সারাদেশে আজ পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। বরাবরের মত এবারও রাজধানীতে পশু কোরবানি হচ্ছে রাস্তার পাশে আর অলিগলিতে। সেখানেই জবাই করা পশুর শরীর থেকে চামড়া ছাড়িয়ে আলাদা করা হচ্ছে। রাজধানীতে ঈদের নামাজের পরপরই শুরু হয়েছে পশু কোরবানি; চামড়া ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততার শুরু তখন থেকেই।
সাধারণত স্থানীয় মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলোর লোকজনই পাড়া-মহল্লার বাড়ি বাড়ি ঘুরে দান হিসেবে চামড়া সংগ্রহের কাজটি করে। আবার কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ীও ঈদের দিন চামড়া কিনে নেন।
এদিকে, কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে প্রস্তুত পুরান ঢাকা লালবাগের পোস্তার প্রায় ১০০টি আড়ৎ। তাদের পাশাপাশি পাইকারি ব্যবসায়ী ও ছোটোখাটো আড়ৎদাররা চামড়া সংরক্ষণের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এসব সংগ্ৰহকৃত চামড়া পোস্তার পাইকাররা লবণ দিয়ে সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজটি সেরে বিক্রি করেন ট্যানারিতে। ট্যানারি কেমন দামে চামড়া কিনবে, তা প্রতিবছর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিছু কিছু ট্যানারি ফড়িয়াদের মাধ্যমে সরাসরি কম দামেও চামড়া সংগ্রহ করে।
সরকারের বেঁধে দেয়া দর অনুযায়ী, ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৪৭ থেকে ৫২ টাকায়। আর ঢাকার বাইরে এই দাম হবে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা।
এছাড়া, লবণযুক্ত খাসির চামড়া সাড়া দেশে ১৮ থেকে ২০ টাকায় কিনবে ট্যানারি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই গতবারের চেয়ে দাম বেড়েছে সাত টাকা।
তবে ফড়িয়া বা মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কোরবানি দাতাদের কাছ থেকে বর্গফুট হিসাবে চামড়া কেনেন না। আকার বুঝে মোটের ওপর একটি দাম তারা দেন। সেখানে কিছু লাভ রেখে তারা পাইকারদের বিক্রি করেন।
মালিবাগ রেলগেট সংলগ্ন রাস্তায় ফুটপাতে পশু কোরবানি দিচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদ হাসান। তিনি বললেন, চামড়ার বাজার খুব খারাপ। কোনো দাম পাওয়া যায় না। সেজন্য এতিমখানাকে দিয়ে দিয়েছি।
বাংলাদেশে সারা বছর যে সংখ্যক পশু জবাই হয়, তার মোটামুটি অর্ধেক হয় এই কোরবানির মৌসুমে। ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে মোটামুটি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।
নামমাত্র দামও না মেলায় দেশজুড়ে চামড়া ফেলে দেয়ার বহু ঘটনায় মহামারীর দুবছর ঈদ উৎসবের সময় আলোচনা-সমালোচনা ছিল ব্যাপক।
তবে মহামারির শঙ্কা কাটিয়ে পুরনো মজুদ কমে আসায় এবার চাহিদা বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।