×

মুক্তচিন্তা

নির্বাচন নিয়ে বাকযুদ্ধে কার কী লাভ?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২২, ০১:৪৪ এএম

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনো দেড় বছর। সবেমাত্র ঈদ শেষ হলো। মানুষজন এখনো কর্মস্থলে পুরোপুরি ফিরে আসেনি। এমনিতেই দাবদাহে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বেশ কষ্টে আছে। ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চল দাবদাহে পুড়ছে। এমনিতেই বছরটি খুবই সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের অজুহাতে বিশ্বব্যাপী মার্কিন অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে প্রায় সব দেশই চরম অর্থনৈতিক সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এর আগে টানা দুই বছর করোনার লকডাউন গোটা মানবসভ্যতাকেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বের বেশ কটি রাষ্ট্র এখন নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা কবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তার কোনো ভবিষ্যদ্বাণী কেউ করতে পারছে না। আরো অনেক রাষ্ট্রই চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখে আছে। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সেই সব রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনাযোগ্য নয় এমনটি বিশ্বের দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোও বলছে। তারপরও রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন অবরোধের কারণে আমরা তেলসহ অনেক কিছুর আমদানিতে বেশ বড় ধরনের ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছি। এই অবস্থায় আমরা কৃচ্ছ্রতা সাধন, ব্যয় সংকোচন, পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। তারপরও এবারের ঈদটা ভালোই কেটেছে বলে বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন। কিন্তু ঈদের আগে বৃহত্তর সিলেট ও উত্তরাঞ্চলে অভাবনীয় বন্যায় যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তাতে সিলেট অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে ঈদের আনন্দ সেভাবে ঘরে ঘরে আসতে পারেনি। তারপরও পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলায় অতীতের যাতায়াতের তিক্ত অভিজ্ঞতার বিপরীতে এবার ছিল আনন্দ-উচ্ছ¡াসের প্রকাশ। এখন মানুষ কাজে ফিরতে শুরু করেছে। তবে ফেরার যাত্রাটি অনেকের জীবনে বেশ হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনারও সৃষ্টি করেছে। সড়কপথে যানবাহনের বেপরোয়া গতি কেড়ে নিয়েছে বহুসংখ্যক মানুষের জীবন। দুর্ঘটনার সংখ্যাও প্রতিদিন বেড়েই চলছে। আবার ঈদের আনন্দ কাটতে না কাটতেই নড়াইলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর এবং দুর্বৃত্তদের উৎপাত বেশ দুঃখজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা আক্রান্তদের পাশে যেমন দাঁড়িয়েছেন, একইভাবে আক্রমণকারীদেরও তিনি বিচারের ব্যবস্থা করবেন বলে প্রতিশ্রæতি দিয়ে মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। অন্যদিকে রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সেলিম রেজাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে তা নিজে অস্বীকার করেছেন, অধ্যক্ষকেও এমন ঘটনা না ঘটার কথা বলিয়েছেন। কুমিল্লা-৪ আসনের এমপি রাজি মোহাম্মদ ফখরুল তারই উপজেলার চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদকে পিটিয়ে আহত করেছেন। এসব ঘটনা এখন মানুষের মুখেই শুধু আলোচনার বিষয় নয়, গণমাধ্যমেও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এসব বাস্তবতার ভেতর দিয়ে যখন আমরা যাচ্ছি তখন রাজনীতিবিদদের একটি অংশের ধ্যানজ্ঞানে ওইসব বিষয়ের তেমন কোনো আলোচনা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নেই। তাদের মধ্যে যথারীতি আগামী নির্বাচন নিয়েই যত আলোচনা, সমালোচনা, বাকযুদ্ধ শুনতে হচ্ছে। প্রতিদিন টেলিভিশন খুললে রাজনীতির দুটি চিত্রের কথা শুনতে হয়। