×

মুক্তচিন্তা

শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২২, ১২:৪২ এএম

পিতা সন্তানকে জন্ম দেন আর শিক্ষক তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। শিক্ষক হলেন সন্তানের দ্বিতীয় বাবা-মা। এজন্যই শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয় তবে শিক্ষক হলেন সেই মেরুদণ্ড গঠনের প্রাণশক্তি। শিক্ষককে সমাজের অভিভাবক বলা হয়। সর্বজনবিদিত বিষয় যে, শিক্ষকের মর্যাদা অন্য যে কোনো পেশার চেয়ে বেশি। যা আমাদের আবহমান সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু আমরা যদি বর্তমান সমাজের দিকে তাকাই তবে দেখা যায়- সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। আগে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের ভয় করত; কিন্তু এখন শিক্ষক ভয় করেন শিক্ষার্থীদের। এর পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে বটে। সম্প্রতি শিক্ষকদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘৃণিত, ন্যক্কারজনক ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- ছাত্রনেতার লাথি, কিল-ঘুষির আঘাতে আহত হন শরীয়তপুরের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের প্রভাষক, ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে ১৯ দিন জেল খাটেন বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল, নড়াইল মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে মিথ্যা অভিযোগে প্রশাসনের সামনে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। ভাবতেও অবাক লাগে কোন পরিস্থিতিতে আছে শিক্ষাগুরুর মর্যাদা। সর্বশেষ শিক্ষক লাঞ্ছনার যে ঘটনাটি ঘটে তা কোনো লাঞ্ছনা নয়, এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড! চবির রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র, সাভারের হাজী ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক উৎপল কুমার সরকারের (দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী কর্তৃক) নৃশংস হত্যাকাণ্ড কি জাতির বিবেককে নাড়ানোর জন্য যথেষ্ট নয়! জানা যায়, অভিযুক্ত কুলাঙ্গার ছাত্রটি কলেজ মালিকের আত্মীয়। এতে বুঝতে পারা যায় এ ঘটনার সঙ্গে অন্য কোনো শক্তিও জড়িত থাকতে পারে। এখন দেখার বিষয় এর শাস্তি কী হয়, নাকি অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে পার পেয়ে যায়! ভাবতেও অবাক লাগে যে, কী ভয়ানক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে সমাজ! শিক্ষার্থীর হাতে শিক্ষকের মৃত্যুর চেয়ে আর কি কোনো মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা আছে? সমাজের নীতি-নৈতিকতার ভিত্তিতে পচন ধরেছে। যদি সমাজের অবক্ষয় রোধে এখনই পদক্ষেপ নেয়া না হয় অদূর ভবিষ্যতে কী হবে তা বলা দুষ্করই বটে। একসময় শিক্ষকদের যেমনি অগাধ সম্মান ছিল তেমনি শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের কঠোর শাসনে রাখত। আগে শিক্ষকদের শাসন করার ক্ষমতা ছিল, অভিভাবকও শিক্ষকদের শাসন করার স্বাধীনতা দিতেন কিন্তু এখন অভিভাবকরা শিক্ষকদের নামে অভিযোগ করেন। এখনকার সমাজের দিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যায় নৈতিকতা স্খলন। ফেসবুক, টিকটক, লাইকির যুগে বেড়ে চলছে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনাবলি। একজন শিক্ষক যেখানে শাসন করে কিংবা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে পার পান না, তাকে ছাত্রের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়। সেখানে কেমন হবে সমাজ ব্যবস্থা! কেমন হবে নৈতিকতার ভিত্তি! বর্তমান সমাজে নীতি-নৈতিকতা, মানবিকতা, মূল্যবোধের মতো গুণের খুব অভাব। সমাজে হিংসা, বিদ্বেষ, অমানবিকতা, নিষ্ঠুরতা, জিঘাংসার মতো খারাপ দোষগুলো সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। শিক্ষক লাঞ্ছিত, নিগৃহীতের ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্নভাবে বিভিন্নজন শিক্ষক লাঞ্ছনা করছে। যেমন- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমিটি কর্তৃক, অভিভাবক কর্তৃক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কর্তৃক, ছাত্রনেতাসহ বদ শিক্ষার্থী কর্তৃক। অনেক শিক্ষকের আলোচনায় উঠে এসেছে যে, এখন শিক্ষার্থীদের আগের মতো বেশি কিছু বলেন না বরং এক প্রকার ভয় পান। এতে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এতে বিঘœ হচ্ছে পঠন-পাঠনের সুষ্ঠু পরিবেশ, বিঘœ হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক। শিক্ষকের নিরাপত্তা বিষয়ে জাতিসংঘের ইউনেস্কো ও আইএলওতে পর্যন্ত নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে শিক্ষকের নিরাপত্তাজনিত কোনো নীতিমালা নেই। এখনই উপযুক্ত সময় এই অধঃপতনের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নসহ রুখে দাঁড়ানোর। শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা কিংবা লাঞ্ছনার মতো নিকৃষ্ট অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তিমূলক আইন প্রণয়ন করতে হবে। যাতে আর কোনো উৎপল সরকারকে পৃথিবী ত্যাগ করতে না হয়, হৃদয় মণ্ডল স্যারকে জেলে যেতে না হয় কিংবা স্বপন কুমার স্যারকে জুতার মালা পরতে না হয়। শিক্ষক নিরাপদে থাকলেই শিক্ষার সুষ্ঠু আবহ ফিরে আসবে। পাশাপাশি সচেতন ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে এ কলুষিত সমাজ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য। পারিবারিক সুশিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি, কঠোর আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন মহলের সচেতনতার মাধ্যমে সমাজকে কলুষিতমুক্ত করার মাধ্যমে সুষ্ঠু, সুন্দর, মানবিক সমাজ গঠন সম্ভব।

গিরেন্দ্র চক্রবর্তী : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App