×

ভ্রমণ

পর্যটকদের পদচারণায় মুখর কুয়াকাটা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২২, ০৮:২৫ এএম

পর্যটকদের পদচারণায় মুখর কুয়াকাটা

ছবি: সংগৃহীত

পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ঈদের তৃতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। পর্যটকরা সৈকতের বালিয়াড়িতে গা ভাসিয়ে নেচে গেয়ে আনন্দ উন্মাদনায় মেতে উঠে। কেউ সৈকতের বেঞ্চে বসেই সমুদ্র ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেন। কেউবা আবার সৈকতের দোকানগুলোতে কাঁকড়া, চিংড়িসহ নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছের ফ্রাই ও বারবিকিউ খাচ্ছেন। গঙ্গামতি থেকে লেম্বুর বন পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকতের সব পর্যটন স্পট পর্যটকদের আনাগোনায় সরগরম।

এদিকে কুয়াকাটার সবকটি হোটেল মোটেল বুকিং রয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। পর্যটকের এমন ভিড়ে হাসি ফুটেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মুখে। আগতদের সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে এবার হোটেল ভাড়া ও খাবারের মূল্য অনেকটা বেশি রাখা হচ্ছে বলে পর্যটকদের অভিযোগ।

সরেজমিন দেখা গেছে, সাগরের নীল জলরাশি আর ঢেউয়ের গর্জন ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য যেন পর্যটকদের মন কেড়ে নিয়েছে। এছাড়াও শামুক-ঝিনুকের দোকানসহ বিপণিবিতানগুলোতে রয়েছে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। এদিকে কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান কুয়াকাটার কুয়া, নারিকেল কুঞ্জ, ইকোপার্ক, জাতীয় উদ্যান, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার, সীমা বৌদ্ধবিহার, সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল খ্যাত ফাতরার বনাঞ্চল, গঙ্গামতি, কাউয়ারচর, লেম্বুরচর, শুঁটকি পল্লীসহ সৈকতের জিরোপয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে মনোমুগ্ধকর বেলাভূমি, একাধিক নয়নাভিরাম লেক, সংরক্ষিত বনায়নসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখছেন আগত পর্যটকরা। থেমে নেই সৈকতে ফটোগ্রাফার ও ঘোড়ার দৌড়।

পর্যটক শরিফ রহমান বলেন, কুয়াকাটায় অনেকবার এসেছি, সময় পেলেই বারবার এখানে ছুটে আসি। পদ্মা সেতুর চালু হওয়ার কারণে খুব অল্পসময়ের মধ্যে কুয়াকাটায় এসে পৌঁছেছি।

পর্যটক জাহানারা বেগম বলেন, এর আগেও কুয়াকাটা এসেছি। তখন বেশ কয়েকটি ফেরি পার হয়ে আসতে হতো। অনেক বিড়ম্বনা পোহাতে হতো। এবারে মাত্র ৬ ঘণ্টায় কুয়াকাটা আসলাম। হোটেলে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে সৈকতে বেরিয়ে পড়েছি। ঘুরে দেখলাম বিভিন্ন দর্শনীয় স্পট। এর পর শেষ বিকালে সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখবেন বলে তিনি জানান। তবে এবার হোটেল ভাড়া ও খাবারের মূল্য অনেকটা বেশি রাখা হচ্ছে বলে তার অভিযোগ।

হোটেল সমুদ্র বাড়ির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.শামীম খান বলেন, প্রতি বছর ঈদ, কিংবা সরকারি ছুটিতে বাড়তি পর্যটকের আগমন ঘটে কুয়াকাটায়। এ বছর পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার কারণে প্রথম ঈদে ব্যাপক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। তাই তাদের হোটেলের সব রুম বুকিং রয়েছে। রুমের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পর্যটকদের রুম দিতে পারছে না বলে তিনি জানান।

কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশন কুটুমের সাধারণ সম্পাদক মো. হোসাইন আমির বলেন, পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার কারণে দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে এসব পর্যটক ছুটে এসেছেন। আমরা সর্বক্ষণই পর্যটকদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। ছোট-বড় সব মিলিয়ে এখানে ১৬০টি আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। কোনোটা একদিনের জন্য। কোনো কোনো হোটেল দুই থেকে তিন দিনের জন্য রুম বুকিং রয়েছে। আবার কেউ কেউ হোটেলের রুম না পেয়ে বাসাবাড়িতে অবস্থান করছেন।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাহআলম হাওলাদার জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে অগণিত পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। ইতোমধ্যে হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোর শতভাগ রুম বুকিং হয়ে গেছে। তবে যাতে কোনো পর্যটক হয়রানি না হয় সেজন্য হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, কুয়াকাটায় যে পরিমাণ হোটেল মোটেল রয়েছে তাতে ১৫/২০ হাজার লোকের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে সব হোটেল মোটেলগুলো বুকিং হয়ে গেছে।

মহিপুর থানা ওসি খোন্দকার মো. আবুল খায়ের বলেন, যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে থানা পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই থানা পুলিশের একাধিক টিম পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, আগত পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যটন স্পটে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের একটি টিমসহ সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারিতে রয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App