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক বা দল নিরপেক্ষ সরকারের হাতে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতা তুলে দিয়ে বিদায় নেয়ার দাবি করছে। নতুবা তাদের ভাষায় শ্রীলঙ্কার সরকারের পরিণতি আমাদের সরকারকে ভোগ করতে হবে বলেও দাবি করা হচ্ছে। এর সঙ্গে অবশ্য বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতে যাচ্ছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসব দাবি নাকচ করে দিয়ে বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানাচ্ছেন। বিএনপির আরো দুই-তিনজন নেতা মানববন্ধন কিংবা আলোচনা সভায় সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অযোগ্যতা ইত্যাদি অভিযোগ কঠোরভাবে উত্থাপন করে বক্তব্য প্রদান করছেন। আওয়ামী লীগেরও কয়েকজন নেতা সেইসব বক্তব্যের এক ধরনের জবাব দিচ্ছেন। এসব অভিযোগ এবং জবাবগুলো প্রতিদিন রাজনীতির বাকযুদ্ধে পরিণত হচ্ছে। বেশিরভাগ টিভি চ্যানেল বিভিন্ন টকশোতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির কয়েকজন নেতাকে আলোচক হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়ে সেইসব বক্তব্যের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া জানতে চায়। বলা চলে বিএনপির মহাসচিবের বক্তব্য কিংবা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য কিংবা টিভি টকশোর দলীয় আলোচকদের কথাবার্তা মানুষকে খুব বেশি আকৃষ্ট করতে পারছে বলে মনে হয় না। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগগুলো সবই একই বৃত্তে ঘুরছে। টিভি টকশোর আলোচকরা দলীয় অবস্থান থেকে যে বক্তব্য দেন সেটিও রাজনীতি সচেতন মানুষদের কাছে খুব বেশি আকৃষ্ট করা কিংবা গ্রহণযোগ্য হওয়ার মতো নয়। নির্বাচনী এই বাকযুদ্ধে সর্বশেষ সংযোজিত হয়েছে ঢাকাস্থ বিদেশি কিছু কূটনীতিবিদ এবং দাতা সংস্থার কর্মীবৃন্দের সঙ্গে বিএনপির দেখা সাক্ষাৎ, বৈঠক এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু কথাবার্তা। এটিও অনেকটা বাকযুদ্ধের রসদে পরিণত হয়েছে। বিএনপির নেতৃবৃন্দ বিদেশি কূটনীতিবিদ ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন না। অংশ নেয়া বিদেশিরাও করেন না। তবে ইইউ প্রধান গুলশানে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের একটি সম্মেলনে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইইউ দেশগুলো দেখতে চায় বলে অভিমত প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কে না চায়? এ কথা আমাদের ইইউর প্রতিনিধিদের কাছ থেকে শুনতে হবে কেন? তারপরে এসব প্রশ্ন যেমন রয়েছে, আবার আমাদের দেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সমস্যার মধ্যেও যথেষ্ট কারণ বা ভিন্নতা রয়েছে, যা ইউরোপীয়দের সঙ্গে মোটেও মেলানো যাবে না। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বিদেশি কূটনীতিবিদ ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ এবং বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য দেয়ার বিষয়টিকে সমালোচনা করছেন। কিন্তু কূটনীতিবিদরা যদি কূটনীতির কোনো নিয়ম ভঙ্গ করেন তাহলে তাদের কাছে কারণ জানতে চাওয়ার একটি নিয়ম রয়েছে। সেটি সরকার করছে না কেন? সেই প্রশ্নের উত্তরও গুরুত্বের সঙ্গে দেখার বিষয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমের সঙ্গে এসব বিষয়ে যেসব কথা বলেন তা না বলে বরং যাদের উদ্দেশ্যে বলছেন তাদেরকে ডেকে এনে কথাগুলো বলাই উত্তম হতে পারে। গণমাধ্যমে বলা কথা নানা ধরনের বার্তা বিভিন্ন মহলকে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। সে ব্যাপারে সচেতন থাকা বোধহয় বেশি দরকার। