×

শিক্ষা

১০২ বছরে পা রাখলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২২, ১০:২৬ এএম

শিক্ষা ও গবেষণার বিস্তার, মুক্তচিন্তার উন্মেষ এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নতুন ও মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯২১ সালের ১ জুলাই প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) যাত্রা শুরু হয়েছিল।

প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, ৬০জন শিক্ষক, ৮৪৭জন শিক্ষার্থী এবং তিনটি আবাসিক হল ছিল। সময় ও চাহিদার কলেবর বাড়ায় বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৩টি অনুষদ, ৮৪টি বিভাগ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ১৯৮৬ জন শিক্ষক, প্রায় ৪৭হাজার শিক্ষার্থী এবং ১৯টি আবাসিক হল ও চারটি হোস্টেল নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া, রয়েছে দেড় শতাধিক বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ঘরানার অধিভুক্ত বা উপাদানকল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রকে জন্ম দিয়েছে। ‘৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ‘৬৬ এর ছয় দফা, ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ‘৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দিয়েছে অগ্রভাগে থেকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই দেশের কল্যাণে সব আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছিল সারাদেশে। অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক চেতনা বিকাশের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিটি ধূলিকণা অপরাজেয় সংগ্রামী ইতিহাসের এক একটি বড় সাক্ষী। শত বছর পার হয়ে ১০২ বছরে পা দেয়া এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশকে যা দিয়েছে তা জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো।

শত বছর পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির আবাসন, খাদ্য, পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক নানা সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। শতবর্ষী দেশসেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানসম্মত খাবার খেতে পারেন না, এক রুমে গাদাগাদি করে অনেকেই থাকেন, পরিবহণ সেবা পর্যাপ্ত নাই, রিডিং রুমের অপর্যাপ্ততা, সুস্থ পরিবেশে পড়াশোনার পরিবেশ না থাকাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়।

সরকারের পর্যাপ্ত সহযোগিতা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভালো সম্পর্ক, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার মনোভাব এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১০২তম জন্মবার্ষিকীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়(ঢাবি) বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করেছে এটা বলা যায় কারণ বঙ্গবন্ধু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি যে বাংলার স্বপ্ন দেখতেন পরবর্তী সময়ে সেটা বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়াও বর্তমান বাংলাদেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে যিনি নিয়ে যাচ্ছেন সে-ই শেখ হাসিনাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাঙ্কিংয়ে বিভিন্ন সূচকে হয়তো ঢাবি স্থান পাচ্ছে না তবে একটি দেশকে জন্ম দেয়া ইস্যুতে পৃথিবীতে একটাই বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেটা আমাদের ঢাবি।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিষ্ঠাকালীন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরবর্তী সময়ে যুগের চাহিদায় বেড়ে যায়। বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের শিক্ষার সাথে যুক্ত করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যার বিষয়ে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার্থীদের মেধার পরিচর্যা করা, তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করা, সংকটগুলো কাটিয়ে তোলা,তাদের আবাসন সমস্যার সমাধান করাই হলো প্রশাসনের কাজ। ন্যূনতম এসব সমস্যা মোকাবেলা করতে রা পারলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারবে না। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বাজেট বাড়ানো ও প্রশাসনকে শিক্ষার্থীবান্ধব হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। প্রশাসন কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালন করবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড মো আখতারুজ্জামান বলেন, বৈশ্বিক নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে আমরা এগিয়ে চলছি। শিক্ষার গুণগত মান ও পরিবেশ উন্নয়ন এবং গবেষণার পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ ‘মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে। মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার ক্ষেত্র জোরদার করার জন্য ‘ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমিয়া’ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কমর্সূচি:

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কমর্সূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দিবসটি উপলক্ষ্যে এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘গবেষণা ও উদ্ভাবন: ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমিয়া সহযোগিতা’। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের খেলার মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে শোভাযাত্রা, জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোর পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, কেক কাটা ও সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে থিম সং পরিবেশন।

এছাড়া, সকাল ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘গবেষণা ও উদ্ভাবন : ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমিয়া সহযোগিতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করবেন। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলা ভবন ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App