×

মুক্তচিন্তা

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২২, ০১:৪৪ এএম

আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মহান বিজয় অর্জনে একক ও সক্রিয়ভাবে যে উপাদানটি কাজ করেছে সেটি হলো আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার শক্তি। স্বাধীনতার পর একটি আধুনিক, প্রগতিশীল, সাম্য, সবার জন্য ন্যায়বিচার ও কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশটি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় স্বাধীনতার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে যে রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছিল স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সে রাষ্ট্রটি সাম্প্রদায়িক দর্শন ও চিন্তা-চেতনা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। কেবল ধর্মের দোহাই দিয়ে, ধর্মকে পুঁজি করে, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে একটি অশুভ শক্তির দ্বারা বিভিন্ন সময়ে নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে আসছে এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সম্প্রতি নড়াইলে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে কেন্দ্র করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এমন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা কিছুদিন পর পরই ঘটতে দেখা যায়। গত বছর কুমিল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবে পূজামণ্ডপে প্রতিমার কোলে দুর্বৃত্তের রাখা কুরআন শরিফ অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আগুন জ্বলে ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে উসকানিমূলক ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দিতে তৎপর হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী গোষ্ঠী। ফলে দ্রুতই দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখা দেয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সহিংসতা। এর ফলে কুমিল্লা ছাড়াও চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মন্দির, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিকারী এক অশুভ শক্তির সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের হাজার বছরের সম্প্রীতির ঐতিহ্য এক নিমিষে ধুলায় মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে। অপপ্রচারকে সম্বল করে বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ‘ইস্যু’ বানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়। এসব কাজে ধর্মের নামে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং কোনো রাজনৈতিক শক্তির ইন্ধন নিহিত থাকে। আজ দেশকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে, বাঙালির আবহমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য যে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, ধর্মীয় সহাবস্থানকে নষ্ট করছে তাদের সমূলে উৎপাটন জরুরি হয়ে উঠেছে। এদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মপ্রাণ, ধর্মের প্রতি দুর্বল। কিন্তু ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান ও ধর্ম দিয়ে গবেষণা খুব কম মানুষই করে। ধর্ম এখানে একটি স্পর্শকাতর বিষয়। আর মানুষের এ দুর্বলতার সুযোগ নেয় একটি চিহ্নিত মহল। তারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করেছে, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেছে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের সব ভেদাভেদ ভুলে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই মিলে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করলাম, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করলাম সবাই মিলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করব বলে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমরা সেই কাক্সিক্ষত অসাম্প্রদায়িক চেতনার রাষ্ট্রের দেখা পেলাম না। শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস, অবিশ্বাস বা ধর্মের পার্থক্যের জন্য চলে খুন, সন্ত্রাস, হামলা, ভাঙচুর, অরাজকতা। পাশের প্রতিবেশীটি শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসের পার্থক্যের কারণে শিকার হন সহিংসতার। কিন্তু কেন? এখনো কেন মানুষকে ‘সংখ্যালঘু’ পরিচয়ে বাঁচতে হয়? সংখ্যাগরিষ্ঠরা ‘মানুষ’ পরিচয়ে বাঁচতে পারলে সংখ্যালঘুরা কেন ‘মানুষ’ পরিচয়ে বাঁচতে পারবে না? কাউকে জোর করে ধর্ম চাপিয়ে দেয়ার অধিকার ধর্মীয় বিধানেও নেই। সব ধর্মই তো শান্তির কথা বলে। তবুও কেন ধর্মকে ঘিরে এত অপরাজনীতি, অশান্তি, অরাজকতা, সহিংসতা, মারামারি, হানাহানি? আর এর নেপথ্যে কারিগর একপ্রকার অধার্মিক, স্বার্থান্বেষী ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ী মহল। যারা সুপরিকল্পিতভাবে ধর্মকে ব্যবহার করে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছে, দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে তারা দেশ, জাতি ও সব ধর্মের শত্রæ। তাদের অপচেষ্টা রুখে দিতে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। যার ধর্ম যাই হোক না কেন, দেশটা আমাদের সবার। অপশক্তিকে প্রতিহত করতে এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাস্তবায়ন করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। ইমরান ইমন লেখক ও গবেষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App