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতাদের মধ্যে এখনো যেসব অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, সমালোচনা-পাল্টা সমালোচনা, বিদ্বেষ এবং উপদেশ দিতে প্রতিদিন দেখা যায়। সেটি বোধহয় আমাদের দেখেই যেতে হবে আরো অনেক দিন। কারণ এসব পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কোনো সমাধান সহজে হওয়ার নয়। কারণ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান দুই পরস্পরবিরোধী দল। এই দুটি দলের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগকে ভেঙেচুরে তছনছ করার জন্যই বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দলটিতে যারা যুক্ত হয়েছিলেন তারা পাকিস্তানকাল থেকেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনেরও বিরোধিতা করেছিলেন। এমনকি মুক্তিযুদ্ধেরও অনেকে বিরোধিতা করেছিলেন। সুতরাং ওইসব ব্যক্তি ’৭৫ সালে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আশীর্বাদে একত্রিত হওয়ার সুযোগ পান। সেখান থেকেই তাদের নতুন করে রাজনীতিতে পুনরুজ্জীবন ঘটে। আওয়ামী লীগকে জিয়াউর রহমান খণ্ড-বিখণ্ড করে রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু তিনি সেই সুযোগ পাননি। তিনি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকলে রাজনীতি ও রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকলে বাংলাদেশের রাজনীতির সামরিকায়নের ধারা কী রূপ লাভ করত সেটি তখনই কেবল স্পষ্ট হতো। কিন্তু জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দেশে দ্বিতীয় সামরিক শাসক ক্ষমতা গ্রহণ করার কারণে বিএনপি মাঠের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অবস্থান নেয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু যুগপৎ সেই আন্দোলনেও দুই দল দেশ ও জাতির স্বার্থে রাজনীতির কাছাকাছি কখনো আসেনি। যদিও আওয়ামী লীগ যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপিকে অন্যতম বিরোধী দল হিসেবে গ্রহণ করেই আন্দোলন সংগ্রাম এবং ’৯১-এর নির্বাচনের সব প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন পূর্ববর্তী সময় থেকেই দুই দলের আদর্শগত দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ’৯১-এর নির্বাচন-পরবর্তী সময় থেকে সেই দূরত্ব এতটাই ভিন্ন রেখায় চলে গেছে যে, দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শগত অবস্থান গ্রহণীয় পর্যায়ে কখনো দৃশ্যমান হয়নি। বিশেষত ২০০১-০৬ সালে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার যে অভিযান চলেছিল তা থেকে দুই দলের দূরত্ব দুই ভুবনের কক্ষপথে অধরা থেকে গেছে। সে কারণে ২০১৪ বা ২০১৮-এর নির্বাচনগুলোতে দুই দল একে অপরের ওপর কোনো আস্থা স্থাপন না করে যার যার মতো করেই নির্বাচনকে প্রতিহত কিংবা উতরে যাওয়ার কৌশল নিতে দেখা গেছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে অংশ না নেয়ার কথা বলেই আসছে। বিএনপির বিশ্বাস যে, দলের চেয়ারপারসন যেহেতু মুক্ত নন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনও যেহেতু দেশের বাইরে এবং আদালত কর্তৃক অপরাধে অভিযুক্ত- তাই দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গিয়ে জয়ের আশা করা দুরূহ ব্যাপার। সে কারণে তারা দলীয় সরকারের বাইরে গিয়ে অতীতের মতো তত্ত্বাবধায়ক কিংবা দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে দলীয় চেয়ারপারসনকে মুক্ত করে আনতে পারবে। তেমন পরিস্থিতিতেই কেবল তারা নির্বাচনে বিজয়ী কিংবা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে যেতে পারবে। বর্তমানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশে যেসব উন্নয়ন এবং পরিবর্তন সাধন করেছেন, তা তার নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখবে। সে ধরনের নির্বাচনে বিএনপি যাওয়ার কথা ভাবে না, যা তাদের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট। সে কারণেই তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট স্থাপন করে একটি আন্দোলন সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, সেটি যদি সফল হয় তাহলে এক কথা, না হলে ভিন্ন কথা। এখন বিএনপি আছে এই ‘এক কথা বা ভিন্ন কথার’ কৌশলে। এর আগে দুদলের মধ্যে প্রতিদিনই বাকবিতণ্ডা হবে, গণমাধ্যমে অর্থহীন বাকযুদ্ধ শুনতে হবে। এসবের কোনোটাই ফল দেবে না যদি সরকার পতনের দাবি যারা করছে, সেটি তাদের পক্ষে ঘটানো সম্ভব না হয়। সেটি দেখতে আমাদের আরো অনেক অপেক্ষা করতে হবে, শুনতে হবে দুই দলের বাকযুদ্ধ। মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App