×

সারাদেশ

সিংগাইরে পশুর দাম নিয়ে শংকিত খামারিরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২২, ০৮:৪০ পিএম

সিংগাইরে পশুর দাম নিয়ে শংকিত খামারিরা

ছবি: ভোরের কাগজ

গো-খাদ্যের উচ্চ মূলের কারণে গরু-ছাগল লালন-পালনে খরচ বেশি পড়ায় বিক্রিত দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন রাজধানীর উপকন্ঠ মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পারিবারিকভাবে পশু পালনকারীসহ খামারিরা। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে গবাদি পশু সমৃদ্ধ এ অঞ্চলে প্রায় ২৫ হাজার পশু প্রস্তুত করেছেন ছোট বড় সব খামারিরা।

শনিবার (২ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় তালিকাভুক্ত ৩শত ৭৪ জন বানিজ্যিক খামারি, প্রান্তিক কৃষক ও মওসুমী ব্যবসায়ীসহ প্রায় ১১‘শ খামারে এসব গরু-ছাগল পালন করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, সিংগাইর উপজেলায় বানিজ্যিক খামারি ১৬ হাজার ৭শত গরু-ছাগল মোটাতাজা করছেন। এর মধ্যে গরু ৯ হাজার ৫ শত, মহিষ ২৫টি, ছাগল ৭ হাজার ৮২টি ও ভেড়া ৯৩টি। এছাড়াও প্রান্তিক কৃষক ও মওসুমী বেপারী পর্যায়ের সব মিলে প্রায় ২৫ হাজারের অধিক পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এ উপজেলায় দেশি জাতের গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে ৮০ ভাগ। এ ছাড়া শংকর জাত যেমন- রেড চিটাগাং, ক্যাটেল শাহিয়াল, ফ্রিজিয়ান ও জার্সি মিলিয়ে রয়েছে ২০ ভাগ।

সবকিছুরপর ভারতীয় গরু কিংবা প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে ভাল দাম পাবেন এমনটাই আশা করলেও চলমান গো-খাদ্য মূলের উর্ধ্বগতির কারণে পশু মোটাতাজাকরণকারী ব্যক্তিরা চরম হতাশায় ভুগছেন।

গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সব ধরনের ভুসি, চিটাগুড়, ভুট্টাভাঙা, ফিড, খুদ, খৈলসহ সবুজ ঘাসের দাম বেড়েছে। গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলায় দুধ উৎপাদন ও পশু মোটাতাজাকরণে ব্যয় বেড়েছে খামারিদের। ঈদ যতই এগিয়ে আসছে গো-খাদ্যের দাম ততই বাড়ছে। এতে খামারিদের খরচও বাড়ছে। ফলে গবাদি পশু পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে খামারিদের। বর্তমানে এ উপজেলার শতকরা ৮০ ভাগ লোক এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছে। খামারি ছাড়াও কৃষকেরা বাড়তি আয়ের জন্য অধিকাংশ বাড়িতেই দু’একটি করে হলেও গরু ছাগল মোটাতাজা করে থাকেন।

কিছু দিন আগেও যে গমের ভুসি ১ হাজার ৮৫০ টাকা ছিল তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪’শত টাকায়। খৈল ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩’শত টাকা। এ ছাড়া দাম বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে চিটাগুড়, ভুট্টাভাঙা, ফিড, খুদ, খৈলসহ সবুজ ঘাস।

খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার অধিকাংশ খামারিরা পরিমাণ মতো খাদ্যের যোগান দিতে না পেরে গবাদিপশুর খাবার কমিয়ে দিয়েছেন। তারা আরও জানান, এতদিন ভালো চললেও গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছেন। এজন্য সরকারের কাছে সহযোগীতাও চান তারা। অন্যথায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে এ এলাকার অধিকাংশ গবাদিপশুর খামার।

সরেজমিনে বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে খোলা বাজারে প্রতি কেজি গমের ভুসি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, চালের খুদ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা ও খৈল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া চিটা, ভুট্টাভাঙা, ফিড, খুদ, খৈলসহ সবুজ ঘাস খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০-২০ টাকা।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সিংগাইর উপজেলায় স্থায়ীভাবে ৫টি হাটে গবাদি পশু বেচাকেনা হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দূর-দুরান্ত থেকেও ক্রেতারা এ উপজেলায় এসে স্থানীয় হাট-বাজার ছাড়াও খামার থেকে গরু ক্রয় করে নিয়ে যান। উপজেলার হাটগুলোর মধ্যে বায়রা, সিংগাইর, জয়মন্টপ, সিরাজপুর ও মানিক নগর হাট ।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফারুক আহাম্মদ বলেন, আমি যতটুকু জানি এ এলাকায় গবাদিপশুর গুনগত মান ভালো। কৃত্রিম উপায়ে না করে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজাকরণ করা হয়। বাজারে গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি হওয়ায় অধিকাংশ খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। এতে যারা গরু, ছাগল মোটাতাজা করেছেন তাদের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এজন্য গবাদিপশু পালনকারী ও খামারিদের দানাদার খাবারের উপর চাপ কমিয়ে ঘাস উৎপাদনের দিকে মনোযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App