×

আন্তর্জাতিক

পৃথিবীর জন্মের আগের মহাবিশ্ব দেখাল জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২২, ০৮:২৯ এএম

পৃথিবীর জন্মের আগের মহাবিশ্ব দেখাল জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ

ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর জন্মেরও আগের গহিন মহাশূন্যের হাজারো ছায়াপথের ছবি তুলে পাঠিয়েছে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি)। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী স্পেস স্যাটেলাইটের তোলা ‘গহিন মহাশূন্যের’ ছবির অ্যালবাম নাসা কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করার একদিন আগেই অ্যালবামের একটি ছবি হোয়াইট হাউসে দেখিয়ে ফেলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

গহিন মহাশূন্যের ছায়পথগুচ্ছ ‘এসএমএসিএস-৭২৩’ পৃথিবীর জন্মের আগে যেমন ছিল সেটিই উঠে এসেছে জেডব্লিউএসটির তোলা প্রথম ‘ডিপ ফিল্ড’ ছবিতে। নিজস্ব ওয়েবসাইটে নাসা জানায়, ওয়েব টেলিস্কোপ ‘এসএমএসিএস-৭২৩’ এর যে ছবিটি তুলেছে, ছায়াপথ গুচ্ছটি সেই অবস্থায় ছিল ৪৬০ কোটি বছর আগে। মজার বিষয় হচ্ছে, বিজ্ঞানীদের হিসাবে পৃথিবীর বয়স আনুমানিক ৪৫৪ কোটি বছর (কম বেশি পাঁচ কোটি বছর)। এখন পর্যন্ত কোনো স্পেস টেলিস্কোপের তোলা মহাশূন্যের সবচেয়ে গহিন এবং সবচেয়ে ভালো মানের ইনফ্রারেড ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে একে, কয়েক হাজার ছায়াপথ উঠে এসেছে ছবিটিতে।

মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি জানায়, পৃথিবীতে মাটিতে দাঁড়িয়ে কেউ যদি এক হাত দূরের একটি ধূলি কণার দিকে তাকান, পৃথিবীর আকাশে ঠিক ওই ধূলিকণার মতোই ক্ষুদ্র জায়গা দখল করে রেখেছে ছবিতে দেখানো ছায়াপথ গুচ্ছ। নাসা জানায়, ছবিটি তুলেছে ওয়েব টেলিস্কোপের ‘নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা (এনআইআরক্যাম)। সাড়ে ১২ ঘণ্টায় বিভিন্ন তরঙ্গের ইনফ্রারেড আলো নিয়ে ‘কম্পোজিট’ ছবিটি ধারণ করেছে এনআইআরক্যাম।

ওয়েব যে ইনফ্রারেড তরঙ্গের ছবি তুলেছে তা হাবল টেলিস্কোপের ক্ষমতার অনেক বাইরে। বিভিন্ন ইনফ্রারেড তরঙ্গের এমন একটি ছবি তুলতে হাবল টেলিস্কোপের কয়েক সপ্তাহ সময় লাগত বলে জানায় নাসা। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ১১ জুলাই ওয়েবের একটি ছবি হোয়াইট হাউসে দেখালেও, নাসা ছবির পুরো অ্যালবাম প্রকাশ করে গতকাল ১২ জুলাই মার্কিন পূর্বাঞ্চলীয় স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায়, বাংলাদেশের সময়ে যা ১২ জুলাই রাত সাড়ে ৮টা। নিজস্ব ওয়েবসাইটে উন্মোচনী অনুষ্ঠান লাইভ প্রচার করে তারা।

কী করে তোলা সম্ভব হলো মহাবিশ্বের এত আগের ছবি? কোনো বস্তু থেকে আলো যখন আমাদের চোখে এসে পড়ে তখন আমরা ওই বস্তুটি দেখতে পাই। খুব সহজ এই কথাটির ব্যাখ্যা আমাদের সাধারণ বোঝাপড়ায় জটিল হতে শুরু করে যখন আমরা অনেক দূরের জিনিস দেখার চেষ্টা করি। উদাহরণ হিসেবে বলা চলে, চাঁদের দূরত্ব পৃথিবী থেকে মোটামুটি তিন লাখ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। আর আলোর গতি হচ্ছে, সেকেন্ডে প্রায় তিন লাখ কিলোমিটার। ফলে যে চাঁদটি আমরা ঠিক এই মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছি তা আসলে এক সেকেন্ডের সামান্য আগের চাঁদ। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে লাগে প্রায় আট মিনিট ১৯ সেকেন্ড। এর মানে হচ্ছে, ঠিক সূর্যাস্তের সময় আমরা যে সূর্য দেখি তা আসলে আট মিনিট ১৯ সেকেন্ড আগেই অস্ত গেছে। এইভাবে, যত দূরের বস্তু আমরা দেখি, সেগুলোর আসলে তত আগের চেহারা আমরা দেখতে পাই। নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মহাবিশ্বের যে অংশের ছবি তুলেছে, সে অংশ থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে লাগে প্রায় চারশ ৬০ কোটি বছর। ফলে, যে ছবিটি টেলিস্কোপ তুলেছে, সেটি আসলে চারশ ৬০ কোটি বছর আগের চেহারা দেখাচ্ছে। আজ তাহলে ওই অংশের চেহারা কেমন? সেটি জানা যাবে ওই একই নিয়মে চারশ ৬০ কোটি বছর পরে!

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App