ পায়।

ডা. সাবরিনা শারমিন: জেকেজি হেলথ কেয়ার এবং ওভাল গ্রুপে চেয়ারম্যান বা কনভ্যেনার হিসেবে নিয়োজিত থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন, প্রজেক্ট প্রপোজালসহ কাজ প্রাপ্তিতে মূল ভূমিকা রাখে ও বাসা-বাড়িতে গিয়ে টাকার বিনিময়ে স্যাম্পল কালেকশন করার জন্য বুকিংবিডি.কমসহ হটলাইন তৈরি, বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়া প্লাটফর্মে প্রচারণাসহ সংগৃহীত টাকা গ্রহণ, জাল রিপোর্ট ও সার্টিফিকেট তৈরি এবং প্রতারণা সংগঠনের জন্য ব্যবহৃত ই-মেইলের মাধ্যমে রিপোর্ট সংগ্রহ ও জাল সার্টিফিকেট তৈরি এবং প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে আত্মসাৎ করে।

আ স ম সাঈদ চৌধুরী: প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেশন অফিসার হিসেবে নিয়োজিত থেকে স্যাম্পল কালেকশন করে আরিফ চৌধুরীর সহায়তায় ল্যাবরেটরিতে পাঠানো ও বাসা-বাড়ি থেকে স্যাম্পল কালেকশনের জন্য কর্মী পাঠানোসহ বুকিংবিডি ডটকমে যোগাযোগের জন্য তার নাম ও মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে আত্মসাৎ করে।

হুমায়ুন কবীর ওরফে হিমু: জেকেজি হেলথ কেয়ারের নার্সিং ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্বে থেকে স্যাম্পল কালেকশন করে আরিফ চৌধুরীর সহায়তায় পরীক্ষা না করে করোনা পরীক্ষার জাল সার্টিফিকেট তৈরিতে সহায়তা ও সার্টিফিকেট প্রদান এবং সশরীরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্যাম্পল কালেকশন করে প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে আত্মসাৎ করে।

তানজিনা পাটোয়ারি: জেকেজির হেলথ কেয়ারের নার্সিং ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্বে থেকে স্যাম্পল কালেকশন করে আরিফ চৌধুরীর সহায়তায় পরীক্ষা না করে করোনা পরীক্ষার জাল সার্টিফিকেট তৈরিতে সহায়তা ও সার্টিফিকেট প্রদান এবং সশরীরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্যাম্পল কালেকশন করে প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে আত্মসাৎ করে।

শফিকুল ইসলাম রোমিও: প্রতিষ্ঠানটির কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্বে থেকে স্যাম্পল কালেকশনের জন্য বাড়ি বাড়ি পাঠানো ও সমন্বয় জাল সার্টিফিকেট এবং রিপোর্ট দেয়ার সহায়তাসহ ইমেইলের মাধ্যমে রিপোর্ট সংগ্রহ ও বিতরণসহ প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ভাগ বাটোয়ারার মাধ্যমে আত্মসাৎ করে।

বিপ্লব দাস ওরফে বিপু: আইটি ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বে থেকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে আরিফ চৌধুরী ও ডা. সাবরিনা শারমিনের সহায়তায় বুকিংবিডি, জেকেজির ওয়েব সাইট, জাল সার্টিফিকেট তৈরিতে সহায়তা ও প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে আত্মসাৎ করে।

জেবুন্নেছা রিমা: জেকেজি ও ওভাল গ্রুপে চিফ একাউন্ট অফিসার এবং জেকেজির ট্রেড লাইসেন্সের সত্ত্বাধিকারী হিসেবে দায়িত্বে থেকে সংগৃহীত অর্থ আত্মসাৎ করে মর্মে মামলার তদন্তে প্রকাশ পায়। জেবুন্নেছা রিমাকে গ্রেপ্তারপূর্বক ওই আসামির কাছ থেকে আত্মসাৎকৃত চার লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App