×

মুক্তচিন্তা

মানুষকে বিভ্রান্ত করার একটি কৌশল গুজব

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২২, ১২:১০ এএম

আমরা বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বয়স্কদের কাছে গল্পের মতো করে শুনেছি শত্রæর মনোবল ভেঙে দেয়া এবং নিজস্ব বাহিনীর মনোবল, উৎসাহ এবং তেজ বাড়ানোর জন্য সুকৌশলে গুজব রটানো হতো। রাজনীতি বা অপরাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার গুজব, যা নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য অহরহ ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যিক ভুবনে নিজস্ব পণ্যের পসার এবং প্রতিদ্ব›দ্বীর পণ্যের কাটতি কমাতে গুজবের ওপর নির্ভর করে অনেকেই। শেয়ারবাজারে গুজব ছড়িয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাধানো যায়। বিনোদন দুনিয়ায় গুজব ছড়িয়ে দর্শকশ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়। তবে হালের আলোচিত বিষয় সামাজিক গুজব এবং সোশ্যাল মিডিয়ানির্ভর রাজনৈতিক গুজব। আমরা দেখতে পাই নানা কৌশল অবলম্বন করে গুজব ছড়ানো হয়। গুজব রটিয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিয়ে সারাদেশে পূজামণ্ডপে ভাঙচুর ও হানাহানির সৃষ্টি করা, সংখ্যালঘুদের ঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা আমাদেরকে ভাবায়। গুজবে কান দেবেন না বলাটা যত সহজ, গুজব থেকে কানটা দূরে রাখা তত সহজ নয়। ‘কাউকে বলবেন না’ শর্তে যে মনগড়া কথা বা ধারণা কাউকে বলা হয়, ডালপালাসহ তা ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। সোশ্যাল মিডিয়ার আবিষ্কার গুজবকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। কোনো কোনো গুজব আবার সহিংসতা বাড়িয়ে ডেকে আনে বড় বিপদ। বাংলাদেশে এখন সব থেকে বেশি গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। ঘরের বাইরে নিজেদের নিরাপদ ভাবতেও দ্বিধায় পড়তে হচ্ছে সবাইকে। আর এই গুজব ছড়ানোর বড় মাধ্যম হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরু থেকেই আমরা দেখেছি ফেসবুক পাতাজুড়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের জন্য মানুষের মাথা লাগবে এমন ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ে। গুজবের ফলে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনা ঘটে বাংলাদেশে। কিন্তু এ রকম একটি বানোয়াট পোস্ট এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য অনেকাংশেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দায়ী। কারণ এ যোগাযোগ মাধ্যমের জন্যই মানুষের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন বেশি সহজ হয়। এ ধরনের গুজব শুধু বাংলাদেশে ছড়াচ্ছে তা না। দেশে সাড়ে ৮ থেকে ৯ কোটির কাছাকাছি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রচারের একটি বড় ক্ষেত্র এবং অপপ্রচার, গুজব রটানোরও একটি বড় ক্ষেত্র। আমরা গত ৯-১০ বছরের পরিসংখ্যানে দেখতে পাই, আমাদের দেশে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যেসব গুজব রটানো হয়েছে, অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, স্থানীয়ভাবে বিশৃঙ্খলা থেকে সারাদেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টা হয়েছে, প্রায় সবগুলোই এই মাধ্যমে করা হয়েছে। এটি এখন বৈশ্বিকভাবে নিয়ম-নীতির মধ্যে আনার সময় এসেছে। শুধু বাংলাদেশের চিন্তার বিষয় নয়, অন্যান্য দেশের জন্যও চিন্তার কারণ। বাংলাদেশে গুজব ছড়ানোর মতো অনুকূল পরিবেশ আছে। এই পরিবেশে একটি গুজব এসে পড়লে তা ডালপালা মেলতে সময় লাগে না। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ যথাযথ তথ্যের অভাব, মানুষের সচেতনতার অভাব ও শিক্ষার হার কম। এটা সত্য যে সঠিক তথ্যের অভাব গুজব সৃষ্টি করে। মানুষ আসলে কোনো বিষয়ে অনিশ্চয়তা বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারে না, তখন তাদের একটি অংশ নিজের মতো করে তথ্য ছড়ায়, একটি অংশ ইচ্ছা করে বা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যা তথ্য ছড়ায়। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে মানুষ কেন গুজব রটায়? স্বার্থান্বেষী মহলের নানা উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু সাধারণ মানুষও কেন গুজবে সায় দেয়, গুজব রটাতে পছন্দ করে? সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের আগ্রহ আছে, এমন বিষয়েই সাধারণত গুজব ছড়ানো হয়। যারা আতঙ্কে থাকেন, তারা অনেকেই গুজবে বিশ্বাস করেন নিজেদের অনিরাপত্তা দূর করার জন্য, অস্বচ্ছতা দূর করার জন্য বা কী ঘটতে যাচ্ছে, তা জানার জন্য। গুজব ঠেকানোর জন্য বলা হচ্ছে অনলাইনে কিছু ছাড়ার আগে বা শেয়ার করার ক্ষেত্রে একে পরীক্ষা করে দেখা দরকার। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিচ্ছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। তবে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ইচ্ছাটা সবার থাকে না, সবার দ্বারা সম্ভবও নয়। সন্দেহজনক ফেসবুক আইডি, ইউটিউব লিংক এবং নিউজ পোর্টাল দেখামাত্র বন্ধ করে দেয়া উচিত সরকারের। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুজব রটনাকারী অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করতে হবে। সহজ কথায় বলতে হয়, মানুষকে যারা ঘৃণা করে, তারা গুজব বহন করে, বোকারা তা প্রচার করে আর মূর্খরা তা বিশ্বাস করে। আসুন আমরা ঘৃণা ছড়ানো মানুষ, বোকা বা মূর্খের দলে না ভিড়ে সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হই।

সুপ্রতিম বড়ুয়া : সহযোগী অধ্যাপক, রামু সরকারি কলেজ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App