×

মুক্তচিন্তা

ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় বানভাসি মানুষ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২২, ০১:০৭ এএম

সিলেট এবং সুনামগঞ্জে বন্যার পানি নেমে গেলেও খাদ্য এবং বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার্ত মানুষের আর্তনাদ এখনো থামেনি। বানভাসি মানুষদের আর্তনাদেই জানান দেয় বন্যার বিভীষিকার রূপ। যে আর্তনাদের পেছনে লুকিয়ে আছে হারানোর বেদনা, ঘরের ভেতরের শূন্যতা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে শুরু করতে হবে নতুন জীবন। সহায় সম্বলহীন মানুষগুলোর বেড়েছে অসহায়ত্ব। এ মুহূর্তে তারা কাজও পাচ্ছে না, পরিবার চালানোর মতো কোনো সংস্থানও হচ্ছে না। একবেলা খাবার জোটানোও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফেরার পর আরো বেহাল দশা। বন্যায় সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। ঘরের ভেতর জিনিসগুলো নষ্ট হয়ে আছে। চুলায় আগুন ধরানোর মতো পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা নেই। বড়রা শুকনো খাবার খেয়ে বেঁচে থাকলেও শিশু সন্তানদের নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। ক্ষুধার্ত শিশু খাবারের জন্য কান্নাকাটি করলেও তাকে দেয়ার মতো প্রয়োজনীয় কিছু নেই। এ মুহূর্তে পানিবাহিত রোগ, জ্বর, সর্দি, কাশি ছড়িয়ে পড়ছে। বন্যার্তদের সংকট মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসহ অনেকেই সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে, নানা পেশার লোক যথাসাধ্য পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। তাদের অনেকেই নৌকা নিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন। কেউ কেউ ত্রাণের তহবিলে টাকা তুলে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পরনের জামা-কাপড় সংগ্রহ করে বন্যার্তদের জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছেন। দেশের বাইরে থেকেও অনেকেই বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসছেন। যে যেভাবে পারেন মানবতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। বিশেষ করে আমাদের সমাজের তরুণরা বানভাসি মানুষদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। অভাবের তাড়নায় অনেকেই গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি সস্তায় বিক্রি করে দিচ্ছে। কোনোভাবে বেঁচে থাকাই এখন তাদের আশা। অথচ কিছুদিন আগেও তাদের চোখে স্বপ্ন ছিল সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার। গত দুই বছর কোভিডের থাবায় অর্থনীতির চাকা হঠাৎ থমকে যায়। কোভিডের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বন্যার মতো দুর্যোগের হানা। কোভিডের হানা কাটিয়ে উঠতে পারলেও বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সহজ নয়। সব মিলিয়ে তারা অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এখনো তারা ত্রাণের নৌকার অপেক্ষায় থাকে। কয়েকটি উপজেলা সদরের হাসপাতাল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে সেখানকার ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই চিকিৎসাসেবা বিঘিœত হচ্ছে। অনেক ফার্মেসিতে প্রয়োজনীয় সব ওষুধ মিলছে না। তবে বন্যা-পরবর্তী অসুখ মোকাবিলায় ১৪০টিরও বেশি মেডিকেল টিম সিলেটে কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারলেও এর বিরূপ প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। বন্যায় যা ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। যে কৃষক বোরো ধান কেটে গোলা ভরে রেখেছিল তা বন্যায় ভেসে গেছে নতুবা পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে খাদ্য জোগানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। চলতি মৌসুমে আউশ, আমন ও সবজি মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে পানিতে ডুবেছে ৮৮ হাজার ৬২২ হেক্টর জমি। ভেসে যাওয়া ফসলের ক্ষেতে নতুন করে শুরু করতে হবে উৎপাদন। যারা ঋণ নিয়ে কৃষি কাজ শুরু করেছিল তাদের আরো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। সবাইকে শূন্য থেকে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে হবে। কিন্তু সে কাজটুকু সহজ নয়। তবে সবার সহযোগিতা পেলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে। সরকার বর্তমান সমস্যা মোকাবিলায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি এনজিও, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ ও চিকিৎসার সরঞ্জামসহ পুনর্বাসনে একযোগে কাজ করতে হবে। তবেই বন্যার ক্ষতি থেকে রেহাই পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। বস্তুত নদীর পৃথক সত্তাকে মেনে নিয়ে আমাদের উন্নয়ন পরিকাঠামোসহ সব কাজ করতে হবে। অনজন কুমার রায় কলাম লেখক, সিলেট। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App