×

খেলা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২২, ১১:৫৬ পিএম

ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

তামিম ইকবাল। ফাইল ছবি

টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারা টাইগাররা ওয়ানডে সিরিজে কি ভাবে বদলে গেল সেই হিসাব মেলাতে পারছে না ক্যারিবিয়ান সমর্থকরা। উইন্ডিজ মিডিয়াতো স্বাগতিক খেলোয়াড়দের নৈপুন্যে হতাশ। বুধবার দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে উইন্ডিজকে ৯ উইকেটে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে টাইগাররা। প্রথম ম্যাচে ৬ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার পর এবার উইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতল তামিম বাহিনী। টাইগারদের ওয়ানডেসিরিজ জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, ইয়াসির আলী দলে নেই। তার পরও ঘরের মাঠে ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা সিরিজ জিতেছে। ১৬ জুলাই শেষ ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এ ম্যাচে তামিম বাহিনী জয় পেলে হোয়াইটওয়াশ হবে স্বাগতিকরা। গায়ানায় প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারলেও ওয়ানডেতে সেই ছাপ একদমই ছিল না বাংলাদেশের। নিজেদের প্রিয় ও স্বাচ্ছন্দ্যের ফরম্যাটে দাপট ধরে রেখে খেলে জয় পেয়েছে তামিম বাহিনী।

বুধবার ক্যারিবিয়ানদের হারিয়ে বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩১তম সিরিজ জিতেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ দশ ওয়ানডের দশটিতেই জিতেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সিলেটে এই জয়রথের শুরু। সিলেট ঘুরে ডাবলিন। ডাবলিন থেকে টনটন। টনটন থেকে মিরপুর হয়ে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম থেকে গানায়ার প্রভিডেন্স স্টেডিয়াম। সব ভেন্যুতেই চলছে টাইগারদের রাজত্ব। প্রতিটি ম্যাচেই বাংলাদেশ নিজেদের দাপট দেখিয়েছে। শ্রেষ্ঠত্ব বুঝিয়েছে। গায়ানায় প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ৬ উইকেটে উইন্ডিজকে হারিয়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা টাইগাররা গতকাল নাসুম আহমেদ এবং মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্নিতে ৩৫ ওভারে ১০৮ রানে গুটিয়ে দেয় স্বাগতিকদের ইনিংস। সিরিজ জিততে ১০৯ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নামেন ২০.৪ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ১১২ রান সংগ্রহ করে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ওপেনার তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত ওপেনিংয়ে ৪৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন। ব্যক্তিগত ২০ রানে সাজঘরে ফিরেন শান্ত। এর পর অধিনায়ক তামিম ইকবালের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে পার্টনানশিপ গড়ে তুলে দলের জয় নিশ্চিত করেন এই দুই ব্যাটার। তামিম ইকবাল ৬২ বল মোকাবেলা করে ৫০ ও লিটন দাস ২৭ বল থেকে ৩২ রান করে অপরাজিত থাকেন। তামিম তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৩তম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। ১০ ওভার বল করে ৪ মেডেনসহ ১৯ রান দেয়া স্পিনার নাসুম আহমেদ ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন।

এর আগে টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নিয়ে বোলারদের অসাধারণ নৈপুণ্যে স্বাগতিকদের চেপে ধরে বাংলাদেশ। এরপর উইন্ডিজ একশর কোটা ছুঁয়েছে বটে, কিন্তু এগোতে পারেনি বেশি দূর। ৩৫ ওভারে ১০৮ রানেই উইন্ডিজকে গুড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। নাসুম নেন ৩টি। এর ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতেছে টাইগাররা।

গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে বুধবার উইনিং কম্বিনেশন ভেঙে একাদশে একটি পরিবর্তন আনে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। আগের ম্যাচে অনবদ্য বোলিং করা পেসার তাসকিন আহমেদকে বাইরে রেখে প্রায় এক বছর পর ফেরানো হয় অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেনকে। সেই মোসাদ্দেকের অফ স্পিন দিয়েই ইনিংস শুরু করেন টাইগার দলপতি। তবে ইনিংসের শুরুটা বেশ দেখেশুনেই খেলে স্বাগতিক ব্যাটাররা। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে কোনো উইকেট হারাতে দেননি দুই ওপেনার শাই হোপ আর কাইল মায়ার্স। এ সময় ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে স্কোর বোর্ডে ২৬ রান তোলে তারা। যদিও একাধিক সুযোগ মিসের আক্ষেপে পুড়তে হয় সফরকারীদের। সেই আক্ষেপে প্রলেপ পড়ে ১১তম ওভারে। শুরুতে সাফল্যে এনে দেন মোসাদ্দেক। একটু টেনে দেয়া বল আগেভাগে ব্যাট চালিয়ে মিস করে বোল্ড হন ১৭ রান করা মায়ার্স।

এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইন্ডিজের উইকেট তুলে নেন টাইগার বোলাররা। এবার দৃশ্যপটে নাসুম আহমেদ। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেও উইকেট পাননি এই বাঁহাতি স্পিনার। বুধবার সেই আক্ষেপে গুছিয়েছেন শুরুতে শামার ব্রুকসকে বোল্ড করে। বাঁহাতি স্পিনারের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে ৫ রানে ফেরেন ব্রুকস। ইনিংসের ১৮তম ওভারে জোড়া শিকার নাসুমের। আউট করেন ওপেনার হোপ আর অধিনায়ক নিকোলাস পুরানকে। নাসুমকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে মোসাদ্দেকের হাতে ক্যাচ দেন ডানহাতি হোপ। ফেরেন ৪৫ বলে ১৮ রানে। ওই ওভারের শেষ বলে পুরান রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন। এদিন রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।

ক্রিজে এসে জ্বলে ওঠার আগেই আউট হন হার্ডহিটার রভম্যান পাওয়েল। এলোমেলো শটে উইকেট উপহার দিয়ে যান তিনি। শরিফুল ইসলামের লেন্থ বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দেন রভম্যান। ১৯ বলে ১৩ রান করে সাজঘরে পথ ধরেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ২৬ ওভারে ৬৯ রানে ৫ উইকেট হারানো দলটিকে আরো বিপর্যয়ের মুখে ফেলেন মিরাজ। তিন ওভারের ব্যবধানে একে একে ফেরান ব্রেন্ডন কিং (১১), শেফার্ড (৩) ও আলজারি জোসেফকে (০)। মাঝে ২ রান করে আউটে কাটা পড়েন আকিল হোসাইন। এতে ৮৬ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে একশর আগে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে উইন্ডিজ। তবে শেষ উইকেটে কিমো পল আর গুদাকেশ মটির ২২ রানের পার্টনারশিপে ১০৮ রানে থামে ক্যারিবীয়দের ইনিংস। স্পিনার নাসুম আহমেদ উইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ওয়ানডে ম্যাচে ১৮ ওভার বোলিং করে সাতটি মেইডেন দিয়েছেন। বুধবার দ্বিতীয় ম্যাচেই করেছেন চারটি মেইডেন ওভার। গায়ানার প্রভিডেন্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৮ ওভারে তিন মেইডেনে মাত্র ১৬ রান খরচ করেছিলেন নাসুম। কিন্তু কোনো উইকেট পাননি। বুধবার নাসুমের বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড়ায় ১০-৪-১৯-৩। ১৯৯৮ সালে ভারতের বিপক্ষে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ৫টি মেইডেন ওভার করেছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি স্পিনার রফিক।

গত দুই যুগেও আর কেউ রফিকের এই রেকর্ড ভাঙতে পারেননি। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই শফিউল ইসলাম এই রেকর্ডের কাছাকাছি গিয়েছিলেন। সেদিন ৯ ওভারে চারটি মেইডেন নিয়েছিলেন শফিউল। শফিউলের প্রায় ১০ বছর পর আবার নাসুমের হাত ধরে ইনিংসে অন্তত ৪টি মেইডেন করা বোলারের দেখা পেলো বাংলাদেশ। রফিককে ছুঁতে না পারলেও, ৪ মেইডেনের মাধ্যমে সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজাদের পাশে ঠিকই নাম তুললেন নাসুম।

সবমিলিয়ে বাংলাদেশের ষষ্ঠ বোলার হিসেবে ইনিংসে অন্তত ৪টি মেইডেন করলেন ২৭ বছর বয়সী নাসুম। তার আগে এ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন রফিক (৩ বার), সাকিব (৩ বার), মাশরাফি (২ বার), সৈয়দ রাসেল (২ বার), মুশফিকুর রহমান বাবু ও শফিউল ইসলাম। এছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১২২টি মেইডেন ওভার করেছেন মাশরাফি। বাংলাদেশের আর কোনো বোলার ওয়ানডেতে ১০০ মেইডেন নিতে পারেননি। পঞ্চাশের বেশি মেইডেন নিয়েছেন সাকিব (৯১), আব্দুর রাজ্জাক (৭০) ও রফিক (৬৩)। উল্লেখ্য, বিশ্ব ক্রিকেটে ওয়ানডে ফরম্যাটে ইনিংসে সর্বোচ্চ ৮ মেইডেনের রেকর্ড রয়েছে ভারতের বিষেন সিং বেদি (ইনিংসে ১২ ওভার) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল সিমন্সের। সবমিলিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৩১৩ মেইডেনের বিশ্বরেকর্ড দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলকের দখলে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App