×

জাতীয়

রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২২, ০৬:৪২ পিএম

রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা

ফাইল ছবি

ঈদুল আজহা ইসলামের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি। বাংলাদেশে এ উৎসবটি কোরবানির ঈদ নামে পরিচিত। ঈদুল আজহা অর্থ হলো ত্যাগের উৎসব। আসলে এটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ত্যাগ করা। এ দিনটিতে মুসলমানরা তাদের সাধ্যমতো ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী উট, গরু, দুম্বা কিংবা ছাগল কোরবানি বা জবাই করে থাকেন। ঈদের নামাজের পরই আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে শুরু হবে ঈদুল আজহা উদযাপন। পর পর দু’টি কোরবানি ঈদের আনন্দ নির্জীব করে রাখে করোনা। এবারো শঙ্কামুক্ত হওয়া যায়নি, কারণ করোনার থাবা আবারো হানা দিয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে এবারের ঈদের আয়োজনে ফের যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্য সতর্কতা।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ, রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের মতো এবারো জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণত রাষ্ট্রপতি রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঐতিহ্যবাহী ঈদের নামাজে অংশ নেন। গেলো দুই বছরের মতো এবারো স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবন দরবার হলে তার পরিবারের সদস্য ও কয়েকজন কর্মকর্তাসহ ঈদের নামাজ আদায় করবেন। বঙ্গভবনে ঈদের জামাত সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে।

এবার ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৮টায়। তবে বৈরী আবহাওয়া থাকলে ঈদের প্রধান জামাত সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এরপর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে শেষ ঈদ জামাত।

এদিকে, করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের মধ্যেই আমাদের পবিত্র ঈদুল আজহা পালন করতে হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আর মৃত্যু পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কেবল করোনা নয়, প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও। তাই ঈদ পালনে এবার সর্বোচ্চ সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে করোনা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে ব্যাপক অনীহা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশজুড়ে করোনা বাড়লেও জনগণের মাঝে ভয়ভীতি একেবারেই নেই। এ অবস্থায় বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বৃহস্পতিবার ঈদুল-আজহা উদযাপনে ৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে ধর্ম-মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা অনুসরণ করতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে। এতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাগুলো প্রতিপালনে অনুরোধ করা হয়েছে।

নির্দেশনাগুলো হলো-- ১. আসন্ন পবিত্র ইদুল-আজহা ২০২২ উদ্‌যাপন উপলক্ষে কোনো ধরনের আলোকসজ্জা করা যাবে না। ২. প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে অজু করে ঈদগাহে/মসজিদে আসতে হবে। ৩. করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদ/ঈদগাহের অজুখানায় সাবান/হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। ৪. ঈদের নামাজের জামাতে আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে/ঈদগাহে আসতে হবে। মসজিদ/ঈদগাহে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না। ৫. ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে নামাজে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে এবং এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে। ৬. করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পবিত্র ইদুল-আজহার নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে খতিব ও ইমামদের দোয়া করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ৭. খতিব, ইমাম এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ৮. পশু কোরবানির ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শনিবার (৯ জুলাই) ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। এছাড়া ৮ জুলাই শুক্রবার এবারের পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ঈদুল আজহার তাৎপর্য সম্পর্কে জানা যায়, হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহ তায়ালার আদেশ পালনের উদ্দেশ্যে প্রাণপ্রিয় জ্যেষ্ঠ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে তাঁর পূর্ণ সম্মতিতে কোরবানি করতে উদ্যত হন। মক্কার নিকটস্থ ‘মিনা’ নামক স্থানে ৩ হাজার ৮০০ সৌরবছর আগে এই মহান কোরবানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাঁর ঐকান্তিক নিষ্ঠায় সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে তাঁর পুত্রের স্থলে একটি পশু কোরবানি করতে আদেশ দেন। আল্লাহর প্রতি অবিচল আনুগত্য ও নজিরবিহীন নিষ্ঠার এ মহান ঘটনা অনুক্রমে আজও সৌদি আরবের মিনায় এবং মুসলিম জগতের সর্বত্র আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে পশু কোরবানির রীতি প্রচলিত রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App