করোনা মহামারির কারণে গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বড়ো ধাক্কা খেয়েছিল। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার প্রক্রিয়া ভালোভাবে শুরু না হতেই রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। সে কারণে সৃষ্টি হয় নতুন করে ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার। এর ফলে পুরো পৃথিবীই এক গভীরতর সঙ্কটে পড়েছে।

সোমবার (১৮ জুলাই) কলকাতায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচিত্রা ভবনে ‘রবীন্দ্রনাথের লোকহিত চিন্তা ও সমকালীন সমাজ বাস্তবতা’ শিরোনামে বিশেষ বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

ঊনবিংশ শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধে ও বিংশ শতাব্দির শুরুর ভাগে যখন রবীন্দ্রনাথ লোকহিত নিয়ে ভেবেছেন এবং সেই ভাবনার জায়গা থেকে নানামুখী সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণমুখী উদ্যোগ নিয়েছেন তখনও বিশ্ব বহুমুখী পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। দুটি শতাব্দির সম্মিলনকালে দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যভাগে পশ্চিমের পৃথিবীর উন্নত জীবনাচরণ ও ভারতবর্ষে অভাব-অনটনের সমাজ- এ দুটোকেই খুব কাছে থেকে গভীরভাবে দেখেছেন রবীন্দ্রনাথ। তাই তার সে সময়কার ভাবনা ও কর্মগুলোতে একই সঙ্গে বৈশ্বিক ও স্থানিক অভিজ্ঞতার সংশ্লেষ দেখা যায়। আজকের বৈশ্বিক সঙ্কটের সময়ও তার সেই চিন্তা-ভাবনাগুলো আগের মতোই প্রাসঙ্গিক রয়ে গেছে বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।

ড. আতিউর বলেন, আজকের উন্নয়ন গবেষক ও নীতি-নির্ধারকরা এসডিজি বাস্তবায়নের মূলমন্ত্র হিসেবে বলছেন, ‘কাউকে পেছনে রেখে এগুনো যাবে না’।

রবীন্দ্রনাথও বলে গেছেন, ‘পশ্চাতে রেখেছো যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।’ অর্থাৎ, রবীন্দ্রনাথ যেভাবে সমাজ ও লোকহিত নিয়ে ভেবেছেন তা ছিল তার সময়ের প্রায় শতবর্ষ পরের সঙ্কট ও সম্ভাবনার মুখোমুখি হওয়ার যোগ্য। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সংস্কৃতির মতো যে বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের জীবনকে স্পর্শ করে সেগুলো নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা ও উদ্যোগগুলো গভীর অন্তর্দৃষ্টিমূলক ও সুদূরপ্রসারী ছিল বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

তিনি আরও বলেন, খুব কাছে থেকে সাধারণ মানুষকে দেখে তাদের দুঃখ-দৈন্যগুলোকে গভীরভাবে অনুভব করে তা নিয়ে লেখালেখি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলেই সমকালীন উন্নয়ন ভাবনাতেও রবীন্দ্রনাথ একই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছেন। যে রবীন্দ্র চেতনায় অনুপ্রাণিত বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন কৌশলও ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সাধারণ মানুষের কল্যাণধর্মী।

সভাপতির ভাষণে উপাচার্য অধ্যপক সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী রবীন্দ্র ভাবনায় শিক্ষার গুরুত্ব এবং গ্রামীণ উন্নয়নের নানা দিক নিয়ে গবেষণা ও প্রকাশনার জন্য ড. রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বক্তৃতার আগে উপাচার্যের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরটি ঘুরে দেখেন তিনি।