×

জাতীয়

হেনোলাক্স দম্পতির কাছে পাওনা ছিল তিন কোটি টাকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২২, ০১:৩০ পিএম

হেনোলাক্স দম্পতির কাছে পাওনা ছিল তিন কোটি টাকা

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে গাজী আনিসের চাঞ্চল্যকর মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত প্ররোচনার মামলায় আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন ও পরিচালক ফাতেমা আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এর আগে, গত সোমবার গায়ে আগুন দিয়ে গাজী আনিসের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় নুরুল আমিন-ফাতেমা দম্পতি রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে পালিয়ে আত্মগোপন করেন।

আজ বুধবার (৬ জুলাই) দুপুরে কারওয়ার বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য অবহিত করেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত সোমবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় গাজী আনিস নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিট অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়।

চিকিৎসকরা জানান, কুষ্টিয়ার প্রভাবশালী ওই ব্যবসায়ীর গায়ের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়ে যায়। অতঃপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৫ জুলাই সকাল সোয়া ৬টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। প্রকাশ্য দিবালকে মর্মান্তিক এই ঘটনা আলোড়িত করে সমগ্র দেশবাসীকে।

ওই ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ৯। এ প্রেক্ষিতে র‌্যাব জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর অভিযানে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নুরুল আমিন (৫৫) এবং ফাতেমা আমিন (৪৫) কে গ্রেপ্তার করা হয়।

[caption id="attachment_357699" align="aligncenter" width="700"] গাজী আনিস। ফাইল ছবি[/caption]

মামলা ও অন্যান্য সূত্রের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, ২০১৭ সালে আমিন গ্রুপের কর্ণধার নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে ভিকটিমের পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সাথে ভিকটিমের সখ্যতা এবং আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। গ্রেপ্তাররা ২০১৮ সালে চিকিৎসার জন্য পাশ্ববর্তী একটি দেশে গেলে সেখানে স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থানকালে গাজী আনিসকে হেনোলাক্স কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য প্ররোচিত করেন। প্রথমে অসম্মতি জ্ঞাপন করলেও পরবর্তীতে রাজি হয় এবং প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। পরবর্তীতে তাদের প্ররোচণায় ভিকটিম আরও ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন।

অধিকাংশ টাকাই ভিকটিম ঋণ হিসেবে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে ধার নিয়েছিল। বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে তাদের মধ্যে কোন চুক্তিনামা করা হয়নি। বিনিয়োগ পরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদনে গড়িমসি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে প্রতিমাসে লভ্যাংশ প্রদানও বন্ধ করে দেন। কয়েকবার হাজী আনিসকে হেনস্তা-ভয়ভীতিও প্রদর্শন করা হয়।

ওই টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন গাজী আনিস। এছাড়াও ঐ টাকা ফিরে পাওয়ার জন্য গত ২৯ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। গত ৩১ মে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে পাওনা টাকা আদায় সংক্রান্তে মামলা দায়ের বিষয়টি পোস্ট করেন। বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাক্ষীদের নিকট সহায়তা চান।

এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, গত ৪ জুলাই পাওনা টাকা পরিশোধের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু বিকেল গড়ালেও তারা নিহতকে টাকা প্রদান করেনি। এরপর গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।

নিহত গাজী আনিস কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঠিকাদারি ব্যবসার পাশাপাশি একটি টেলিকম কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে কুষ্টিয়ায় গাড়ীর ব্যবসা শুরু করেন। তিনি সাহিত্য চর্চা করতেন এবং তার বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে।

আসামি নুরুল আমিন ১৯৮১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত গোপীবাগ ঢাকা এলাকায় কাদের হোমিও হল নামে হোমিও হলে ১৫ বছর চাকুরি করেন। ঐ সময়ে তার একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় আসলে ১৯৯১ সালে হেনোল্যাক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নামে নামকরন করেন। ঐ কোম্পানির অধীনে হেনোলাক্স কসমেটিক্স যেমন হেনোলাক্স কমপ্লেকশান ক্রিম, হেনোলাক্স স্পট ক্রিম, হেনোলাক্স মেছতা আউট ক্রিম ও হেনোলাক্স হেয়ার অয়েল ও পল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা করেন।

পরবর্তীতে বাজারে হেনোলাক্সের চাহিদা কমে গেলে ২০০৯ সালে তিনি আমিন হারবাল নামে কোম্পানি নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন এবং ২০১৬ সালে হেনোলাক্সের ব্যবসাও বন্ধ করে দেন। তাদের কাকরাইলে একটি ফ্ল্যাট, পুরানো পল্টনে স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার নামে একটি ১০ তলা ভবন, পিংক সিটিতে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি, মেরাজনগর কদমতলীতে হেনোলাক্স নামে চারতলা ভবন, মোহাম্মদবাগ কদমতলী এলাকায় হেনোলাক্স ফ্যাক্টরি রয়েছে।

বর্তমানে ওই ফ্যাক্টরিতে খান ফুড প্রোডাক্টস্, বন্যা ফুড প্রোডাক্টস ও জে কে এগ্রো ফুড নামে তিনটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় তাদের উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে।

গ্রেপ্তার ফাতেমা আমিন একটি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হতে ডিএইচএমএস সম্পন্ন করে তার স্বামীর আমিন হোমিও হলে প্রথমে এক বছর হোমিও চিকিৎসা করেন। তিনি তার স্বামীর প্রতিষ্ঠিত আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি তার স্বামীর আমিন হারবাল কোম্পানির দেখাশোনা করেন।

গাজী আনিস ছাড়াও অন্য কেউ আসামিদের কাছ থেকে টাকা পান কিনা জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন জবাব দেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা এমন কোনো তথ্য পাইনি।

পাওনা টাকা প্রকৃতপক্ষে কত, আর কেনইবা পরিশোধ করা হচ্ছিল না জানতে চাইলে জবাবে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গাজী আনিসের সঙ্গে লেনদেনে টাকার পরিমাণ নিয়ে আসামীদের আপত্তি আছে। লেনদেন হয়েছে তা তারা স্বীকার করেছেন। বিভিন্ন সময়ে চেকে ও নগদে ৭৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। তবে গাজী আনিসের লভ্যাংশসহ ন্যায্য পাওনা তিন কোটি টাকা। এটা নিয়েই মূলত তাদের মধ্যে একাধিকবার বাকবিতন্ডাও হয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App