×

জাতীয়

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চাপে ইসি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২২, ০৮:৩৯ এএম

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চাপে ইসি

প্রতীকী ছবি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চাপে রয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন মহল একটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট আয়োজনে জোরালো তাগিদ দিয়েছেন। বিশেষত বিদেশি কূটনীতিকরা এ বিষয়ে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যাণ্ড ছাড়াও অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন এন্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (ওইসিডি) ১৪টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা সিইসির সঙ্গে দেখা করে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে তাদের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে এসেছেন। এদিকে ইসি ইতোমধ্যে দেশের শিক্ষাবিদ, বিশিষ্টজন, সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সঙ্গে যে সংলাপ করেছে- সেখানেও অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু ভোটের মাঠে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি বেঁকে বসেছে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আপাত অনড় অবস্থান নিয়েছে। এই দাবির বিষয়ে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় ‘সার্চ কমিটি’ গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপে যায়নি বিএনপি। পরে ইসি গঠনে সার্চ কমিটির সংলাপও বর্জন করে তারা। পরে নতুন ইসি ইভিএম নিয়ে আলোচনায় ডাকলে তাতেও সাড়া দেয়নি দলটি। ইসির আসন্ন সংলাপেও না যাওয়ার কথা এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।

এদিকে গত ৮ জুন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এটি নতুন সিইসির সঙ্গে কোনো মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রথম সাক্ষাৎ। এ সময় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্য আলোচনা হয়। সাক্ষাতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সিইসিকে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে কে বিজয়ী হবে তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাথা ব্যথা নেই। তবে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ওই সাক্ষাৎ শেষে সিইসি বলেন, এটি মূলত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। তিনি মূলত সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। আমরা জানিয়েছি, এ বিষয়ে ইসির কোনো ত্রুটি থাকবে না।

সিইসি বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক সমঝোতা হবে বলে ইসি আশা প্রকাশ করে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার একটা পথ বের হয়ে আসবে বলে জানান তিনি। তবে এ সব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো চাপ অনুভব করছে না বলেও জানান সিইসি। এর পর গত ২১ জুন ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাইকমিশনের নেতৃত্বে অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন এন্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (ওইসিডি) ১৪টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা সিইসির সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ দেখতে চান বলে জানিয়েছেন ১৪ টি পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতরা। বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথাল চুয়ারড। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিতসহ গণতন্ত্র আরো কার্যকর ও শক্তিশালী করতে অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করতে আমাদের দেশ বাংলাদেশের ইসিকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিতে সহায়ক অবস্থা তৈরি করতে এবং সব অংশীজনের যথাযথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমাদের দেশগুলো নির্বাচন কমিশনকে যে কোনো ধরনের সহযোগিতাও দিতেও রাজি। তিনি জানান, গণতান্ত্রিক ধারাকে আরো শানিত করার মধ্য দিয়ে নাগরিকদের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সহায়তা করতে চায় ওইসিডি সদস্য দেশগুলো।

ওই বৈঠক শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়াল বলেন, তারা এসেছেন এটা একটা প্রথা বা ট্রাডিশন। আগেও এসেছেন- তারই ধাবাবাহিকতা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইনকানুন, আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তারা সাধারণত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর জোর দিয়ে থাকেন। সেজন্যই তারা ভোট অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিক বিশেষ করে পশ্চিমাদের আগ্রহ ও সতর্ক দৃষ্টি থাকবে বরাবরই। বিগত নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রবল আপত্তি ও নানা অভিযোগের প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ থাকবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। আগামী নির্বাচন যাতে অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ হয়- তা নিয়ে ইসির ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করবে তারা। এর নমুনা এরইমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়া গত ২৬ জুন সিইসির সঙ্গে দেখা করেন অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুর। তিনিও অংশগ্রহনমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে গুরুত্ব দেন।

এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, এটা তো আজকের ব্যাপার নয়। বিদেশি অনেক রাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনের ওপর নজর রাখে- এটা অনেক দিনের বিষয়। তবে বর্তমানে বিদেশিরা আমাদের ওপর আস্তা রাখছে না বলেই তারা এ ধরনের কথাবার্তা বলছেন আগে থেকেই। তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাইছে। কেননা বিগত দুটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নানা অভিযোগ এবং আগামী নিবাচন নিয়ে তাদের কিছু দাবি থাকায় বিদেশি কূটনীতিকরা চাইছে সবাই যাতে দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নেয়। তা হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে। কিন্তু বিএনপি যে শর্ত দিচ্ছে, ‘নির্বাচনকালীন সরকার গঠন’ এটা তো ইসির বিষয় নয়; এটা রাষ্ট্রের, সরকারের ও পার্লামেন্টের বিষয়। এটা ইসির পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। এটা ইসি হয়তো সরকারের কাছে ব্যক্ত করতে পারে।

বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা বিএনপির সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা ওই সব রাষ্ট্রদূতদের বিষয়। কি আলোচনা করে সেটা তাদের বিষয। তবে তারা চাইছে- আগামী নির্বাচন যেন অংশ গ্রহণমূলকমূলক হয়, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। তারা এটা তো চাইবেই। এর ফলে চাপ তো কিছুটা সৃষ্টি হয়। এ চাপ সিইসি বা ইসি কিভাবে সামাল দেবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য আলাদা করে ইসি চেষ্টা করতে পারে। আলাদা করে ফোনালাপ করে বা অন্য কোনো মাধ্যমে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে। তবে যেটুকু ইসির আওতায় সেটুকু তারা করতে পারবে। আর সরকার বা রাজনৈতিক সংক্রান্ত বিষয়ে তো ইসির কিছু করার নেই।

আরেক সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, আমাদের সময়ে রাষ্ট্রদূতরা এভাবে সাক্ষাৎ করতে আসত না বা যোগাযোগও ছিল না। তবে এখন দেখছি বিদেশি দূতাবাসগুলো এ দেশের নির্বাচন নিয়ে খুবই আগ্রহী। তবে তারা যা বলছে, তা যদি ভালো পরামর্শ হয় এবং ইসি যদি মনে করে এটা গ্রহণযোগ্য তাহলে তাদের নিজস্বতা বজায় রেখে ওদের মতামত নিতেও পারে। তবে এর ফলে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে- এটা ঠিক বলা না। বিষয়টি ইসি কিভাবে নিচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App